সরকারি যাত্রীছাউনি যেন নেশাখোরদের আড্ডাখানা

  • ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৩, ০৩:৪০ পিএম

ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁওয়ের আঞ্চলিকসড়কগুলোর পাশে নির্মিত অধিকাংশ যাত্রীছাউনি এখন কোন কাজেই আসছে না। প্রকল্পের মাধ্যমে সরকারের লাখ লাখ টাকা ব্যয় করা হলেও মুখ থুবরে পরে আছে নির্মিত এসব যাত্রীছাউনি। তবে মাদকসেবীদের আড্ডা ছাড়া কোন কাজে আসছে না বলে অভিযোগ রয়েছে স্থানীয়দের।

জানা যায়, সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে ঠাকুরগাঁও জেলার অভ্যন্তরীণ প্রতিটি সড়কের পাশে প্রকল্পের মাধ্যমে জেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃপক্ষ যাত্রীছাউনি নির্মাণ বাস্তবায়ন করেন। কিন্তু কয়েকবছর ধরে তিন চাকার যানবাহনের দাপটে গড়েয়া, রুহিয়া, লাহিড়ী, ভাউলারহাট, বালিয়াডাঙ্গীসহ বেশকিছু আঞ্চলিক সড়কে যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এরপরেও এসব সড়কের পাশে প্রতিবছর গড়ে তোলা হচ্ছে যাত্রী ছাউনি। যা এখন আর কোন কাজেই আসছে না। সুবিধামত স্থান থেকেই তিন চাকার যানবাহন ইজিবাইক, পাগলু, অটোরিক্সা যোগে গন্তব্যে পৌছাতে পারছেন সাধারণ যাত্রীরা। ফলে রোদ, বৃষ্টি এবং দূর্যোগ সহনীয় নির্মিত এসব যাত্রীছাউনি মুখ থুবরে পরে আছে। সরকারের এসব স্থাপনা দেখভালের অভাবে নষ্টও হচ্ছে, পরিণত হয়েছে নেশাখোরদের আড্ডা খানায়।

স্থানীয় সরকার ও জেলা পরিষদ জানিয়েছেন, আন্তঃজেলা প্রকল্পের মাধ্যমে স্থানীয় সরকারের আওতায় ২০১৬ থেকে ২০২২ পর্যন্ত ৪৮ লাখ ৬৪ হাজার টাকায় ২৯টি ও জেলা পরিষদের আওতায় ২০০০ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত সাড়ে চৌদ্দ লাখ টাকায় ১৮টি সর্বমোট ৪৭টি যাত্রী ছাউনি বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে জেলার বেশির ভাগ যাত্রীছাউনি। ঠাকুরগাঁওয়ে ৪৭টি যাত্রী ছাউনি থাকলেও বেশির ভাগই ব্যবহার করার পর্যায়ে নেই। মাদকসেবী, ভিক্ষুক ও ভবঘুরেদের দখলে রয়েছে অনেক যাত্রীছাউনি। অন্যগুলোর মেঝেও ভাঙা। কোনোটির বসার জায়গা ধুলাবালিতে একাকার হয়ে আছে। কিছু যাত্রীছাউনি দেখে বোঝার উপায় নেই যে সেখানে কখনো বসার জন্য ব্যবস্থা ছিল। যাত্রীদের জন্য বর্ষায় বৃষ্টি আর রোদ থেকে রক্ষা পেতে স্থানীয় সরকার ও জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে থাকা যাত্রী ছাউনিগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে অনেক আগেই।

স্থানীয়দের অভিযোগ, আন্তঃজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি যাত্রী ছাউনি সদরের আকচা ইউনিয়নে যা কোন কাজে আসছে না প্রকল্প বাস্তবায়ন করে বেশকিছু অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ঠিকাদার সুব্রত কুমার বর্মন। সরকারের লাখ লাখ টাকায় নির্মিত যাত্রী ছাউনিগুলো ব্যবহার হচ্ছে না। এছাড়াও অন্যান্য আন্তঃসড়কেও নির্মিত ছাউনিগুলো অবস্থা একই। অপরিকল্পিতভাবে যাত্রী ছাউনি গড়ে তোলার কারনে সরকারের অর্থ অপচয় হচ্ছে বলে জানান তারা।

রুবেল ইসলাম নামে এক গাড়ি চালক জানায়, সড়কগুলোতে নির্দিষ্ট স্টপেজ করা থাকলেও যাত্রীরা তাদের সুবিধামত স্থানে উঠতে নামতে চায়। ফলে যাত্রীরা যেখানে বলে সেখানে গাড়ি থামে। সব যাত্রী নির্দিষ্ট স্টপেজে অপেক্ষা করলে চালকরা বাধ্য হয়ে ওই জায়গায় গাড়ি থামাবে। ওই চালক বিষয়টি স্বীকার করেন, মহাসড়কের ওপর যাত্রী উঠানামা করাতে গিয়ে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয়। অনেক সময় অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনাও ঘটছে ।

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক কার্যালয়, স্থানীয় সরকারের ডিস্ট্রিক্ট ফ্যাসিলিটেটর শফিকুল আলম জানান, সাধারণ যাত্রীদের সুবিধার্থে সংশ্লিস্ট জনপ্রতিনিধিদের চাহিদার কারনেই এসব যাত্রী ছাউনি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এখানে কাজ যেন সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয় সেই বিষয়ে তদারকি করার দায়িত্ব আমাদের।

সোনালীনিউজ/এম