২৯ ও ৩০ মে বরগুনা জেলখানা গণহত্যা দিবস

  • বরগুনা প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মে ২৯, ২০১৬, ০৯:০০ পিএম

বরগুনাবাসীর জন্য এক রক্তাক্ত স্মৃতি বিজড়িত দুটো দিন ঊনিশ’একাত্তরের ২৯ ও ৩০ মে। একাত্তরে এ দুটি দিনে বরগুনা জেলখানায় আটককৃত নিরীহ বাঙ্গালীদের গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

প্রথম দিন ২৯ মে তারা ৫৫ জনকে হত্যা করেছিল। অনেকে সেদিন গুলিতে আহত হয়েছিল। কিন্তু তাদেরও শেষ রক্ষা হয়নি। পরের দিন আবারও ১৭ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। জেলখানায় হত্যা করে তাদের সবাইকে একটি গর্তে মাটি চাপা দেয়া হয়। দু’দিনে ৫বার গুলি করার পরও অলৌকিকভাবে বেচে যান সকল ঘটনার প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী ফারুকুল ইসলাম। তবে তার অপর দুই ভাই নাসির ও শানুকে মেরে ফেলা হয়। কেষ্ট ডাক্তার নামে পরিচিত কৃষ্ণ দাস গুলিবিদ্ধ হয়েও প্রাণে বেঁচে ছিল। হামাগুড়ি দিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের রাস্তা পাড় হবার সময়ে তাকে ধরে কোদালের বাট দিয়ে মাথা গুড়িয়ে হত্যা করা হয়। এভাবে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল পাথরঘাটার লক্ষন দাস ও তার ছেলে অরূন দাসকে। অনেককে পটুয়াখালী নিয়েও হত্যা করা হয়েছে। যাদের অনেকের নাম আজও জানা যায়নি।

বরগুনা শহরের পৌর এলাকার শহীদ স্মৃতি সড়ক দিয়ে দক্ষিণ দিকে হেটে গেলে চোখে পড়বে লাল রং করা পাচিল ঘেরা জেলখানা। জেলখানার দক্ষিণ পাশে শহীদদের গণকবর। যেখানে বরগুনার মুক্তিকামী মানুষদের মাটি চাপা দেয়া হয়েছে। ১৯৯২ সনে সেখানে একটা স্মৃতি সৌধ নির্মাণ করা হয়েছে। স্মৃতি সৌধের শ্বেত পাথরে লেখা রয়েছে শহীদদের নাম। ১৯৭১ সনে যারা মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করেছিল এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে নৌকায় ভোট দিয়েছিল, তাদেরকে এ দুদিনে হত্যা করা হয় বলে এলাকার মুক্তিযোদ্ধারা জানান ।

এলাকাবাসী জানায়, ২৬ মে পাকবাহিনীর ক্যাপ্টেন সাফায়াত চারজন সহযোগী নিয়ে স্পীড বোটে বরগুনা চলে আসে। তাদের আসার খবর সেদিন কেউই পায়নি। পরের দিন সকালে ২/৩ জন করে লোক ধরা শুরু করে। দুপুরে সামান্য বৃষ্টি হলে লোকজন পালাতে থাকে। তখন পাকবাহিনীর সদস্যরা দোনকার ইমাম হোসেনের মত সহযোগিদের নিয়ে নাথপট্টি, পশ্চিম বরগুনা ও শহর এলাকা ঘেরাও করে শতাধিক নারী পুরুষকে বেধে জেলখানায় নিয়ে যায়।

পাকবাহিনীর সদস্য ও তাদের সহযোগিরা সিএন্ডবির ডাকবাংলোকে ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করে। রাতে অনেক মা-বোনকে জেলখানা থেকে সেখানে নিয়ে গণধর্ষন চালানো হয়। সকাল বেলায় আবার তাদের জেলখানায় পাঠানো হয়। মা-বোনদের রক্তে সেদিন জেলখানার সড়কের মাটি লাল হয়ে গিয়েছিল। এসব ঘটনার নিরব সাক্ষী ফারুকুল ইসলাম। ২৮ মে পটুয়াখালী জেলা সামরিক আইন প্রশাসক মেজর নাদের পারভেজ বরগুনায় আসে এবং ২৯ মে বরগুনা জেলখানায় প্রহসনমূলক বিচারের ব্যবস্থা করে গণহত্যা শুরু করে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন