সে কি মানুষ, না পিশাচ?

  • জেলা প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: অক্টোবর ২০, ২০১৬, ১০:৩৫ পিএম

শেরপুর: শেরপুর সদর উপজেলার হদিপাড়া গ্রামের ঘটনা। ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরীর ওপর চলছিল যৌন নির্যাতন। মাসের পর মাস। লজ্জায় মুখ খুলছিল না মেয়েটি। এমনকি মাকেও বলতে পারেনি ভয়ে। কিন্তু এক পর্যায়ে ঘটনা ভয়াবহ পর্যায়ে চলে যায়।

শরীরে অন্যরকম লক্ষণ দেখতে পান মেয়েটির মা। নানাভাবে প্রশ্ন করেও কুলকিনারা করতে পারছিলেন না। অবশেষে মেয়েটিকে নিয়ে যান ডাক্তারের কাছে। ডাক্তার পরীক্ষা করে যা বললেন তা শোনা বা বলার মতো কথা নয়। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো মায়ের।

ক্ষোভ-বিস্ময়ের ঘোর কেটে মা সোজা চলে যান থানায়। মেয়ের ধর্ষণকারীর বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। এরপর পুলিশ অভিযান চালায় মামলার বাদীর বাড়িতেই। কারণ মামলার আসামি আর কেউ নয়, বাদীর স্বামী। পুলিশ আসার খবরে ‍যিনি বাড়ি থেকে উধাও হয়ে গেছেন।

আসামি হানিফ উদ্দিন (৪২) শেরপুর সদর উপজেলার চরশেরপুর ইউনিয়নের ধোবাঘাট এলাকার মৃত আব্দুল খালেকের ছেলে।

মামলার বাদী কিশোরীর মা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার স্বামী চরিত্রহীন-লম্পট, এটা জানতাম। কিন্তু নিজের ঔরসজাত সন্তানের সঙ্গে এ রকম করবে ভাববার পারি নাই। মেয়েটির শরীরের লক্ষণ অন্যরকম দেখতে পাইয়া আমরা ওকে চাপ দিলে সে বাপের অপকর্মের কথা জানায়।’

শেরপুর সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জীবন চন্দ্র বর্মণ জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ১৯ অক্টোবর রাতে কিশোরীকে বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় পুলিশের অবস্থান টের পেয়ে লম্পট বাবা হানিফ পালিয়ে যায়। আজ বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) বিকেলে ডাক্তারি পরীক্ষা শেষে কিশোরীকে ২২ ধারায় জবানবন্দির জন্য আদালতে পাঠানো হয়। সে বাবার অপকর্মের বিষয়টি আদালতে স্বীকার করেছে।

শেরপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. আব্দুল মোবারক হোসেন জানান, কিশোরীর বক্তব্য অনুযায়ী তার বাবার হাতে সে ধর্ষিতা হয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় মনে হয়েছে সে ৬ মাসের গর্ভবতী। তবে ডিএনএ টেস্টে সবকিছু পরিষ্কার হবে।

কিশোরীটি সাংবাদিকদের জানায়, বছর খানেক আগে বাবা তাকে ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ করেন। তারপর থেকে মাঝে মধ্যেই তাকে ধর্ষণ করে আসছিল। লজ্জায়, ভয়ে এ কথা কাউকে বলে বলার সাহস পায়নি। অনেক চেষ্টা করেও নিজের বাবার হাত থেকে রেহাই পায়নি সে।

আসামি হানিফ কৃষি শ্রমিকের কাজ করেন। পেশায় দিনমজুর। স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে একটি চিনের চালা ঘরে সবাই মিলে বাস করেন।

শেরপুরের সহকারী পুলিশ সুপার লাবনী খন্দকার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘এসব কথা বলতেও ঘৃণা লাগে। এই লোক মানুষ নয়, নরপিশাচ। মেয়েটির মা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে থানায় মামলা করেছেন। ওই শয়তানকে ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে। 

সোনালীনিউজ/এমএম