বেগমগঞ্জে খাদ্যে বিষক্রিয়ায় মাদ্রাসা ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা, ৬ শিক্ষক কারাগারে 

  • নোয়াখালী প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: আগস্ট ৪, ২০২১, ১০:৪৩ এএম
ফাইল ছবি

নোয়াখালী: নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে খাদ্যে বিষক্রিয়ায় মাদ্রাসায় খাবার খেয়ে নুর মিশেল হাদী (৯) মাদ্রাসা ছাত্রের মৃত্যু ও ১৭জন মাদ্রাসা ছাত্র অসুস্থ হওয়ার ঘটনায় বেগমগঞ্জ থানায় মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) দুপুরে নিহত শিশুর জেঠা মোঃ আহসান উল্যাহ বাদী হয়ে ১৩জনকে আসামি করে হত্যা মামলাটি দায়ের করেন। একই দিন বিকেলে ওই মামলায় আটককৃত ৬ শিক্ষককে গ্রেফতার দেখিয়ে নোয়াখালীর বিচারিক আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।

গ্রেফতারকৃতরা হলো, মদিনাতুল উলুম ইসলামিয়া মাদ্রারাসা কমপ্লেক্স ও এতিম খানার শিক্ষক হাফেজ মোঃ দাউদ ইব্রাহীম (২৪) মাওলানা মোঃ মাইনুদ্দিন (২৭) মাওলানা জহিরুল ইসলাম (৩০) হাফেজ মোঃ মিজানুর রহমান (১৯) হাফেজ মোঃ বেলাল হোসেন (২৩) ও হাফেজ মোঃহাসানুদ্দিন (২৮)।

মামলা সূত্রে জানা যায়, নিহত মিশেল ওই মাদ্রাসায় ভর্তি হয়। লকডাউনে মাদ্রাসা ১৪দিন বন্ধ থাকার পর গত শনিবার তাকে তার মা মাদ্রাসায় দিয়ে আসে। মহামারিকালীন সময়ে মাদ্রাসা খুলে দিয়ে ছাত্রদের খাদ্য প্রস্তুত, সংরক্ষণ,পরিবেশনে অমনোযোগিতার কারণে খাদ্য বিষক্রিয়ায় এবং অসুস্থ ছাত্রদের যথাসময়ে সুচিকিৎসার অবহেলার দরুন মাদ্রাসা ছাত্র মিশেলের মৃত্যু হয় বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।

এর আগে, সোমবার (২ আগস্ট) রাত পৌনে ৯টার দিকে উপজেলার ৭নং একলাশপুর ইউনিয়নের ২নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব একলাশপুর গ্রামের মদিনাতুল উলুম ইসলামিয়া মাদ্রারাসা কমপ্লেক্স ও এতিম খানার রাতের খাবারের খাদ্যে বিষক্রিয়ায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহত নুর  মিশেল হাদীর বাড়ি বেগমগঞ্জে উপজেলার ৭নং একলাশপুর ইউনিয়নের পুর্ব একলাশপুর গ্রামের আনোয়ার মিয়ার ছেলে। সে মদিনাতুল উলুম ইসলামিয়া মাদ্রারাসা ও এতিম খানার নূরানী বিভাগের প্রথম ছাত্র ছিল।

বেগমগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ  (ওসি) মুহাম্মদ কামরুজ্জামান সিকদার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, আটককৃত আসামিদের দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে বিচারিক আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
 
স্থানীয়রা জানায়, সোমবার দুপুরের দিকে মাদ্রাসায় মাংস রান্না করে। এরপর একই দিন এশার নামাজের পরে মাদ্রাসার আবাসিক বিভাগের ২০জন ছাত্র ওই মাংস দিয়ে রাতের খাবার খেয়ে ঘুমাতে যায়। এক পর্যায়ে রাত সাড়ে ৯টার দিকে ১৮জন ছাত্র অসুস্থ হয়ে সবাই পেট ব্যাথায় বোমি করতে থাকে। এ সময় মাদারাসার একজন আবাসিক শিক্ষক বিষয়টি অবহিত করে এবং একজন স্থানীয় পল্লী চিকিৎসককে মাদরাসায় ডেকে আনে। পরবর্তীতে পল্লী চিকিৎসকের পরামর্শে অসুস্থ ১৮জন ছাত্রকে কয়েক ধাপে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

মাদ্রাসার মোট শিক্ষার্থী ১২০ জন।  প্রথম ধাপে ১৮ জন রাতের খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে বাকী ওই খাবার আর কেউ খায়নি। এ মাদ্রাসায় মোট ৭০জন শিক্ষার্থী দৈনিক খাবার খায়।  অসুস্থদের বরাত দিয়ে স্থানীয়রা জানায়, মাংসে একটু গন্ধ ছিল। অসুস্থদের মধ্যে নিশান মাদ্রাসাতেই মারা যায়।

নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা.সৈয়দ মহিউদ্দিন আব্দুল আজিম জানান, প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে খাদ্যে বিষক্রিয়া (ফুড ফয়জনিং) এর কারণে রাতের খাবার খেয়ে মাদ্রাসার ছাত্ররা অসুস্থ হয়ে পড়ে। অসুস্থদের মধ্যে নিশান নামে এক মাদ্রারাসা ছাত্রকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে। এছাড়া আরও ১৭জন মাদ্রাসা ছাত্র গুরুত্বর অসুস্থ অবস্থায় নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।

সোনালীনিউজ/জেএ/এসআই