পীরগঞ্জের সাঁওতালরা শীতকালীন শিকারে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে

  • রংপুর (পীরগঞ্জ) প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২২, ০৫:২৯ পিএম
সাঁওতালরা শিকারে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে

রংপুর: রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার আদিবাসী পল্লী গুলোতে বসবাসকারী সাঁওতালরা শীতকালীন শিকারে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। রোববার (২০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে উপজেলার কাবিলপুর ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামে এ দৃশ্য লক্ষ্য করা গেছে। সাঁওতালরা ১৫ থেকে ২০ জন সংঘবদ্ধ হয়ে তীর-ধনুক, লাঠি, শাবল, বল্লম নিয়ে শিকারের সন্ধানে বন-জঙ্গলে অবস্থান নিয়ে সম্ভাব্য শিকারের পিছু ছুটছে। অবস্থা দৃশ্যে মনে হয় এরা  অন্যান্য জাতি-গোত্রের তুলনায় অনেকটাই বেশি একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। 

সেই সাঁওতাল সম্প্রদায়ের একটি শিকারী দলের দেখা মেলে উল্লেখিত বিষ্ণুপুর গ্রাম এলাকায়। এই সাঁওতাল দলের বাড়ি পীরগঞ্জের চতরা ইউনিয়নের সখিপুর আদিবাসী পল্লীতে। পায়ে হেঁটে তারা বলতে গেলে যুদ্ধাবস্থায় শিকারের সন্ধানে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরের ঝোঁপ-ঝাড়, জঙ্গল এমনকি আবাদী ফসল গম, সরিষা, ভুট্টার জমিতে যেখানেই শিকারের আনাগোনা ছুটছে সেখানেই। দুপুর পর্যন্ত তারা শিকার করেছে বেশ কয়েকটি গারোয়া ও খেকশিয়াল নামক প্রাণী। 

প্রত্যেকটা প্রাণীর ওজন হবে প্রায় ৮ হতে ১০ কেজি পর্যন্ত। এ সময় সাঁওতাল ২ যুবকের ঘাড়ে লাঠিতে ঝুলানো ৪টি শিয়াল। অন্য দুই জনের ঘাড়ে বস্তায় রাখা হয়েছে শিকার করা গারোয়া বা বন বিড়াল, বড় ইঁদুর, কাঠ বিড়ালি, খরগোশ। এই শিকারী দলের নেতা রবিন মার্ডি (৪০) ও সুমন মর্মুর (৩৫) সাথে কথা হলে বলা হয়- দাদা আমাদের আর পোষায় না। আগের মতো বন-জঙ্গল নেই। চারদিকে ফাঁকা তাই শিকারের দেখা পাওয়া যায় না। যদিও দুই-একটি পাওয়া যায়-এতে পোষায় না। আমরা এখন অনেকেই পরের জমিতে কৃষিকাজ করি। কাজকর্ম না থাকলে জীবিকার তাগিদে দলবদ্ধ হয়ে শিকারের সন্ধানে বের হই। তবে আজকে ভালো শিকার হয়েছে। আর ঘরের রমনীরা বাঁশঝাড়, বন-জঙ্গলে মাটির নিচ থেকে আলু তুলে নিয়ে আসে। 

এসব খেয়েই পরিবার পরিজন নিয়ে কোনমতে বেঁচে আছি। এখন আমরা কিছু কিছু সরকারি সুযোগ সুবিধা পাচ্ছি। সব মিলে বেঁচে আছি। শিকার ধরার কৌশলাদি জানতে চাইলে তারা বলেন- আমাদের চোখ আর তীরের নিশানা মিস হয় না। প্রথমে শিকারকে লক্ষ্য করে হাতের তীর ছুড়ে মারি। এতে শিকার গর্তে ঢুকে গেলে শাবল দিয়ে মাটি খুঁড়ে লাঠি দিয়ে আঘাত করে আহত করি। আর যদি শিকার দৌঁড়ে পালাতে চায় তাহলে আমাদের সাথে থাকা তীর-ধনুক দিয়ে আহত করে ধরে ফেলি। আমরা শিকারের উদ্দেশ্যে বের হলেই গ্রামের লোকজনরা আমাদের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।

এ দৃশ্য দেখে আমরা মজা পাই। এ সম্পর্কে জানতে চাইলে চতরা ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হক শাহিন বলেন, উপজেলার মধ্যে চতরা ইউনিয়নে প্রায় ১হাজার সাঁওতাল পরিবার বসবাস করে। কিছু সংখ্যক সাঁওতাল পরিবারকে ইতোমধ্যে সরকার প্রদত্ত বিভিন্ন ভাতার আওতায় আনা হয়েছে। এরপরেও তাদের আবাদী জায়গা জমি না থাকায় সারা বছর অন্যের দ্বারস্ত হয়ে তাদের জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। তবে প্রতি বছর শীত মওসুম এলেই তারা সংঘবদ্ধ হয়ে শিকারের আশায় বেড়িয়ে পড়ে।

সোনালীনিউজ/এমএ/এসআই