শরীয়তপুর সদর উপজেলার নিয়ামতপুর গ্রামে এক বীর মুক্তিযোদ্ধার কবরে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সোমবার দিবাগত রাতে দুর্বৃত্তরা কবরের ওপর কাঠ জড়ো করে আগুন ধরিয়ে পালিয়ে যায় বলে জানিয়েছে নিহত মুক্তিযোদ্ধার পরিবার।
গ্রামবাসীর ভাষ্য অনুযায়ী, শরীয়তপুর সদর উপজেলার আংগারীয়া ইউনিয়নের নিয়ামতপুর গ্রামের বাসিন্দা আ. মান্নান খান ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেন। তিনি ২০১০ সালের ৮ জানুয়ারি মারা যান। পরিবারের বসতঘরের পাশেই তাকে দাফন করা হয়।
পরিবারের সদস্যরা জানান, সোমবার রাতে কবরের ওপর রাখা কাঠে আগুন দেওয়া হয়। মঙ্গলবার সকালে প্রতিদিনের মতো স্বামীর কবরের পাশে গেলে আগুন দেওয়ার চিহ্ন দেখতে পান তার স্ত্রী মাহফুজা বেগম। কবরের একটি অংশজুড়ে ছাই পড়ে ছিল এবং তখনো সেখান থেকে হালকা ধোঁয়া বের হচ্ছিল। তার চিৎকারে পরিবারের অন্য সদস্যরা ছুটে আসেন।
আ. মান্নানের মেয়ে আফরোজা আক্তার বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধাদের জানান। তিনি বলেন, ঘটনাটি দেখে পরিবার মর্মাহত ও শঙ্কিত হয়ে পড়েছে। কী উদ্দেশ্যে এমন কাজ করা হয়েছে, তা তারা বুঝতে পারছেন না।
খবর পেয়ে শরীয়তপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইলোরা ইয়াসমিন জানান, একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার কবরে আগুন দেওয়ার বিষয়টি তিনি শুনেছেন। বিজয় দিবসের কর্মসূচি শেষে ঘটনাস্থলে লোক পাঠিয়ে বিস্তারিত খোঁজ নেওয়া হবে।
মঙ্গলবার সকালে নিয়ামতপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, কবরের পাশে স্বজন ও এলাকাবাসীর ভিড়। কাঁদছিলেন মাহফুজা বেগম। তিনি বলেন, তার স্বামী মুক্তিযোদ্ধা হওয়ায় পরিবার ও গ্রামবাসী গর্বিত। এমন অবমাননাকর ঘটনা তিনি মেনে নিতে পারছেন না। বিজয় দিবসের আনন্দের দিনে পুরো পরিবার শোক ও বেদনায় ভেঙে পড়েছে।
শরীয়তপুর সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের আহ্বায়ক আবদুল আজিজ সিকদার জানান, ঘটনাটি উদ্বেগজনক। মুক্তিযোদ্ধারা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে করণীয় ঠিক করবেন।
জেলা প্রশাসক তাহসিনা বেগম বলেন, তিনি ঘটনাটি সম্পর্কে খোঁজ নিচ্ছেন। পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিজয়ের মাসে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার কবর অবমাননার এই ঘটনা এলাকায় ক্ষোভ ও উৎকণ্ঠা তৈরি করেছে।
এসএইচ