সিরাজগঞ্জ: বাড়ির নলকূপে ঠিক মতো পানি উঠছে না। এক বালতি পানি বের করতে নলকূপ চাপতে চাপতে হয়রান হয়ে যাচ্ছি এমনটি বলছিলেন, তাড়াশ উপজেলার তালম ইউনিয়নের পাড়িল গ্রামের গৃহবধূ মুর্শিদা খাতুন (৪৫)। তিনি আরো বলেন, তাই বাড়ির নলকূপটি উঠিয়ে অপেক্ষৃত নিচু জায়গায় বসিয়েছি। কিন্তু তাতেও তেমন কাজ হচ্ছে না। আর এ অবস্থা শুধু গৃহবধু মুর্শিদা খাতুনেই নয়।
মূলতঃ উপজেলা জুড়ে গ্রীস্ম শুরুতেই, বিভিন্ন বাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নলকূপে পানি না উঠায় শত শত গ্রামে হাজার হাজার মানুষ ও শিক্ষার্থীরা সুপেয় পানির সংকটে পড়েছেন। পাশাপাশি চলতি বোরো আবাদে পানি স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় ইঞ্জিন সেচ যন্ত্রে পানি কম উঠায় জমি সেচ দিতে দীর্ঘক্ষণ সময় লাগছে এবং সেচ খরচও বাড়ছে। ফলে অনেকেই সুপেয় অথাৎ বিশেষ করে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট মোকাবেলায় বাড়ির নলকূপ উঠিয়ে অপেক্ষাকৃত নিচু জায়গায় স্থানান্তর করছেন ও কৃষকেরা সংকট মোকাবেলার বাধ্য হয়ে রাতে সেচ ইঞ্জিন চালিয়ে পানি দিয়ে ধান রক্ষার চেষ্টা করছেন।
আবার গ্রামের অনেক নারীই পান যোগ্য পানি সংগ্রহে বাড়ির নিকটবর্তী বোরো স্কীমের গভীর-অগভীর ইঞ্জিন চালিত শ্যালো মেশিন থেকে সকাল বিকাল কলসি, বালতি, জারকিং কাঁখে নিয়ে পানি সংগ্রহে নেমে পড়েছেন।
জানা গেছে, বাংলাদেশের বৃহত্তম বিল চলনবিল অঞ্চলের সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া, তাড়াশ, রায়গঞ্জ পাবনার ভাঙ্গুড়া, চাটমোহর, ফরিদপুর, নাটোরের গুরুদাসপুর, সিংড়া ও নওগাঁর আত্রাই এলাকায় সাম্প্রতিক সময়ে আবহাত্তয়ার তারতম্য ও জলবায়ুতে ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এরই মধ্যে অন্যতম হচ্ছে গ্রীম্মকাল শুরু হওয়ার আগেই চলনবিল এলাকার নলকূপ গুলোতে কাঙ্খিত পানি না উঠায় তীব্র সুপেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। বেশির ভাগ নলকূপে প্রয়োজনীয় খাবার পানি মিলছে না। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় নলকূপ গুলোতে প্রয়োজনীয় পানি না উঠায় বর্তমানে পানি সংগ্রহে গ্রামের লোকজন চরম ভোগান্তিতে পরেছেন।
তাড়াশ উপজেলার দেশিগ্রাম ইউনিয়নের মাছদক্ষিণা গ্রামের শিক্ষার্থী মীম খাতুন জানান, প্রায় এক মাস যাবৎ আমাদের বাড়ির নলকূপে পানি কম উঠছে। এতে নলকূপ চাপতে চাপতে হয়রান হয়ে যাচ্ছি। তাই বাড়ির পানির চাহিদা পূরুণে কষ্ট হওয়ায় সে নলকূপটি উঠিয়ে বাড়ির নিচে অপেক্ষাকৃত নিচু জায়গায় স্থানান্তর করেছি। কিন্তু তাতেও তেমন কাজ হচ্ছেনা। ফলে বাধ্য হয়েই পান যোগ্য পানি সংগ্রহে বাড়ির নিকটবর্তী বোরো স্কীমের অগভীর শ্যালো মেশিনে যেতে হচ্ছে। আর এ অবস্থা শুধু আমাদের নয় আশে পাশের বাড়িতেও।
এদিকে শুধু খাবার পানিই নয় গৃহস্থালী কাজকর্মেও বিশুদ্ধ পানির সংকট চলনবিল এলাকায় রয়েছে বলে জানান তাড়াশ উপজেলার পৌর এলাকার কাউরাইল গ্রামের কৃষক আমজাদ মোল্লা জানান, চলনবিলে বিভিন্ন এলাকায় শত শত পুকুর থাকলেও বেশীর ভাগ পুকুরে মুরগীর বিষ্ঠা ব্যবহার করে পানি দুষিত করা হচ্ছে। ফলে ওই সব পুকুরে গোসল করা, থালা বাসন মাজা, কাপড় চোপর ধোয়া, গরু বাচ্ছুর সাঁতরানো যাচ্ছে না। আবার অনেকেই পুকুরে মাছ চাষ করায় তাতে নামতেও দিচ্ছে না। ফলে সংকট আরো ঘনিভূত হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে তাড়াশ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী দারুস সালাম বলেন, চলনবিল একটি বৃহত এলাকা । মুলতঃ একেক জায়গার পানির স্তর একেক রকম। তাছাড়া চলনবিল অঞ্চলে গ্রীম্মকালে পানির ব্যাপক ব্যবহার সহ নানা কারনে পানির স্তর নিচে নেমে যায়। এ কারণে নলকূপ ও গভীর-অগভীর সেচ যন্ত্রে গুলোতে পর্যাপ্ত পানি ওঠেনা। তাই বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দেয়। তবে এ অবস্থা সাময়িক। কেননা বৈশাখ জ্যেষ্ঠ মাসে বৃষ্টি শুরু হলেই আপনা-আপনি পানির স্তর সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।
সোনালীনিউজ/এইচএইচ/এসআই