নাটোরে কুল চাষে লাভবান কৃষক

  • সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৫, ২০১৬, ০৭:৫৪ পিএম

নাটোর প্রতিনিধি
এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় নাটোরে হাইব্রিড জাতের বাউকুল ও বারমিজ কুলের বাম্পার ফলন হয়েছে। এদিকে বাজারে দাম ভালো পাওয়ায় লাভবান হচ্ছেন কৃষক। সেই সঙ্গে চলতি বছর বেড়েছে কুল আবাদের পরিমাণও। কৃষি বিভাগের মতে, এ বছর নাটোর থেকে ১১ কোটি টাকার কুল যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূ্ত্রে জানা গেছে, জেলার উঁচু এবং উষ্ণতম অঞ্চলগুলোতে কুল চাষ ভালো হয়।এদিক থেকে নাটোরের লালপুর, বড়াইগ্রাম, সদর, গুরুদাসপুর এবং সিংড়া উপজেলায় কুল চাষ হয়ে থাকে। এর মধ্যে সব চেয়ে বেশি হয় লালপুর, বড়াইগ্রাম, সিংড়া এবং গুরুদাসপুর উপজেলায়।

সূত্র আরও জানায়, গত বছর জেলায় ৩১৩ হেক্টর জমিতে কুল চাষ হয়। উৎপাদন হয় ৩ হাজার ৩৬৬ মেট্রিক টন। গত বছর দাম এবং আবহাওয়া ভালো থাকায় চলতি বছর কুল আবাদের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৬৭ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে গুরুদাসপুর উপজেলায় একশ হেক্টর, লালপুরে একশ হেক্টর, বড়াইগ্রামে ৭০ হেক্টর, সিংড়ায় ৫০ হেক্টর, সদর উপজেলায় ৩০ হেক্টর, নলডাঙ্গায় ১৫ এবং বাগাতিপাড়ায় মাত্র ২ হেক্টর।

লালপুরের কুল চাষি সেহেল রানা জানায়, সার, কীটনাশক এবং সেচসহ এক বিঘা জমিতে কুল চাষ করতে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয়। ঠিকমত কুল উৎপাদন হলে এবং দাম ভালো পাওয়া গেলে ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা পর্যন্ত এবার তার কুল বিক্রি হবে।

আরেক কুল চাষি হাবিব হোসেন বলেন, প্রথম বছর প্রতিটি নতুন কুল গাছে দুই থেকে আড়াই মণ এবং পুরাতন গাছে  ৪ থেকে ৫ মণ পর্যন্ত কুল উৎপাদিত হয়। তবে দেশি কুলের পাশাপাশি হাইব্রিড় জাতের বাউকুল ৮-১০টিতে এক কেজি ও বারমিজ জাতের কুল ১০-১২টিতে কেজি হয়। তবে তৃতীয় বছর পর্যন্ত কুল উৎপাদন কমতে থাকে। বর্তমানে প্রতি মণ কুল বিক্রি হচ্ছে এক হাজার থেকে ১১শ টাকা মণ পর্যন্ত।

বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া এলাকার কুল চাষি জালাল উদ্দিন বলেন, এ বছর সাড়ে তিন বিঘা জমিতে কুল চাষ করেছেন তিনি। এতে খরচ হয়েছে প্রায় এক লাখ ৫০ হাজার টাক। তবে বর্তমান বাজার দর ৩০ থেকে ৪০টাকা কেজি দরে কুল বিক্রি করতে পারছে। এতে প্রায় ৮ লাখ থেকে ৯ লাখ টাকার কুল বিক্রি করা সম্ভব।

এদিকে জেলার বনপাড়া বাইপাস, ওয়ালিয়া বাজার, সদর উপজেলার চানপুর বাজারসহ বেশ কয়েকটি স্থানে কুলের পাইকারি বাজার গড়ে উঠেছে। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত অবধি পর্যন্ত কুল বেচা-কেনা হচ্ছে। তবে কুল বেচা-কেনার সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার গড়ে উঠেছে বনপাড়া বাজারে। ৮ থেকে ১০টি কুলের আড়তে  প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ লাখ টাকার কুল বেচাকেনা হচ্ছে। আর স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কুল যাচ্ছে রাজধানী ঢাকা, চট্রগ্রাম, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

পাইকারি কুল ব্যবসায়ী আশরাফ হোসেন বলেন, জেলার যে কয়টি উপজেলায় কুল চাষ হয় তার মধ্যে বড়াইগ্রাম এবং লালপুর উপজেলার কুলের মান এবং সাইজ সবচেয়ে ভালো। বিশেষ করে বড়াইগ্রাম উপজেলার বেশির ভাগ কুল চাষিরা এখানে কুল বিক্রি করতে পারছে।

নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরে উপ-পরিচালক ড. আলহাজ উদ্দিন আহাম্মদ বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার কুলের ভালো দাম পাচ্ছে চাষিরা। তাছাড়া খরচ কম হওয়ায় অন্যান্য বাগানের তুলনায় কুল বাগানের সংখ্যাও বাড়ছে। ভালো মানের কুল উৎপাদনে চাষিদের প্রশিক্ষণ এবং সঠিক পরামর্শ দেয়া হয়েছে। যার কারণে কুল চাষে আগ্রহ বেড়েছে চাষিদের।

 

সোনালীনিউজ/ঢাকা/মে