নির্যাতনের পরও ছেলের হাতে হাতকড়া দেখে কেঁদে ফেললেন মা

  • মাগুরা প্রতিনিধি: | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৬, ২০২১, ০৯:১৫ পিএম
সংগৃহীত ছবি

ঢাকা: পাঁচ ছেলের কেউই বৃদ্ধা মা মোমেনা বেগমকে (৭৫) খেতে দেন না। উল্টো স্বামীর রেখে যাওয়া জমি লিখে নিতে মাঝেমধ্যেই তাকে মারপিট করেন। যার বিচার দাবি করে মা গিয়েছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) দফতরে। খবর পেয়ে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে মেজো ছেলে মাকে আরেক দফা মারপিট করে হাসপাতালে পাঠান। চার দিন চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে মা মোমেনা আবারও বিচারের আশায় যান ইউএনওর দফতরে। 

ইউএনও লিউলা-উল জান্নাহ তার দফতরে উভয়পক্ষের সব কিছু শুনে উপস্থিত মেজো ছেলে আয়েব আলীকে পুলিশে দেওয়ার নির্দেশ দেন। পুলিশ সদস্যরা তার হাতে হাতকড়া পরান। এ সময় অভিযোগকারী মা কাঁদতে শুরু করেন। ছেলেকে ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করেন। 

তিনি বলেন, ‘আমার মনিরা ভুল করেছে, আপনারা ক্ষমা করে দেন। আমার কোনো অভিযোগ নেই, আমি ছেলেদের হাজতবাস সহ্য করতে পারবো না।’ 

এ দৃশ্য দেখে ঘটনাস্থলে উপস্থিত সহকারী কমিশনার (ভূমি) শ্যামানন্দ কুন্ডুসহ উপজেলার অন্যান্য কর্মকর্তারা বলে ওঠেন- এই হচ্ছেন মা। যে মা এসেছিলেন বিচার চাইতে, সেই মাই আবার কাঁদছেন তাদের মাফ করে দেওয়ার জন্য। 

সোমবার (৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে মাগুরার শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটেছে।

ভুক্তভোগী মোমেনা বেগম উপজেলার হোগলডাঙা গ্রামের মৃত শফি উদ্দিন মোল্লার স্ত্রী। তাদের পাঁচ ছেলে আর তিন মেয়ে। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন, ছেলেরাও বিয়ে করে পৃথক সংসার করছেন। 

মোমেনা বেগম জানান, তার স্বামী শফি উদ্দিন চার বছর আগে মারা গেছেন। স্বামীর মৃত্যুর পর ছেলেরা তার খোঁজ নেন না। বড় ছেলে ইব্রাহীম খলিফা হোমিও চিকিৎসক। মেঝো ছেলে আয়েব আলী কৃষি কাজ করেন। অন্য তিন ছেলে জাহিদুল ইসলাম, নুর ইসলাম ও সুরুজ আলী সবাই নানা ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত। অঢেল অর্থ-সম্পদ না থাকলেও সবাই সচ্ছল। তারপরও ছেলেরা তাকে খেতে-পরতে দেন না। স্বামীর রেখে যাওয়া জমি বর্গা দিয়ে আর মেয়ে-জামাইয়ের সাহায্যে তার খাওয়া-পরা চলে।

শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী  কর্মকর্তা লিউলা-উল-জান্নাহ বলেন, লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে বিচারের জন্য মোমেনা বেগমের পাঁচ ছেলেকে নোটিশ করা হয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ভরণপোষণের জন্য পাঁচ ছেলে মাসে এক হাজার করে টাকা মাকে দেবে মর্মে লিখিত মুচলেকা নেওয়া হয়েছে। আর যে ছেলের মারধরের কারণে মোমেনা বেগমকে  হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল তার নামে নিয়মিত মামলা করার নির্দেশ দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। কিন্তু মায়ের কান্নাকাটির  কারণে এবং মামলা করতে রাজি না হওয়ায় আমি বিষয়টি ওসি সাহেবের ওপর ছেড়ে দিই।

এ বিষয়ে শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকদেব রায় বলেন, বৃদ্ধা মায়ের আকুতি মিনতির কারণে এবারকার মতো মুচলেকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

সোনালীনিউজ/আইএ