দাদি-নাতির বিয়ে ভাইরাল, সংসারে ভাঙনের সুর

  • ভোলা প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুন ২, ২০২৩, ০৭:০৭ পিএম

ভোলা: ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় ৭ লাখ টাকা দেনমোহরে দাদিকে বিয়ে করেছেন নাতি। এ খবর ভাইরাল হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন ওই দাদি-নাতি এবং তাঁর আত্মীয়স্বজনরা। প্রতিদিন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে সাংবাদিক ও ইউটিউবে ভিডিও কন্টেন্ট বানাতে অনেকেই তার বাড়িতে ভিড় করছেন। যাঁর কারণে বিভ্রান্তিতে পড়তে হচ্ছে তাকে।

এছাড়াও দাদিকে বিয়ে করায় প্রতিনিয়ত স্থানীয়দের কটুকথার রোষানলে পড়তে হচ্ছে মিরাজকে। তাই যেকোনো সময় তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হতে পারে। ঘটনাটি সংবাদমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর প্রতিদিন তাদের বাড়িতে দূরদূরান্ত থেকে লোকজন ভীড় করতে থাকে।

এদিকে জেলা জুড়ে এ ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় চাঞ্চল্য। ইসলামি শরিয়তে এ বিবাহ জায়েজ নেই বলে জানান আলেম-ওলামারা।

শুক্রবার (২ জুন) সকালে নাতি মিরাজ হোসেন বলেন, তাঁর দাদার মৃত্যুর দেড়বছর পর ভালোবেসে সে তাঁর দাদি শামসুন্নাহারকে ২১ মে নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে বিয়ে করেন। ৩১মে এ ঘটনা সংবাদমাধ্যমে ভাইরাল হলে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে সাংবাদিক ও ইউটিউবে ভিডিও কন্টেন্ট বানাতে অনেকেই তাঁর বাড়িতে আসছেন। এতে লোকলজ্জাসহ নানান কারনে বিপাকে পড়তে হচ্ছে তাকে। যাঁর কারনে এ বিয়ে নিয়ে এখন তিনি দুশ্চিন্তায় আছেন। যেকোনো সময় তাঁর সাংসারিক জীবন ভেঙে যেতে পারে।

এ যুবক আক্ষেপ করে বলেন, তাঁর বয়স ২৭ বছর এবং তাঁর দাদি শামসুন্নাহারের বয়স ৩৫ বছর। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে তাঁর বয়স ১৭ এবং তাঁর দাদির বয়স ৫০ বছর উল্লেখ করা হয়েছে। যা সঠিক নয়।

আপনি দাদিকে কেনো বিয়ে করলেন জানতে চাইলে মিরাজ বলেন, দাদা থাকাকালীন সময় থেকেই আমি দাদিকে ভালোবেসে ফেলেছি। সেই ভালোলাগা থেকেই তাকে বিয়ে করে দাদি থেকে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়েছি।

ইসলামি শরিয়তে এ বিবাহ জায়েজ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, ইসলামি শরিয়তে এ বিবাহ জায়েজ আছে। সেজন্যই ৭ লাখ টাকা কাবিনে তাকে বিয়ে করেছি। আমি চেয়েছি আমার ভালোবাসা প্রতিষ্ঠিত করতে। কিন্তু সেটা করেও এখন বিপাকে পড়ে গেছি।

লোকমুখে শোনা যাচ্ছে দাদার মৃত্যুর পর দাদি শামসুন্নাহারের সঙ্গে অবৈধ দৈহিক সম্পর্কে তিনি জড়িয়ে পড়েন। এ ঘটনা জানাজানি হলে তাড়াহুড়ো করে তিনি শামসুন্নাহারকে বিয়ে করেন। এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, লোকমুখের এমন গুঞ্জন সত্য নয়।

এ বিষয়ে মিরাজের বাবা মো. জসিম উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। একপর্যায়ে তিনি ক্ষোভ করে বলেন মিরাজ নামে তাঁর কোনো ছেলে নেই।

শশিভূষণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিজানুর রহমান পাটোয়ারী জানান, এ ঘটনাটি ভাইরাল হওয়ার পর তিনি বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখেছেন। দাদি-নাতির যে বয়সের কথা ছড়ানো হয়েছে তা সঠিক নয়।

তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। ছেলের বয়স অপ্রাপ্ত হলে বাল্যবিয়ে আইনে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া যেতো। কিন্তু ছেলের বয়স ২৪ এবং ওই নারীর বয়স ৪২ বছর। যাঁর কারনে কোনো ব্যবস্থা নেয়া যায়নি। এরপরও কোনো অভিযোগ পেলে পুলিশ তা গুরুত্বসহকারে দেখবে। সংসার ভাঙনের সুরের বিষয়ে তিনি এখন পর্যন্ত কিছু শোনেননি।

তানজিমুল কুরআন মাদরাসার পরিচালক মো. তরিকুল ইসলাম তারেক জানান, দাদার বিবাহিত স্ত্রী নাতি বিবাহ করতে পারবে এমন কোনো হাদিস নেই। ইসলামি শরিয়তে এটা জায়েজ না। এটা অবৈধ বিবাহ এবং ইসলামের পরিপন্থী কাজ।

ইসলামি ফাউন্ডেশন ভোলা জেলার উপ-পরিচালক এম মাকসুদুর রহমান জানান, ভাইরাল হওয়া এ ঘটনাটি সম্পর্কে তিনি অবগত নন। শরিয়তে বিধান নেই এমন কোনো কর্মকাণ্ড হয়ে থাকলে তা ইসলামি ফাউন্ডেশনের হেড অফিসের ফোরামে জানাতে হয়। সেখান থেকে কোনো দিকনির্দেশনা পেলে তাঁর উপর ভিত্তি করে তাঁরা আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন। ভোলার এ ঘটনাটি তিনি এ প্রতিবেদকের কাছ থেকে শুনেছেন। হেড অফিসের ফোরামে এ ঘটনাটি জানানো হবে। এরপর সেখান থেকে কোনো দিকনির্দেশনা পেলে তা কার্যকর করা হবে।

উল্লেখ, ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার শশীভূষণ থানার হাজারীগঞ্জ ইউনিয়নে মিরাজ হোসেনের বাড়ি। সে পেশায় একজন জেলে। তাঁর দাদা শাহে আলম তিনটি বিয়ে করেছেন। শামসুন্নাহার তাঁর তৃতীয় স্ত্রী ছিলেন। মিরাজ তাঁর প্রথম স্ত্রীর নাতি। দেড়বছর আগে মিরাজের দাদা মারা যায়। এরপর ভালোবেসে দাদার তৃতীয় স্ত্রী শামসুন্নাহারকে মিরাজ বিয়ে করেন। তাঁর দাদার সংসারে শামসুননাহারের দুইটি সন্তান রয়েছে। একটি মেয়ে অন্যটি ছেলে। মেয়ের বয়স ১৭ বছর এবং ছেলের বয়স ১৩ বছর। ওই দুই সন্তান এখন মিরাজের সংসারেই থাকে।

সোনালীনিউজ/এম