কাঁঠালিয়ার তিন ইউনিয়নে বিশুদ্ধ পানির অভাব, দুর্ভোগে অর্ধলক্ষ মানুষ

  • ঝালকাঠি প্রতিনিধি  | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মে ৬, ২০২৫, ০৯:২১ পিএম

ঝালকাঠি: উপকূলীয় জেলা ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ায় গভীর নলকূল সেট না হওয়ায় তিন ইউনিয়নের মানুষ বিশুদ্ধ পানি থেকে বঞ্চিত। 

গভীর নলকূপে অতিরিক্ত লবন পানি ওঠায় ওইসব ইউনিয়নে বসানো যাচ্ছেনা গভীর নলকূপ। যার ফলে উপজেলার ৬ ইউনিয়নের মধ্যে চেঁচরী রামপুর, পাটিখালঘাটা ও আমুয়া ইউনিয়নের মানুষ বাধ্য হয়েই বৃষ্টির পানি, পুকুর ও ডোবার পানি পান করছেন। 

রান্না, থালাবাসন ধোয়া, গোসলসহ আনুসঙ্গিক কাজ করতে হচ্ছে নোনা পানিতে। এ তিন ইউনিয়নের অর্ধলক্ষ মানুষ বছরের পর বছর ধরে সুপেয় পানির অভাবে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। এতে সারা বছর লেগেই আছে পানিবাহিত রোগ ব্যাধি। 

জানা গেছে, জেলার সর্ব দক্ষিণের কাঁঠালিয়া উপজেলার এই তিনটি ইউনিয়ন সাগরের কাছাকাছি হওয়ায় নলকূপে পানি ওঠে লবনাক্ত। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বরিশাল জোনালল্যাব একটি ইউনিয়নে পরীক্ষা চালিয়ে আড়াই হাজার থেকে ৩০০০ পিপিএম পর্যন্ত লবণাক্ততা শনাক্ত করে, যা মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর। 

১০০০ থেকে ১৫০০ পিপিএম পর্যন্ত লবণাক্ত পানি মানব দেহে সহনশীল। তাই স্থানীয় বাসিন্দারা বৃষ্টির মৌসুমে পানি ধরে রাখেন বড় ট্যাঙ্কিতে। সেই পানি শেষ হয়ে গেলে শুরু হয় সুপেয় পানির অভাব। দুর্গম এই এলাকার অল্প আয়ের মানুষ বছরের পর বছর ধরেই পুকুর ও ডেবার পানিতে ফিটকিরি অথবা ওষুধ দিয়ে পরিষ্কার করে পান করেন। যাদের সামর্থ্য নেই, তারা এ নোনা পানি দিয়ে রান্না, থালাবাসন ধোয়া ও গোসলের কাজ সারেন। 

কাঁঠালিয়া উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মো.সাইফুর রহমান জানান, তিনটি ইউনিয়নে অগভীর নলকূপ রয়েছে ৯৬টি, এর মধ্যে বেশির ভাগই অকেজো। আশির দশক থেকে এ পর্যন্ত সরকারিভাবে পুকুর পারে পানির ফিল্টার (পিএসএফ) স্থাপন করা হয় ১৭২টি। এগুলোর প্রায় সবই অকেজো। পরে লবনাক্ত দূরিকরণ প্লান্ট স্থাপন করে ৪টি, তাও নষ্টের পথে। 

[248864]

এ অবস্থায় মানব সম্পদ উন্নয়ণ প্রকল্পের আওতায় স্থান নির্বাচন করে পানি টেস্টে পাঠানো হয়েছে এবং ৬২ কিলোমিটার পাইপ লাইনের মাধ্যমে মানব সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প পাস হয়েছে পাইপ লাইনের মাধ্যমে উপজেলার চেচঁরী রামপুর ইউনিয়ন, আমুয়া ইউনিয়ন ও পাটিখালঘাটা ইউনিয়নে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হবে। 

চেঁচরী রামপুর ইউনিয়নের বানাই গ্রামের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য লাভলী বেগম বলেন, আমাদের ইউনিয়নে গভীর নলকূল বসানো যাচ্ছে না, দু’একটি বসানো গেলেও নোনা পানি ওঠে। আমরা বৃষ্টির পানি ধরে রেখে তা পান করি। এই পানি শেষ হয়ে গেলে পুকুর ও ডোবার পানি ফিটকিরি অথবা বিশুদ্ধকরণ ওষুধ দিয়ে ব্যবহার করি। অনেক সময় এসব পানি নষ্টও হয়ে যায়। যাদের সামর্থ্য নেই, তারা নোংড়া পানিই ব্যবহার করে। ফলে পানি বাহিত রোগ ব্যাধি লেগেই থাকে। 

পাটিখালঘাটা ইউনিয়নের আবদুর রশীদ বলেন, আমার বয়স এখন আশির কোটায়। সারাজীবনই বৃষ্টির পানি অথবা পুকুরের পানি পান করেছি, প্রতিবেশীদেরও এটা করতে দেখেছি। গোলস ও রান্নার কাজও করতে হচ্ছে এই পানি দিয়ে। সুপেয় পানির স্থায়ী ব্যবস্থার দাবি জানাচ্ছি সরকারের কাছে।   

পাটিখালঘাটা ইউনিয়ন পরিষদ প্যানেল চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল বলেন, অনেক আগে আমাদের ইউনিয়নে গভীর নলকূপ বসানোর পরীক্ষা করা হয়েছে। আমার মনে হচ্ছে এখন যদি আবারো পরীক্ষা করা হয়, তাহলে সুপেয় পানি আসেকিনা দেখা যেতো। সবাই আসলে এখনো বৃষ্টির পানি পান করছে, কেউ আবার পুকুর ও ডোবার পানির ওপরই নির্ভরশীল। এটা অত্যন্ত কষ্টদায়ক। আমরা সরকারের উচ্চমহলে বিষয়টি নিয়ে ভেবে দেখার অনুরোধ করছি, যাতে হাজার হাজার মানুষ সুপেয় পানি পায়। 

চেঁচরী রামপুর ইউনিয়ন পরিষদ প্যানেল চেয়ারম্যান সোহেল জমাদ্দার বলেন, আমাদের ইউনিয়নে কোথায় গভীর নলকূল বসানো যাচ্ছে না। সরকারের পক্ষ থেকে যেসব পিএসএফ ও লবনাক্ত দূরিকরণ প্লান্ট স্থাপন করা হয়েছে, তার বেশিরভাগই অকেজো। 

আমরা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সরকারে উচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ করেছি, সুপেয় পানির ব্যবস্থার জন্য। লবনাক্ত দূরিকরণ প্লান্ট সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি, এটা প্রতি ওয়ার্ডে দুটি করে স্থাপন করা হলে জনগণের পানির সমস্যা দূর হবে। এছাড়াও যদি ভালো কোনো পদ্ধতি থাকে, তা করার দাবি জানাচ্ছি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.জহিরুল ইসলাম বলেন, উপজেলার তিনটি ইউনিয়নেই সুপেয় পানির অভাব রয়েছে। মানুষ এখনো বৃষ্টির পানি ও পুকুরের পানি পান করাসহ অন্যান্য কাজে ব্যবহার করছেন। আমাদের পক্ষ থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করার নতুন একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। 

এটি প্রথমে উপজেলার চেচঁরী রামপুর, আমুয়া, পাটিখালঘাটা ইউনিয়নে বসানো হবে। পর্যায়ক্রমে এখান থেকে পানি বিভিন্ন ইউনিয়নে সরবরাহ করা হবে। তবে এ পানি নিতে হলে গ্রাহকদের সামান্য বিল দিতে হবে।

এআর