মোড়ে মোড়ে জমজমাট পিঠার হাট, স্বাবলম্বী হচ্ছে বহু পরিবার

  • রাজশাহী ব্যুরো | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: অক্টোবর ২১, ২০২৫, ১১:২৩ এএম

বাঙালির চিরচেনা ঐতিহ্যবাহী খাবার পিঠা এখন আর শুধু শীতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। হেমন্তের শুরুতেই রাজশাহী নগরীর মোড়ে মোড়ে ভেসে আসছে গরম ভাপা ও চিতই পিঠার সুবাস। সন্ধ্যা নামতেই রাজশাহীর সাহেববাজার, লক্ষ্মীপুর, বিন্দুর মোড়, ভদ্রা, নওদাপাড়া, আমচত্বরসহ বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয় পিঠার হাট। এছাড়া নগরীর সংলগ্ন পবা উপজেলার বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে পাতিল নিয়ে বসে গরম গরম পিঠা তৈরি করছেন নিম্নবিত্ত পরিবারের নারী পুরুষ। এই পিঠা ব্যবসাই তাদের একমাত্র আয়ের উৎস। পিঠা বানিয়েই স্বাবলম্বী হচ্ছেন অনেক পরিবার।

আগে যেখানে গ্রাম-গঞ্জের ঘরে ঘরে শীত এলেই চাল গুঁড়ো করার শব্দে মুখরিত থাকত রাত, এখন শহরের গলিতেও চলছে পিঠা তৈরির ব্যস্ততা। মৌসুমি এসব পিঠা বিক্রেতারা কেউ দোকান সাজিয়েছেন ছোট চুলা নিয়ে, কেউ আবার বানিয়েছেন ভাসমান দু’চাকার গাড়ি। চিতই, ভাপা, নারিকেল ও তেলের পিঠার পাশাপাশি থাকছে নানা স্বাদের ভর্তা—শুঁটকি, সরিষা, ধনিয়া পাতা, লাল ও কাঁচা মরিচ, এমনকি কালোজিরার ভর্তা। যা দেখলেই জিভে জল এসে যায় ক্রেতাদের।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শীতকালজুড়ে পিঠার ব্যাপক চাহিদা দেখা যায়। শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় থাকে এসব পিঠা, ফলে ক্যাম্পাসে বসে যায় ছোট ছোট পিঠার দোকান।

পিঠা ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের বেশিরভাগই নিম্নআয়ের মানুষ। অনেকে অন্য সময় রিকশা চালান বা গৃহকর্মীর কাজ করেন, কিন্তু শীতের মৌসুমে পিঠা বিক্রিই হয় তাদের মূল আয়ের উৎস। শহরের জাহাজঘাট মোড়ে পঞ্চাশোর্ধ মোতালেব হোসেন আট বছর ধরে ভাপা পিঠা বিক্রি করছেন।

তিনি বলেন, শীতের পিঠার ব্যবসায় ভালো লাভ হয়। এই সময় অন্য কাজ বাদ দিয়ে পিঠার ব্যবসাতেই মন দিই।

আমচত্বরে পিঠা বিক্রি করেন খোদেজান। তিনি জানান, “প্রতিদিন ৪০০-৫০০ টাকার পিঠা বিক্রি হয়, তাতেই সংসার চলে।” একইভাবে সাইফুল ইসলাম দিনে রিকশা চালান, সন্ধ্যায় স্ত্রী সালমার বানানো চালের গুঁড়ি ও নারিকেল দিয়ে পিঠা বিক্রি করেন। তাদের দৈনিক বিক্রি ১,৫০০ থেকে ১,৭০০ টাকা, লাভ থাকে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকার মতো।

ফিরোজাবাদ এলাকার বিমান চত্বরে মুসলিমা বেগম চিতই পিঠা বিক্রি করেন। আগে তিনি গৃহকর্মীর কাজ করতেন, কিন্তু অনিয়মিত পারিশ্রমিকের কারণে এখন নিজের ব্যবসা করছেন। তিনি বলেন, “এখন আর কারও মুখাপেক্ষী নই। নিজের হাতে বানানো পিঠা দিয়েই সংসার চলছে।”

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী প্রান্ত কুমার দাস বলেন, “শীত এলেই ক্যাম্পাসে পিঠার উৎসব শুরু হয়। এটা এখন আমাদের সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে।”

রাজশাহীর আনাচে-কানাচে হেমন্তের শুরুতেই যেভাবে পিঠার গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে, তা যেন শীতের আগমনবার্তাই জানিয়ে দিচ্ছে। শুধু স্বাদের উৎসব নয়, পিঠা এখন অনেক পরিবারের অর্থনৈতিক স্বাবলম্বনের প্রতীকও হয়ে উঠেছে। হেমন্তের এই পিঠার সুবাসই রাজশাহীর মানুষকে মনে করিয়ে দিচ্ছে শীত আসছে, আর সঙ্গে আসছে বাঙালির পিঠার উৎসব।

এম