যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের ৫ কর্মকর্তা গ্রেফতার

  • যশোর প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: আগস্ট ১৫, ২০২০, ১০:৫১ এএম

যশোর : যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে তিন কিশোরকে পিটিয়ে হত্যা মামলায় ওই কেন্দ্রের বরখাস্ত হওয়া সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল মাসুদসহ পাঁচ কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

গ্রেফতার অন্যরা হচ্ছেন- সহকারী তত্ত্বাবধায়ক মাসুম বিল্লাহ, সাইকো-সোশ্যাল কাউন্সিলর (প্রবেশন অফিসার) মুশফিকুর রহমান, শরীর চর্চা শিক্ষক ওমর ফারুক ও কারিগরি শিক্ষক শাহানুর আলম।

পুলিশ সুপার মো. আশরাফ হোসেন জানান, কয়েকজনকে হেফাজতে নিয়ে নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদের পর ওই পাঁচজনকে শুক্রবার রাতে গ্রেফতার করা হয়।

শনিবার (১৫ আগস্ট) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন পুলিশ সুপার।

এর আগে শুক্রবার রাতে নিহত পারভেজ হাসানের বাবা রোকা মিয়া যশোর কোতয়াালি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় তিনি অজ্ঞাত কর্মকর্তাদের অভিযুক্ত করেন।

এ মামলায় ওই পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানান তদন্তকারী কর্মকর্তা যশোরের চাঁচড়া ফাঁড়ি ইনচার্জ পরিদর্শক রোকিবুজ্জামান।

যশোর গোয়েন্দা পুলিশের ওসি সোমেন দাশ বলেন, তারা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী হওয়ায় খুবই সতর্কতার সঙ্গে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, খুবই নির্মমভাবে পেটানো হয় যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের ওই কিশোরদের। বৃহস্পতিবার বেলা ১২টা থেকে তাদেরকে পেটানো শুরু হয়। একেকজনকে পিটিয়ে আহত করে সহকারী পরিচালকের কক্ষে ফেলে রাখা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদ সূত্র জানায়, গত ৩ জুলাই বন্দি কয়েকজন কিশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের প্রধান নিরাপত্তা কর্মীর ওপর হামলা করে তার একটি হাত ভেঙে দেয়। এর আগে ওই নিরাপত্তা কর্মী বন্দি কিশোরদের একজনকে তার মাথার চুল কেটে দিতে বলেন। ওই কিশোর রাজি না হওয়ায় গালিগালাজ করেন তিনি। তখন হামলা করে তারা।

নিরাপত্তা কর্মীর ওপর হামলার এ ঘটনায় দায়ী ১৮ জনকে সিসি ক্যামেরার ভিডিওচিত্র থেকে শনাক্ত করে কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে ওই ১৮ জনকে ডেকে নেওয়া হয় সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল মাসুদের কক্ষে।

সেখান থেকে একেকজন করে ডেকে অপর একটি কক্ষে নিয়ে নির্দয়ভাবে পেটানো হয়। কক্ষের জানালার গ্রিল দিয়ে হাত-পা বের করিয়ে বাইরে থেকে টেনে ধরে লোহার রড ও লাঠি দিয়ে পেটানো হয়। এ ক্ষেত্রে অভিযুক্তরা সহায়তা নেন কিশোর বন্দিদের কয়েক জনের।

তারা চেয়েছিল পিটিয়ে আহতকারী কেন্দ্র অভ্যন্তরে চিকিৎসা দেবেন। কিন্তু মৃত্যু শুরু হলে আর ঘটনা চেপে রাখা সম্ভব হয়নি। এ সময় তারা কিশোরদের দুই পক্ষের সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে বলে প্রচার করে। পুলিশকেও তারা প্রথমে এ কথা জানায়।

কিন্তু জেলা প্রশাসন ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে বৃহস্পতিবার শেষ রাত পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করে বুঝতে পারেন মিথ্যা বলছেন শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের কর্মকর্তারা। ওই রাতেই ১০ জনকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

শুক্রবার রাতে জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে হতাহতের ঘটনায় সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল মাসুদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

এ কমিটিতে আছেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, একজন সহকারী পুলিশ সুপার ও জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা।

এছাড়া সমাজসেবা অধিদপ্তর দুই সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তারা হলেন- অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রতিষ্ঠান) যুগ্ম-সচিব সৈয়দ মো. নূরুল বাসির ও উপ-পরিচালক এএম মাহমুদুল্লাহ।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা ৩৮ মিনিট থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত  যশোর জেনারেল হাসপাতালে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে তিনটি মরদেহ আসে। এরপর রাত সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত আহত ১৪ কিশোরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শুক্রবার সকালে হাসপাতালে নেওয়া হয় আহত আরও একজনকে।

সোনালীনিউজ/এএস