বরিশাল : বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার সলিয়াবাকপুর ইউনিয়নের সাখারী গ্রামের কুয়েত প্রবাসীর স্ত্রী মিসরাত জাহান মিশুর সঙ্গে ঘাতক জাকিরের অনৈতিক সম্পর্ক দেখে ফেলায় এ ট্রিপল মার্ডার সংঘটিত হয়েছে। গ্রেফতার জাকির ও তার সহযোগী জুয়েলের ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে বিষয়টি উঠে এসেছে। তারা দু’জন হত্যার দায় স্বীকার করে রবিবার (৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত বরিশাল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. এনায়েত উল্লাহর খাস কামরায় জবানবন্দি দেয়।
তবে এই হত্যাকাণ্ডে আরো কেউ জড়িত আছে কিনা তা তদন্তের স্বার্থে এখনই এ বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি বানারীপাড়া থানার ওসি শিশির কুমার পাল। তবে প্রবাসী আব্দুর রবের স্ত্রী মিশু পুলিশের নজরদারিতে রয়েছেন এবং তাকেও যেকোনও সময় গ্রেফতার করা হতে পারে বলে পুলিশের নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এদিকে ঘটনার দিন শনিবার (৭ ডিসেম্বর) রাতেই প্রবাসী হাফেজ আব্দুর রবের ভাই সুলতান মাহমুদের দায়ের করা হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে রবিবার বিকালে ওই দুই জনকে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ। পরে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার পর তাদের বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।
নিহতরা হলেন- কুয়েত প্রবাসীর মা মরিয়ম বেগম (৭৫), ভগ্নিপতি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শফিকুল আলম (৬০) এবং খালোতো ভাই ভ্যানচালক মো. ইউসুফ (৩২)।
পুলিশ জানায়, প্রায় তিন বছর আগে জাকির ওই বাড়ির নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করার সময় প্রবাসী হাফেজ আব্দুর রবের স্ত্রী মিশুর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। এরপর থেকে ওই বাড়িতে তার নিয়মিত যাতায়াত ছিল। তাদের অনৈতিক সম্পর্কের বিষয়টি জেনে যায় আব্দুর রবের মা মরিয়ম বেগম এবং খালাতো ভাই ইউসুফ। এ কারণে তাদের হত্যার পরিকল্পনা করে জাকির ও তার সহযোগী মিশু।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) রাতে বাসার অন্যরা ঘুমিয়ে পড়লে ঘরের দরজা খুলে রাখে মিশু। ওইদিন রাত ১১টার পর জাকির ও জুয়েল ওই বাসায় ঢুকে প্রথমে ইউসুফের পা বেঁধে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে। পরে তারা পাশের কক্ষে থাকা মরিয়ম বেগমকেও একইভাবে শ্বাসরোধে হত্যা করে তারা। পরে তারা ইউসুফের লাশ বাড়ির সামনে পুকুরের পানিতে ভাসিয়ে দেয় এবং মরিয়ম বেগমের লাশ কক্ষ থেকে বেলকুনিতে নিয়ে রাখে।
এরপর হত্যার ঘটনা ফাঁস না করতে জাকির ও জুয়েল ভয় দেখায় মিশুকে। এ সময় পাশের কক্ষে ঘুমিয়েছিল প্রবাসীর ভগ্নিপতি শফিকুল আলম। তিনি হত্যার বিষয়টি টের পেতে পারে সন্দেহে তাকেও শ্বাসরোধে হত্যা করে ঘাতকরা।
শনিবার ফজরের নামাজের সময় মরিয়মের কক্ষে ঘুমিয়ে থাকা প্রবাসী রবের ভাতিজি আছিয়া আক্তার ঘুম থেকে জেগে দাদিকে খুঁজতে গিয়ে বেলকুনিতে লাশ পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার দেন। প্রতিবেশীরা এসে ওই বাড়িতে আরও দুটি লাশ দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনটি লাশ উদ্ধার করে বরিশাল মর্গে পাঠায়। ময়নাতদন্ত শেষে রবিবার জানাজা নামাজ শেষে তাদের মরদেহ বাড়িতে দাফন করা হয়।
প্রসঙ্গত, বরিশালের বানারীপাড়ার সলিয়াবাকপুর এলাকার কুয়েত প্রবাসী আব্দুর রব হাওলাদারের বাড়িতে শুক্রবার মধ্যরাতের পর যেকোনও সময় তিন জনকে হত্যা করা হয়। নিহতরা হলেন, প্রবাসীর মা মরিয়ম বেগম, তার বোনের ছেলে মো. ইউসুফ এবং বোন জামাই শফিকুল আলম। আব্দুর রব ১১ বছর ধরে কুয়েতে একটি মসজিদে ইমামতি করেন। তার স্ত্রী ও সন্তান বাড়িতেই থাকেন। নিহত তিন জনের মধ্যে ইউসুফ এবং শফিকুল আলম দুই দিন আগে বেড়াতে এসেছিলেন।
সোনালীনিউজ/এএস