রাজশাহী: রাজশাহীর বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের সেবা নিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে জনসাধারণের। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে আওয়ামীগের চেয়ারম্যান, মেম্বাররা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এতে অনেকাংশে ভেঙ্গে পড়ে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম। পরবর্তীতে সরকার থেকে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ায় কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও অধিকাংশ সময় জনসেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। একজন প্রশাসক অনেকগুলো অফিস সামাল দেওয়ায় দীর্ঘ অপেক্ষা ও দুর্ভোগের অভিযোগ উঠেছে।
রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় ৭টি ইউনিয়ন এবং ২ টি পৌরসভা রয়েছে। এরমধ্যে উপজেলার বাজুবাঘা ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক নিয়ে হাইকোর্টে স্থগিত আদেশ থাকায় চরম দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছেন ওই এলাকার জনগণ। তারা বলছেন, শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর অত্র উপজেলার ছয়জন ইউপি চেয়ারম্যান আ’লীগ দলীয় হওয়ায় তারা পলাতক। এদিক থেকে বাজুবাঘা ইউপি চেয়ারম্যান বিএনপি সমর্থীত হওয়ায় তিনি এলাকাতে রয়েছেন। এলাকাবাসীদের দাবি, আদালতের স্থগিত আদেশ প্রত্যাহার করে চেয়ারম্যানকে তার চেয়ারে বসার আদেশ বহাল করা হউক।
অনুসন্ধ্যানে জানা গেছে, এক তরফা এবং এক দলীয় নির্বাচনের কারণে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর দেশের বেশির ভাগ জনপ্রতিনিধিরা এখন গা-ঢাকা দিয়েছেন । একারণে গত ১৪ নভেম্বর ভেঙ্গে দেয়া হয় স্থানীয় সরকার পরিচালিত সিটি কর্পোরেশন, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদ। এ সকল স্থানে বসানো হয়েছে জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনার (ভুমি)সহ সরকারী কর্মকর্তাদের। এদিক থেকে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার ১ নং বাজুবাঘা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফিরোজ আহাম্মেদ রঞ্জুর দায়ের করা একটি আবেদনের প্রেক্ষিত প্রশাসক বসানোর বিষয়টি গত কয়েকমাস পূর্বে স্থগিত করেছেন মাহামান্য হাইকোর্টের বিচারক। তবে এখন পর্যন্ত চেয়ারম্যানকেও দায়িত্বভার অর্পণ করা হয়নি। এর ফলে সেবাপ্রার্থী মানুষদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
বাজুবাঘা ইউনিয়ন পরিষদে আগত সেবা প্রার্থীরা জানান, ইউনিয়ন পরিষদে প্রতিনিয়ত আমাদের বিভিন্ন কাজে আসতে হয়। চেয়ারম্যান কর্তৃক নাগরিক সনদ পত্র, জন্মনিবন্ধন, মৃত্যু সনদ,ওয়ারেসন সনদ ও নাগরিক প্রত্যয়ন-সহ বিভিন্ন বিষয়ে চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর দরকার হয়৷ কিন্তু মহামান্য হাইকোর্টে মামলা জনিত কারনে আমাদের চেয়ারম্যান তাঁর চেয়ারে বসতে পারছেন না। আমরা অবিলম্বে উক্ত মামলায় চেয়ারম্যানকে বসানোর আদেশ বহাল করার দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে এলাকার সুশীল সমাজের প্রতিনিধিগণ বলেন , স্থানীয় পর্যায়ে জনগণের সেবা কার্যক্রমে নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সরাসরি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা জড়িত। তাই সাধারণ জনগণের ভোগান্তি কমাতে দ্রুত সকল ইউনিয়ন পরিষদে প্রশাসক বাতিল করে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অথবা সুযোগ থাকলে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সতন্ত্র ইউপি চেয়ারম্যানদের বহাল করা আবশ্যক।
এ বিষয়ে বাজুবাঘা ইউপি চেয়ারম্যান ফিরোজ আহাম্মেদ রঞ্জু বলেন, আমি বিএনপির ভোটে নির্বাচিত চেয়ারম্যান। এলাকার মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করতে চাই। হতে চাই একজন সেবক। বর্তমানে মহামান্য হাইকোর্টের বিচারক আমার দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে প্রশাসক দিয়ে দায়িত্ব পালনের স্থগিত আদেশ দিয়েছেন। আশা করছি, সামনের তারিখে চেয়ারম্যান হিসাবে আমাকে দায়িত্ব ভার দিবেন। আমি দায়িত্ব পেলে জনগণ পুর্ণাঙ্গ সেবা পাবে।
বাঘা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাম্মি আক্তার বলেন, উপজেলা প্রশাসনে জনবল সংকোট থাকার কারণে আমরা ইউনিয়ন পরিষদে কাঙ্খিত সেবা দিতে পারছিনা। এ কারনে ব্যাপক জনবহুল এলাকা উপজেলার বাউসা ইউপিতে ইতোমধ্যে বিএনপি সমর্থীত একজন সদস্যকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বাজুবাঘা নিয়ে চেয়ারম্যান আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন। সেখান থেকে রায় পেলে খুব শীর্ঘই দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন।
এসআই