চুয়াডাঙ্গা জেলায় ছোঁয়াচে চর্মরোগ স্ক্যাবিস বা খোসপাঁচড়া ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিদিনই সদর হাসপাতালে ভিড় করছেন শত শত আক্রান্ত রোগী। শিশু থেকে বৃদ্ধ-সব বয়সের মানুষই এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। একবার পরিবারের একজন আক্রান্ত হলে কয়েক দিনের মধ্যে পুরো পরিবারে ছড়িয়ে পড়ছে সংক্রমণ।
বুধবার সকালে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, পুরোনো ভবনের দ্বিতীয় তলার করিডোর ও বারান্দাজুড়ে রোগীদের উপচে পড়া ভিড়। চিকিৎসকের কক্ষের সামনে দীর্ঘ লাইন। হাসপাতাল সূত্র বলছে, প্রতিদিন গড়ে ১৫০ থেকে ২০০ জন রোগী শুধুমাত্র খোসপাঁচড়ার চিকিৎসা নিতে আসছেন।
তবে এত রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। নেই পর্যাপ্ত ওষুধ। মজুত আছে শুধু সামান্য পরিমাণ হিস্টাসিন ট্যাবলেট। ফলে অধিকাংশ রোগীকেই বাইরে থেকে লোশন, ক্রিমসহ অন্যান্য ওষুধ কিনতে হচ্ছে। এতে করে নিম্নআয়ের মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
চুয়াডাঙ্গার পারভীনা খাতুন নামে এক রোগী জানান, প্রথমে হাতে চুলকানি শুরু হয়, পরে তা সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। গায়ে ছোট ছোট লাল ফুসকুড়ি ওঠে, চুলকানি অসহ্য হয়ে যায়। শেষে শরীরে ব্যথাও শুরু হয়। অন্যদিকে হাসেম আলী নামের আরেক রোগী বলেন, এই রোগে রাতে চুলকানি অনেক বেড়ে যায়। চুলকাতে চুলকাতে ক্ষত হয়ে যায়, তখন সংক্রমণ আরও বাড়ে। কিন্তু হাসপাতালে ওষুধ না থাকায় বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে, যা কষ্টসাধ্য।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, স্ক্যাবিস অত্যন্ত ছোঁয়াচে চর্মরোগ। এটি একজনের শরীর থেকে আরেকজনের শরীরে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তবে রোগটি প্রতিরোধযোগ্য, যদি সময়মতো ও সঠিক চিকিৎসা নেওয়া হয়। শুধু আক্রান্ত ব্যক্তি নয়, পরিবারের সব সদস্যকে একসঙ্গে চিকিৎসা নিতে হবে। তা না হলে সংক্রমণ বারবার ফিরে আসবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্ক্যাবিসের প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে হাতের আঙুলের ফাঁকে বা পায়ের চামড়ায় তীব্র চুলকানি দেখা দেয়। পরে তা সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। গায়ে লাল ফুসকুড়ি দেখা দেয় এবং অতিরিক্ত চুলকানিতে ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে। সেখানে আবার দ্বিতীয়বার সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে।
চিকিৎসকদের মতে, আগে এই রোগ মূলত গরমের সময় দেখা গেলেও এখন সারা বছরই দেখা যাচ্ছে। সময়মতো চিকিৎসা না নিলে তা জটিল আকার নিতে পারে, এমনকি কিডনি সমস্যাও হতে পারে।
রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে জরুরি ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা। নিয়মিত হাত ধোয়া, পরিষ্কার কাপড় পরা, আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
তাঁদের মতে, স্ক্যাবিস ভয়াবহ নয়, তবে অবহেলা করলে তা পরিবার ও সমাজজুড়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই সচেতনতা ও সময়মতো চিকিৎসাই এখন সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ ব্যবস্থা।
এসএইচ