আগাম লিচু বিক্রি শুরু

  • আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মে ৯, ২০২২, ১২:৩১ পিএম

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় মৌসুমের রসালো মিষ্টি ফল লিচু বাজারে উঠতে শুরু করেছে। প্রচণ্ড গরম থাকায় লিচুর কদরও রয়েছে বেশ ভাল। স্থানীয় বাজারে উঠা ওইসব লিচু চড়া দামে হাঁকিয়েছেন বিক্রেতারা। প্রতিশ লিচু বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা।

এদিকে পৌর শহরের সড়ক বাজার এলাকায় মিষ্টি ও রসালো লিচু নিয়ে বসে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত আগাম লিচুর ভালো চাহিদা রয়েছে বলে জানায় বিক্রেতারা। বিক্রিতে ভালো লাভ হওয়ায় খুশি লিচু চাষিরা।

উপজেলা কৃষি অফিস জানায় পৌর শহরসহ উপজেলায় প্রায় ৯০ হেক্টর জমিতে লিচুর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। ইতিমধ্যে আগাম জাতের দেশীয় লিচু বাজারে বিক্রি শুরু হয়েছে। বোম্বাই,পাটনাই, চাইনা লিচু বাজারে উঠতে আরো ১০-১২ দিন লাগবে ।

সরেজমিনে পৌর শহরের সড়ক বাজার গিয়ে দেখা যায় উপজেলার আশাপাশের বিভিন্ন এলাকার বাগান থেকে বিক্রেতারা লাল টসটসে রসালো লিচু নিয়ে পসরা সাজিয়ে বসে আছেন । বিক্রির জন্য চলছে তাদের হাক ডাক। লিচু বিকিকিনিতে যোগ দিচ্ছেন স্থানীয় চাষি, ব্যবসায়ী ও পাইকাররা। তবে এখানকার লিচু রসালো,মিষ্টি ও স্বাধে অতুলনীয় হওয়ায় জেলাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তরে এর কদর ও রয়েছে বেশ ভাল। এখানে প্রতিশ লিচু বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকায়।

উপজেলার আরোয়ার পুর গ্রামের লিচু চাষি মো. জাকির হোসেন বলেন, তার ৬০টি লিচু গাছ রয়েছে। সবগুলো গাছে লিচু এসেছে। তবে এখনো পরিপক্ক হয়নি। কয়েকটি গাছে আগাম লিচু পাকতে শুরু করায় গত দুই দিন ধরে আগাম জাতের লিচু বাজারে এনে বিক্রি করছেন। এতে তিনি বিক্রিতে ভালো দাম পাচ্ছেন বলে জানায়।

বাগান মালিক মোস্তফা মিয়া বলেন, বাড়ির পাশে ২টি লিচু বাগানে ৪৫টি গাছ রয়েছে। এ মৌসুমে তার গাছে ভালো লিচু এসেছে। এখনো ভালো করে পাকেনি। আগামী ১০-১৫ দিনের মধ্যে পুরোপুরো পেকে যাবে। তবে বাগানে কিছু দেশী জাতীয় লিচু পাকতে শুরু করেছে। তাই বিক্রি করতে নিয়ে আসা। তিনি আরো বলেন এ এলাকায় বোম্বে,পাটনাই ও চাইনাসহ বিভিন্ন জাতের লিচু চাষ করা হয়।

লিচু চাষি মুর্শেদ মিয়া বলেন, কয়েকটি গাছে আগাম লিচু পাকতে শুরু করেছে। বাজারে লিচুর চাহিদা থাকায় বিক্রিতে ভালো লাভ হচ্ছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে লিচু বিক্রি পুরোপুরো শুরু হবে বলে আশা করছেন। তিনি আরো বলেন গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর তার বাগানে ভালো লিচু এসেছে। আবহাওা অনুকুলে থাকলে ভালো টাকা আয় হবে বলে তিনি আশা করছেন।

উপজেলার উত্তর ইউনিয়নের রামধননগর, চানপুর, আনোয়ারপুর রাজাপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে গিয়ে দেখা যায় চাষিরা ব্যস্ত সময় পার করছে। লিচু গাছ থেকে পেড়ে বাজার জাত করতে নারী পুরুষসহ সব বয়সের লোকজন এ কাজে জড়িয়ে পড়ছেন। যেন লিচুতে মেতে উঠতে শুরু করছে পুরো এলাকা।

ওইসব এলাকার এমন কোন বাড়ি নেই যার আঙ্গিনায় ৪-৮টি লিচু গাছ নেই। থোকায় থোকায় কাচা পাকা বাহারি লিচুতে যেন সবার মন কাড়ছে। সেই সাথে লিচুর মৌ মৌ গন্ধ আর ছোট পাখিদের কিচির মিচির শব্দে এলাকা এখন মুখরিত হয়ে উঠেছে। লিচু বিক্রেতা শামসু মিয়া বলেন, তার কয়েকটি গাছ থেকে ১হাজার লিচু তিনি বিক্রি করতে বাজারে নিয়ে আসেন। লিচুর আকার ভালো হওয়ায় ১ ঘন্টার মধ্যে তার সব লিচু বিক্রি হয়। প্রতিশ লিচু বিক্রি করেছেন ৩শ টাকা করে।

ক্রেতা মো: আলাউদ্দিন বলেন, ছেলেকে নিয়ে তিনি বাজার করতে আসেন। হঠাৎ ছেলের নজর লিচুর মধ্যে পড়ায় ১শ লিচু ৩শটাকায় ক্রয় করেছেন বলে জানায়। গৃহিণী আয়েশা আক্তার বলেন, প্রচন্ড গরম থাকায় তিনি বাজারে এসছেন তরমুজ ক্রয় করতে। কিন্তু বাজারে আগাম লিচু দেখতে পেয়ে তিনি ক্রয় করেন। তবে ওইসব লিচু তুলনামুলকভাবে রসালো ও মিষ্টি কম রয়েছে বলে জানায়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম বলেন, এ উপজেলায় দেশী, বোম্বাই, পাটনাই, চায়না লিচুর চাষ হয়েছে। লিচু চাষের জন্য এখানকার মাটি খুবই ভাল। ফলন ভালো হওয়ায় দিন দিন লিচু চাষে জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলন বৃদ্ধিতে কৃষকদেরকে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে জানায়। তিনি আরো বলেন এখানকার লিচু এখনো ভালো করে পাকেনি। আগামী ১২-১৫ দিনের মধ্যে লিচু বাজারে ভরপুর হয়ে উঠবে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে এ মৌসুমে লিচুর বাম্পার ফলনের আশা করছেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই