ঘর পাচ্ছেন সাফজয়ী গোলরক্ষক ইয়ারজানের পরিবার

  • পঞ্চগড় প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মার্চ ১২, ২০২৪, ০৯:৪৯ পিএম

পঞ্চগড়: নেপালে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৬ সাপ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে টাইব্রেকারে গোলরক্ষক ইয়ারজানের দারুণ দক্ষতায় ভারতকে ৩-২ ব্যবধানে হারানো সম্ভব হয়েছে। 

পঞ্চগড়ের হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান গোলরক্ষক ইয়ারজান বেগম। বাবা অসুস্থ, দিনমজুর মায়ের আয়েই চলে তাদের ৪ সদস্যের সংসার। জরাজীর্ণ থাকার ঘরে নেই কোনো আসবাবপত্র, বাড়িতে নেই ভালো টয়লেট ব্যবস্থাও। এ অবস্থায় পরিবারটিকে থাকার উপযোগী ঘর করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক। 

মঙ্গলবার (১২ মার্চ) বিকেলে জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম ইয়ারজানের বাড়িতে গিয়ে তার বাবা-মার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে এ আশ্বাস দেন। এসময় উপহার হিসেবে নগদ টাকাও তুলে দেন তাদের হাতে।

এসময় উপস্থিত ছিলেন- হাড়িভাসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইয়েদ নূর-ই-আলম, সাবেক চেয়ারম্যান জসিম উদ্দীন, ইয়ারজানের দাদা বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ উদ্দীন, ক্রীড়া সংগঠক এটিএম আখতারুজ্জামান ডাবলু, ইউপি সদস্য জুলহাস উদ্দীন প্রমুখ।

ইয়ারজান বেগমের বাড়ি হিমালয় কন্যাখ্যাত পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের খোপড়াবান্দি গ্রামে। তিনি সেখানকার আব্দুর রাজ্জাকের মেয়ে। ইয়ারজান সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের হয়ে খেলেছেন নেপালের মাঠে। চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তার দল। টুর্নামেন্টের সেরা গোলকিপারের ট্রফিটাও নিজের করে নিয়েছেন তিনি।

গত রোববার নেপালের মাঠে ফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হয় ইয়ারজানরা। খেলায় ভারতকে টাইব্রেকারে ৩-২ ব্যবধানে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। এই অর্জন সম্ভব হয়েছে কেবল গোলরক্ষক ইয়ারজানের বীরত্বেই। ইয়ারজানের এই সাফল্যে উচ্ছ্বাস বইছে জেলা জুড়ে। 

পঞ্চগড় জেলা শহর থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরে প্রত্যন্ত গ্রামে ইয়ারজানদের বাড়ি। সড়কের পাশেই ছোট ছোট দুথটি ঘর তাদের। এরমধ্যে একটি ঘর একেবারেই জরাজীর্ণ। একপাশে ছাউনির টিনগুলো খুলে গেছে। সেই ঘরের শোকেজে সাজানো আছে ইয়ারজানের সাফল্যের ক্রেস্ট এবং ট্রফি।

[219419]

ইয়ারজানের মা রেনু বেগম বলেন, খুব কষ্ট করে আমার মেয়ে এই পর্যন্ত এসেছে। মানুষের কৃষিজমিতে কাজ করে মেয়েকে বড় করেছি। অভাবের সংসারে মেয়েকে তিনবেলা ঠিকমতো খাওয়াতে পারিনি। তার অদম্য ইচ্ছাশক্তি তাকে সাফল্য এনে দিয়েছে, আমাদের গর্বিত করেছে। আজকে আমার বাড়িতে বড় বড় অফিসাররা আসছেন, অনেক বেশি গর্বিত আমি।

ইয়ারজানের বাবা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মেয়ের সাফল্যের গর্বে আমার বুক ভরে গেছে। বাড়িতে এত মানুষ দেখে খুব ভালো লাগছে আমার। আমার মেয়ে আমাকে অনেক বেশি সম্মান এনে দিয়েছে, এত বেশি প্রত্যাশা কখনোই ছিল না। আমি কিচ্ছু চাই না, শুধু মানুষের ভালোবাসা চাই। আমি চাই আমার মেয়ে ভালো কিছু করুক। আমাদের নাম উজ্জ্বল করুক। টাকা পয়সা চাই না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইয়ারজানের বাবা আব্দুর রাজ্জাক শারীরিকভাবে অসুস্থ। কোনো কাজ করতে পারেন না। ফলে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি মা রেনু বেগমই। রেনু বেগমের উপার্জনেই চলে তাদের সংসার। সম্পদ বলতে তাদের কেবল ভিটেমাটি

জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম বলেন, সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে আমরা দেখেছি বাংলাদেশ দল চ্যাম্পিয়ন হবার নেপথ্যে সবচেয়ে বেশি অবদান ইয়ারজানের। ইয়ারজান আমাদের সন্তান, সে আমাদের পঞ্চগড়ের মুখ উজ্জ্বল করেছে। আমরা সবসময় তার পরিবারের পাশে আছি।

এমএস