লিচুতে সরগরম আখাউড়া: বদলে গেছে বাজারের চেহারা

  • আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মে ২১, ২০২২, ০৪:০৯ পিএম

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : মধুমাস জ্যৈষ্ঠের অন্যতম ফল লিচু। লিচু চাষ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ইতিমধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় বাজারে লিচু বিক্রি শুরু হয়েছে। মৌসুমি লিচুতে পৌর শহরের সড়ক বাজার এলাকায় বদলে গেছে চেহারা ও। লাল টসটসে রসালো লিচুর পসরা সাজিয়েছেন দোকানিরাও। বিকিকিনিতে যোগ দিচ্ছেন স্থানীয় চাষি, ব্যবসায়ী ও পাইকাররা। নজরকাড়া রং , রসালো,মিষ্টি ও স্বাধ গন্ধে অতুলনীয় হওয়ায় এখানকার লিচু জেলাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তরে এর কদর বাড়ছে। এখান থেকে লিচু কিনে ব্যবসায়ীরা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বিক্রি করছেন। প্রতিদিন গড়ে স্থানীয় বাজারে বর্তমানে ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকার উপর লিচু বিক্রি হচ্ছে বলে চাষিরা জানায়।

এদিকে লিচুর ভরা মৌসুম হওয়ায় এ উপজেলার ৩টি ইউনিয়নে অন্তত ৩০ টি গ্রামে ছোট-বড় অসংখ্য লিচু বাগাম রয়েছে। ওইসব গ্রামের বেশীভাগ অনাবাদি জমি ছেয়ে আছে সবুজ পাতার ফাকে ফাকে বিভিন্ন জাতের লিচুতে।

যেদিকেই চোখ যায় লাল রঙের সমাহার। এখানকার লিচু রসালো ও মিষ্টি হওয়ায় জেলাসহ বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন পাইকাররা। বর্তমানে লিচুর ভরা মৌসুম হওয়ায় নারী পুরুষ সবাই লিচু বাগানে ব্যস্ত সময় পার করছেন। নানা প্রতিকুলতা অপেক্ষা করে স্থানীয় কৃষকরা এমৌসুমে লিচু চাষে নিরভ বিল্পব ঘটিয়েছেন।

প্রসিদ্ধ এ লিচুর ভরা মৌসুমে গ্রামে চলছে যেন উৎসবের আমেজ। দূর-দূরান্তের লোকজন আসছেন লিচু কিনতে। এলাকার আত্মীয়-স্বজন বেড়াতে আসছেন লিচুর মৌসুমে। তাছাড়া স্থানীয় ব্যবসায়ী ও পাইকাররা লিচু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন । প্রতি ১০০ লিচু বিক্রি হচ্ছে ২শ টাকা ২৫০ টাকা থেকে ৩শ টাকায়।

এদিকে লিচু নিয়ে গড়ে উঠেছে পৌর শহরের সড়ক বাজার এবং আজমপুরসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় পাইকারী ও খুচরা বাজার। ওইসব বাজারে প্রতিদিন ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকার উপর লিচু বিক্রি হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় ২৮০ হেক্টর জমিতে লিচুর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এরমধ্যে উত্তর ,দক্ষিন ও মনিয়ন্দসহ ৩ ইউনিয়নে অন্তত ৩০টি গ্রামে লিচু চাষ হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পৌর এলাকার দূর্গাপুর, উপজেলার উত্তর ইউনিয়নের রামধননগর, চানপুর, আমোদাবাদ, রাজাপুর, আনোয়ারপুর, মনিয়ন্দের ঘাঘুটিয়া, খারকোট, মিনার কোট নিলাখাতসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে চাষীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। লিচু গাছ থেকে পেড়ে বাজার জাত করতে নারী পুরুষসহ সব বয়সের লোকজন এ কাজে জড়িয়ে পড়ছেন। কেউ কেউ আবার দিনমজুর হিসাবেও এখানে কাজ করছেন। এখানে দেশীয়,চাইনা,পাটনাই ও বোম্বাই জাতের লিচু চাষ হয় বেশী। এ লিচুর বৈশিষ্ট্য হল উৎপাদন বেশী হয় ও পোকা মাকড়ের আক্রমন তুলনামূলক কম হয়।

এদিকে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল থাকায় স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে প্রতিদিন সড়ক ও রেলপথে ব্রাহ্মণবাড়িয়া,কুমিল্লা, আশুগঞ্জ, ভৈরব, মাধবপুর, শায়েস্তাগঞ্জ, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাইকাররা নিয়ে লিচু বিক্রি করছেন। তবে বাগান থেকে লিচু তোলার শেষ সময় পর্যন্ত প্রাকৃতিক কোন দুর্যোগ না হলে আর্থিক ভাবে অনেক লাবভান হবে বলে জানায় অনেক চাষি।

লিচু কিনতে আসা পৌর শহরের তারাগন এলাকার মো: মোবারক হোসেন বলেন, বাজারে রসালো ফল লিচু উঠেছে তাই ১শ লিচু ২শ৫০ টাকায় কেনা হয়েছে। এ উপজেলার লিচু গুনগতমান খুবই ভালো ।

কসবা এলাকার মো: মুর্শেদ মিয়া বলেন, প্রয়োজনীয় কাজ করতে আখউড়ায় আসা হয়। বাজারে নতুন লিচু দেখে বাড়ির জন্য ৩শ লিচু কেনেন । তিনি বলেন এখারকার লিচুর সুনাম রয়েছে দীর্ঘ দিনের। দেখতে যেমন সুন্দর, খেতেও খুব মজা।

সড়ক বাজার এলাকার লিচু ব্যবসায়ী মো: ইকবাল হোসেন বলেন, তিনি দীর্ঘ ১০ বছর ধরে মৌসুমি ফল লিচুর ব্যবসা করছেন। তিনি বলেন গত এক সপ্তাহ ধরে বাজারে লিচু বিক্রি শুরু হয়েছে। এ মৌসুমে তিনি ১০টি লিচু বাগান ইজারা নিয়েছেন। স্থানীয় পর্যায়ে দৈনিক তিনি ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার লিচু বিক্রি করছেন বলে জানায়। মহসীন বলেন, বিভিন্ন বাগান থেকে প্রতিদিন ৩০ হাজারের উপর লিচু ক্রয় করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করছেন। স্থানীয় পর্যাায়ে লিচুর ভালো চাহিদা রয়েছে। বিক্রিতেও ভালো আয় হচ্ছে বলে জানায়।

লিচু চাষি মো. হারুণ মিয়া বলেন, বাড়ি সংলগ্ন অন্যান্য ফল গাছের পাশাপাশি তার প্রায় ৩০ টি লিচু গাছ রয়েছে। প্রত্যেকটি গাছে লিচু এসেছে। স্থানীয় বাজারে গত এক সপ্তাহ ধরে চলছে বেচাকেনা। এ পযর্ন্ত ২৫ হাজার টাকার লিচু বিক্রি হয়েছে বলে জানায়।

লিচু চাষি মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ২টি বাগানে দেশীয়,চাইনা বোম্বে জাতের ৭০ টি লিচু গাছ রয়েছে। অন্য বছরের চাইতে এ মৌসুমে ফলন তুলনামুলক ভালো হয়েছে। বাজারে বিক্রিতে ভালো দাম পাচ্ছেন। তিনি আশা করছেন শেষ পযর্ন্ত আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে ৩ লাখ টাকার উপর লিচু বিক্রি হবে।

পাইকার মো. সিরাজ মিয়া বলেন, মৌসুমি ফল লিচু এখান থেকে ক্রয় করে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বিক্রি করছেন । এখানকার লিচু মিষ্টি ও রসালো হওয়ায় বিক্রিতে ভালো লাভ হয় বলেন জানায়।

লিচু গাছ মালিক আলাউদ্দিন বলেন, আমাদের প্রধান ফসল হয়ে উঠেছে লিচু। এর আয় থেকেই পরিবারের ভরণ-পোষণসহ সন্তানের লেখাপড়ার খরচ চলে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম বলেন, চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় লিচুর ফলন ভালো হয়েছে। দিন দিন বাড়ছে লিচুর চাষও। স্থানীয় বাজারে লিচু বিক্রিতে চাষিরা ভালো দাম পাচ্ছেন। তাছাড়া ফলন ভালো রাখতে সার্বিক ভাবে চাষিদেরকে পরামর্শ দেওয়া হয় বলে জানায়।

সোনালীনিউজ/এমটিআই