এডওয়ার্ড কলেজ শিক্ষকের অপসারণ দাবিতে বিক্ষোভ

  • পাবনা প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৪, ২০১৬, ০৫:৫৫ পিএম

পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক খন্দকার সিরাজুল ইসলাম ওরফে মুরাদের স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম, দুর্নীতি ও নারী কেলেঙ্কারির শাস্তির দাবিতে ফুঁসে উঠেছে সর্বস্তরের শিক্ষার্থীরা। শনিবার ওই শিক্ষকের অপসাররণ দাবি করে বিক্ষোভ মিছিল, অধ্যক্ষকে অবরুদ্ধ ও ভাঙচুর করে আন্দোলনকারীরা।

নানা অভিযোগে দ্রুত সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ থেকে অন্যত্র বদলি হওয়ার জন্যে কলেজ কর্তৃপক্ষ খন্দকার সিরাজুল ইসলাম মুরাদকে বলার পরও রোববার (৪ ডিসেম্বর) সকালে কলেজ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করা মাত্র বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা তাকে ধাওয়া দিলে দৌঁড়ে পালিয়ে আত্মরক্ষা করে হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক খন্দকার সিরাজুল ইসলাম মুরাদ। মুহূর্তের মধ্যেই নানা অপকর্মের হোতা ও নারী কেলেঙ্কারি শিক্ষক এই মুরাদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে শিক্ষার্থীরা। এরই এক পর্যায়ে দুপুর ১২টায় পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. হুমায়ুন কবির মজুমদারকে অবরুদ্ধ করে তালা ঝুলিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। পরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ ও ভাঙচুর শুরু করে।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে এই আন্দোলনের ঘোষণা করে ছাত্রলীগের কলেজ শাখার সভাপতি তাজুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানার নেতৃত্বে নেতা-কর্মীরা আন্দোলনে অংশ নেন। এদিকে খবর পেয়ে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শিবলী সাদিক বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মীদের নিয়ে দুপুর সোয়া ১টার দিকে কলেজ ক্যাম্পাসে গিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে সমর্থন জানান।

সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. হুমায়ুন কবির মজুমদার অবরুদ্ধ অবস্থায় মুঠোফোনে সাংবাদিকদের জানান, কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক খন্দকার সিরাজুল ইসলাম মুরাদের নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও চারিত্রিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা সোচ্চার হয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে। পরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা আমার অফিস কক্ষে তালা ঝুলিয়ে আমাকে প্রায় ২ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে। দুপুর দেড়টায় অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার আশ্বাস দিলে ছাত্রলীগের জেলা নেতৃবৃন্দের অধ্যক্ষকে অবরুদ্ধ থেকে মুক্তি দিয়ে আন্দোলন অব্যাহত রাখেন।

কলেজ ও বিশ্বস্ত একাধিক সূত্রে জানা গেছে, হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের সহকারি অধ্যাপক খন্দকার সিরাজুল ইসলাম মুরাদ বারবার নানা ধরনের অপকর্ম, অনিয়ম, দুর্নীতি ও নারী কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটানোর পরও অদৃশ্য শক্তির বলে এ কলেজ থেকে বদলি করার পরও সে পুনরায় এই কলেজেই চলে আসেন এবং  বহাল তবিয়তে নানা অপকর্ম চালিয়ে যান।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যখন যে দল ক্ষমতায় আসে, তখন সে ওই দলের ক্ষমতাধরদের সাথে হাত মিলিয়ে অপকর্মের গডফাদারে পরিণত হন। পরীক্ষা হলে পরীক্ষার্থীদের অর্থের বিনিময়ে নকলের অবাধ সুযোগ করে দেয়া জাল সার্টিফিকেট তৈরি করা, মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন দপ্তরে চাকরি দেয়া, ক্ষমতা ও পেশীশক্তি প্রয়োগ করে চাহিদামাফিক কাজ বাগিয়ে নেয়া, প্রাইভেট পড়ানোর আড়ালে ছাত্রীদের সাথে নানা আপত্তিকর ছবি তোলা, অনৈতিক সম্পর্কে জড়ানোসহ নানা অপকর্মের সাথে তিনি যুক্ত বলে অভিযোগ রয়েছে।

একাধিক শিক্ষার্থীর সাথে আলাপকালে তারা জানান, ৩/৪ দিন আগে তার এক ছাত্রীর সাথে শহরের একটি হোটেলে আপত্তিকর অবস্থায় ধরা পড়ার পড় গণধোলাইয়ের শিকার হন। এছাড়াও তিনি প্রাইভেট পড়ানোর আড়ালে বিভিন্ন সময়ে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে পরীক্ষায় অতিরিক্ত নম্বর পাইয়ে দেয়া, ফাইনাল পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস করে দেয়াসহ নানা প্রলোভন দেখিয়ে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা জানান, বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় নকল সরবরাহ করা, প্রশ্নপত্র ফাঁস করে মোটা অংকের বিনিময়ে বিক্রি করাসহ একের পর এক অপরাধ করে যাচ্ছে, অথচ কর্তৃপক্ষ নির্বিকার ভূমিকা পালন করছেন।

ছাত্রলীগের কলেজ শাখার সভাপতি তাজুল ইসলাম দুপুর দেড়টায় বলেন, অধ্যক্ষ স্যারকে অবরুদ্ধ থেকে মুক্ত করা হয়েছে। একই সাথে তাকে আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছে রোববারের মধ্যে নানা অপকর্ম ও নারী কেলেঙ্কারির হোতা খন্দকার সিরাজুল ইসলাম মুরাদকে অপসারণ করতে হবে। অন্যথায় আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবো।

সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ড. একেএম শওকত আলী জানান, গত ২৭ নভেম্বর ষ্টাফ কাউন্সিলে শিক্ষক খন্দকার সিরাজুল ইসলাম মুরাদের বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগের প্রেক্ষিতে জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে অনৈতিক কাজে লিপ্ত ভিডিও ক্লিপের আলোকে কলেজের সকল শিক্ষকদের মতামতের প্রেক্ষিতে ওইদিন থেকে ৭ দিনের মধ্যে অন্য কলেজে বদলি নেবেন বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী ৭ দিনের মধ্যে শিক্ষক মুরাদ এই কলেজ থেকে বদলি না নিলে তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর