চট্টগ্রামে তৈরি তিন ল্যান্ডিং ক্রাফট যাচ্ছে আরব আমিরাতে

  • সাইফুল ইসলাম, চট্টগ্রাম ব্যুরো | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: নভেম্বর ২০, ২০২৫, ০৪:১৩ পিএম

দেশের অন্যতম জাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড লিমিটেড আবারও রপ্তানিতে গতি ফিরে পেয়েছে। চট্টগ্রামে নির্মিত ‘মায়া’, ‘এমি’ ও ‘মুনা’ নামে তিনটি ল্যান্ডিং ক্রাফট সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক মারওয়ান শিপিং অ্যান্ড ট্রেডিং কোম্পানি লিমিটেডের কাছে বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হচ্ছে।

প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, জাহাজ তিনটি সম্পূর্ণরূপে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী নির্মিত হয়েছে। এগুলো অফশোর সাপ্লাই, মালবাহী পরিবহনসহ সমুদ্রবাণিজ্যের বিভিন্ন কার্যক্রমে ব্যবহারযোগ্য। হস্তান্তরের পর জাহাজগুলো আরব আমিরাতের উদ্দেশে যাত্রা করবে।

প্রতিটি ল্যান্ডিং ক্রাফটের দৈর্ঘ্য ৬৯ মিটার, প্রস্থ ১৬ মিটার ও ড্রাফট ৩ মিটার। আন্তর্জাতিক ক্ল্যাসিফিকেশন সোসাইটি ব্যুরো ভিটাসের মান বজায় রেখে নির্মিত জাহাজগুলো ১০ নটিক্যাল মাইল গতিতে চলতে সক্ষম। প্রায় ৭০০ বর্গমিটার ক্লিয়ার ডেক স্পেস থাকায় ভারী যন্ত্রপাতি ও বাল্ক কার্গো পরিবহনে উপযোগী।

জাহাজগুলোতে রয়েছে দুটি ইয়ানমার মূল ইঞ্জিন, ইলেকট্রো-হাইড্রোলিক র‍্যাম্প উইঞ্চ, ২৪ মিলিমিটার স্টিল ওয়্যার রোপ, উন্নত অ্যাঙ্করিং ও হাইড্রোলিক স্টিয়ারিং ব্যবস্থা। নেভিগেশনের জন্য ইনস্টল করা হয়েছে সিমরাড এস৩০০৯ ইকো সাউন্ডার, ফুরুনো জিপি-৩৯ জিপিএস, নেভিট্রন এনটি-৮৮৮৬ অটোপাইলট, রাডারসহ আন্তর্জাতিক মানের কমিউনিকেশন সিস্টেম।

চলতি বছর ওয়েস্টার্ন মেরিন মোট ছয়টি জাহাজ রপ্তানি করছে। বছরের শুরুতে ‘রায়ান’ নামে একটি ল্যান্ডিং ক্রাফট এবং জুলাইয়ে ‘খালিদ’ ও ‘ঘায়া’ নামে দুটি টাগবোট রপ্তানি করা হয়েছিল। প্রতিষ্ঠানটির এটি ৩৯তম আন্তর্জাতিক রপ্তানি।

ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন সোহেল হাসান বলেন, “গত বছর মারওয়ান শিপিংয়ের কাছ থেকে আটটি জাহাজ নির্মাণের বড় অর্ডার পাই। এর মধ্যে তিনটি টাগবোট ও ল্যান্ডিং ক্রাফট হস্তান্তর করা হয়েছে। এবার আরও তিনটি ল্যান্ডিং ক্রাফট হস্তান্তর করছি। আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশি জাহাজের চাহিদা আবারও বাড়ছে—এটি পুরো শিল্পের জন্য বড় অর্জন।”

ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (কমার্শিয়াল) শহিদুল বাশার জানান, বর্তমান বাজারদরে প্রতিটি ল্যান্ডিং ক্রাফট নির্মাণে খরচ পড়ে ৭ থেকে ৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে এই তিনটি জাহাজের ক্ষেত্রে কেবল ‘ওয়ার্কম্যানশিপ’ বাবদ ক্রেতা ২.২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিশোধ করেছে। এক বছরেরও কম সময়ে নির্মাণ শেষ করে হস্তান্তরের পর্যায়ে আনা হয়েছে।

ওয়েস্টার্ন মেরিন ২০১০ সালে প্রথমবার জাহাজ রপ্তানি শুরু করে। ২০২০ সাল পর্যন্ত ১১টি দেশে মোট ৩৩টি জাহাজ রপ্তানি করা হয়েছিল। মহামারিসহ নানা কারণে ২০২০ সালের পর টানা চার বছর রপ্তানি থমকে ছিল। ২০২৩ সালে মারওয়ান শিপিংয়ের আটটি জাহাজ নির্মাণের অর্ডার পাওয়ার পর রপ্তানি আবারও গতি পেয়েছে।

চুক্তি অনুযায়ী, মোট আটটি জাহাজের মধ্যে রয়েছে দুটি টাগবোট, চারটি ল্যান্ডিং ক্রাফট এবং দুটি অয়েল ট্যাংকার। এর মধ্যে চারটি ল্যান্ডিং ক্রাফট ও দুটি টাগবোট চলতি বছরই রপ্তানি হচ্ছে। দুটি অয়েল ট্যাংকার ২০২৬ সালের মধ্যে হস্তান্তরের কথা রয়েছে।

এ পর্যন্ত ১১টি দেশে বিভিন্ন ধরনের ৩৬টি জাহাজ রপ্তানি করেছে ওয়েস্টার্ন মেরিন, যার বাজারমূল্য ১৩৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি। ২০১৭ সালে মারওয়ান শিপিংয়ের কাছে প্রথম জাহাজ রপ্তানি করেছিল প্রতিষ্ঠানটি।


এসএইচ