বরগুনায় ষাটের দশকে নির্মিত বেড়িবাঁধ, স্লুইস এখন গলারকাঁটা 

  • তাপস মাহমুদ, বরগুনা | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: নভেম্বর ৬, ২০২৫, ০৯:৪১ এএম

উপর্যুপুরি ভাঙ্গনের কবলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বরগুনা সদর উপজেলার ৯নং এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম। ইউনিয়নের পালের বালিয়াতলী, ছোট বালিয়াতলী, লতাকাটা, শশাতলী, চালিতাতলী, ফালিসাতলী, উরবুনিয়া, চারাভাঙ্গা, ঝিনইবাড়িয়া, জেলখানা এলাকা পায়রা নদীর ভাঙ্গনের কবলে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ফসলি জমি, মানুষের বাড়িঘর, জীবন জীবিকা নদী গর্ভে হারিয়ে যাওয়ায় নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে শত শত মানুষ। 

সাগর মোহনার কাছাকাছি অবস্থান এম বালিয়াতলী ইউনিয়ন। মোহনার তিন নদী পায়রা, বিষখালী আর বলেশ্বর নদী। এই তিন নদীর মধ্যে খরস্রোতা পায়রা নদীর দুই পাড়ে মোহনার কাছে রাক্ষসী তাণ্ডবে বিলিন হচ্ছে মাইলের পর মাইল এলাকা জুড়ে। বর্তমানে নদীর প্রবল ভাঙ্গনে এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের কয়েক মাইল জুড়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে গ্রামবাসী। 

ইউনিয়নটির ফালিসাতলী থেক শুরু করে জেলখানা গ্রাম পর্যন্ত সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার মধ্যে রয়েছে। ২০০৭ সালের প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় সিডররে তাণ্ডবে ও জলোচ্ছ্বাসে বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় গ্রামের পর গ্রাম। জলোচ্ছ্বাসের প্রবল পানির স্রোত ভেসে যায় বহু নারী পুরুষ সহ অনেক গবাদি পশু। পরদিন দেখা যায় অগণিত মানুষের লাশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সিডরের পর জরুরি রক্ষনাবেক্ষন হিসেবে কিছু যায়গায় মেরামত হলেও তাও বিলীন হয়ে যায় জলোচ্ছ্বাস আর অতি জোয়ারে। পরবর্তীতে কোন রকম বাঁধ নির্মাণ হলেও আজও হয়নি টিকসই বেড়িবাঁধ। 

উরবুনিয়া গ্রামের আ. ছালাম বলেন, ‘সিগনাল দেয়া হলে মনের ভিতর মোচর দিয়ে ওঠে। কখন জানি বেড়িবাঁধ ছুটে পানি ঢুকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। যখন ঝড়ের সিগনাল পড়ে তখন এরা এসে বলে নিরাপদ স্থানে যান। মেম্বার চেয়ারম্যানরা বলে এবারই উঁচু বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হবে। সদরে স্যারদের সঙ্গে আলোচনা করে এই সমস্যার সমাধান করা হবে। ঝড় শেষ, বইন্যা শেষ আলোচনাও শেষ। চাড়াভাঙ্গা গ্রামের রাশেদা বেগম বলেন সিডরে বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আজ পর্যন্ত এক চাকা মাটি ফালানো হয় নাই। এই রাস্তায় কোন গাড়ি চলেনা।’

সম্প্রতি ইউনিয়নের জেলখানা গ্রামে সোনালী যুব সংসদের উদ্যোগে গ্রামটির চরম দুরবস্থা তুলে ধরে করা হয় মানববন্ধন। মানববন্ধনে ১৩ দফা দাবীর মধ্যে তুলে ধরা হয় পায়রা নদীর ভাঙ্গন রোধে ব্যবস্হা নেয়া ও গ্রামটিতে একটি সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণের।

গত মঙ্গলবার ৪ নভেম্বর বিকেলে ইউনিয়নের ভাঙ্গন কবলিত গ্রামগুলোর ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ এবং স্লুইসগেট পরিদর্শন করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল হান্নান প্রধান। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসডিই শওকত ইকবাল মেহরাজ, এসও মো. স্বপন হোসেন, ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) এর বরগুনা শাখার সদস্য সচিব মুশফিক আরিফ প্রমূখ।

ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করতে গিয়ে বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল হান্নান বলেন, এখানকার স্লুইস ও বেড়িবাঁধ ষাটের দশকের নির্মিত। এই অবস্থায় এগুলো ঝুঁকিতে রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন জনিত বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় স্বল্প মেয়াদী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাধ সমূহ মেরামত এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পুরো পোল্ডারের প্রায় ৩৯ কিলোমিটার বেরিবাধসহ বিদ্যামান ও প্রয়োজন নতুন স্লুইস, রেগুলেটর এবং সিসিব্লক দিয়ে ভাঙ্গন রক্ষায় নিমিত্তে ফিসিবিলিটি স্টাডি করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এম