মৃৎ শিল্পীদের চরম দুর্দিন, পাশে নেই কেউ

  • ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুলাই ৫, ২০২০, ০৪:০৬ পিএম

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : “এ গ্রামের মৃৎ শিল্পের কারিগর রঞ্জিত কুমার পাল বলেন, লাভের হিসাব করি না। বাপ-দাদার কাজ ছাড়তেও পারি না। করোনায় আমাদের সকল কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা এখন অসহায় জীবন যাপন করছি। তিনি আরো বলেন, পূর্ব পুরুষের পেশা বাঁচিয়ে রাখতে গিয়ে করোনায় দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে পরিবার পরিজন নিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটছে আমাদের।”

করোনা ভাইরাসের প্রভাবে ভালো নেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা সদরের মৃৎ শিল্পীরা। উপজেলা সদর ইউনিয়নের পালপাড়া (কুমার বাড়ি) এলাকায় রয়েছে কয়েকটি মৃৎ শিল্পীদের বাসস্থান। এ মৃৎ শিল্প’র ঐতিহ্য আঁকড়ে থাকা পাল বংশের লোকদের টিকে থাকা যেন কঠিন হয়ে পড়েছে। এক সময় এ গ্রামে মৃৎ শিল্প’র জৌলুস ছিল। এ শিল্পে জড়িয়ে ছিল এখানের অর্ধশতাধিক পরিবার। বর্তমানে হাতে গোনা কয়েকটি পরিবার কষ্টে তাদের পূর্ব পুরুষদের এ পেশা ধরে রেখেছেন। কিন্তু বর্তমানে করোনা ভাইরাসের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে এ মাটির কাজ। তাই এই কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেকেই হতাশা হয়ে পড়েছে।

এক সময় উপজেলার এ গ্রামসহ আশ-পাশের বিভিন্ন এলাকার পরিবারও প্রত্যক্ষভাবে এ শিল্পের সাথে জড়িত ছিল। পালরা হাড়ি, পাতিল, কলসি, ব্যাংক, পিঠা তৈরির ছাঁচ, খোলা, পুতুলসহ ছোট-ছোট খেলনা ইত্যাদি সব জিনিসপত্র তৈরি করত। এখানকার তৈরি মৃৎ শিল্পের অনেক সুনাম ও সুখ্যাতি থাকলেও এখন শুধুমাত্র দধির পাত্র ও পিঠার খোলা তৈরি করে কোন রকমের জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। এ অঞ্চলে খোলা পাত্রের কদর বেশি রয়েছে। মৃৎ শিল্পের নিপুণ কারিগররা তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে এখন অনেকটা অসহায় ও মানবেতর জীবন যাপন করছে। অনেক পুরুষ এ পেশা ছেড়ে ভিন্ন পেশায় চলে গেছেন। মাটির তৈরি জিনিসপত্র আগের মত মূল্যে বিক্রি করতে পারছে না। মাটির এ সকল পাত্রের চাহিদাও আগের মত নেই।

এ গ্রামের মৃৎ শিল্পের কারিগর রঞ্জিত কুমার পাল বলেন, লাভের হিসাব করি না। বাপ-দাদার কাজ ছাড়তেও পারি না। করোনায় আমাদের সকল কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা এখন অসহায় জীবন যাপন করছি। তিনি আরও বলেন, পূর্ব পুরুষের পেশা বাঁচিয়ে রাখতে গিয়ে করোনায় দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে পরিবার পরিজন নিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটছে আমাদের। আমার পরিবারে সাত-আটজন সদস্য তাদেরকে নিয়ে বড়ই কষ্টে আছি। এ করোনা পরিস্থিতিতে সরকারি কোনো সহায়তা পেয়েছেন কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে, রঞ্জিত কুমার পাল বলেন, এ পযর্ন্ত আমরা কোনো সহায়তা পায়নি।

এ ব্যাপারে সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ এস এম মোসা বলেন, উপজেলার পানিশ্বর ইউনিয়নের পাল পাড়ায় খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। সদর ইউনিয়নের পালপাড়ায় খাদ্য সহায়তা দেয়ার কথা, যদি তারা খাদ্য সহায়তা না পেয়ে থাকেন, তাহলে খোঁজ নিয়ে তাদেরকে খাদ্য সামগ্রী দেওয়ার আশ্বাস দেন।

সোনালীনিউজ/এএস