১৬ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি ধানসিঁড়ি ইকো পার্ক প্রকল্প

  • ঝালকাঠি সংবাদদাতা | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মার্চ ১৭, ২০১৭, ০১:০০ পিএম

ঝালকাঠি: জেলার গাবখান-ধানসিঁড়ি-সুগন্ধা-বিষখালী-বাসন্ডা নদীর মোহনায় জেগে ওঠা চরে ‘ধানসিঁড়ি ন্যাশনাল ইকো পার্ক প্রকল্পটি’ প্রস্তাব করা হয় ২০০২ সালে। উদ্দেশ্য ছিল, দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য বিভিন্ন সুবিধা সংবলিত একটি আধুনিক পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণ করা। কিন্তু এর পর ১৬ বছর পেরিয়ে গেলেও নানা জটিলতায় প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখেনি। অভিযোগ রয়েছে, ভূমি ও বন মন্ত্রণালয়ের মধ্যকার জটিলতায় এ প্রকল্পের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে স্থানীয় ভূমিগ্রাসদের মামলা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ঝালকাঠি শহরের অদূরে পাঁচ নদীর মোহনায় জেগে ওঠা চরের প্রায় ৫০ একর খাস জমিতে ইকো পার্ক স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়। যা বাস্তবায়ন করার কথা ছিল বন বিভাগের। সূত্রমতে, প্রস্তাবিত এ পার্কে রেস্ট হাউজ, প্যাডেল বোট, গাড়ি পার্কিংয়ের স্থান, তথ্যকেন্দ্র, বিভিন্ন পশুপাখির ভাস্কর্য, বাগান, নদীর গাইড ওয়াল, বাঁধানো ঘাট, বিভিন্ন দুর্লভ প্রজাতির গাছ ও অভ্যন্তরীণ ছোট ছোট সড়ক থাকার কথা ছিল। বিগত ৪ দলীয় জোট সরকারের আমলে একনেক সভায় প্রকল্পটি জাতীয় পার্ক হিসেবে অনুমোদনও পায়। কিন্তু এর পরই জমির দাম নিয়ে ভূমি ও বন অধিদপ্তরের মধ্যে সংকট তৈরি হয়। ওই সময় ভূমি অধিদপ্তর জমির মূল্য ১৮ কোটি টাকা নির্ধারণ করে, যা দিতে অস্বীকার করে বন বিভাগ।

এরই মধ্যে বালি দিয়ে ভরাট করা হয় প্রকল্প এলাকা। এর পর ২০০৭-০৮ অর্থবছরে প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ করা হয় ৪ কোটি টাকা। কিন্তু প্রকল্প এলাকার ৩৫ একর জমির মালিকানা দাবি করে একটি চক্র মামলা দায়ের করে। এতে আটকে যায় প্রকল্পের কাজ। ফলে আদালতের নিষেধাজ্ঞায় বরাদ্দকৃত ওই অর্থ অব্যবহারিত অবস্থায় ফেরত যায়।
এ বিষয়ে কথা হলে ধানসিঁড়ি ইকো পার্ক প্রকল্পের উদ্যোক্তা ঝালকাঠির তৎকালীন জেলা প্রশাসক পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় ব্যাংকের বর্তমান চেয়ারম্যান মিহির কান্তি মজুমদার বলেন, এ ইকো পার্ক নির্মাণ করা গেলে এখানে দেশ-বিদেশের পর্যটকরা আসতেন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে স্থানীয় কিছু অসৎ লোক প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বাধা দিচ্ছে। তারা মিথ্যা মামলা দিয়ে প্রকল্পটি আটকে দিচ্ছে।

তিনি আরও জানান, বরগুনা ও পিরোজপুরে বন বিভাগ একই ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। সেখানে কোনো সমস্যা হয়নি। কিন্তু ঝালকাঠিতে ভূমি মন্ত্রণালয় ওই জমির জন্য ১৮ কোটি টাকা দাবি করেছে।

জানা যায়, প্রকল্প এলাকার বেশকিছু জায়গায় বনায়ন বা কোনো অবকাঠামো নির্মাণের ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে একটি স্বার্থান্বেষী মহল ঝালকাঠির যুগ্ম জেলা জজ প্রথম আদালতে মামলা দায়ের করে। এ মামলায় প্রকল্প কাজের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন আদালত।

এ অবস্থায় আটকে যাওয়া প্রকল্পটি আদৌ আলোর মুখ দেখবে কিনা, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে ভূমিগ্রাসী চক্রটি প্রকল্পটির বিপুল পরিমাণ জমি আত্মসাতের চেষ্টা করে যাচ্ছে। অন্যদিকে দীর্ঘদিন অরক্ষিত থাকায় স্থানটি মাদকসেবীদের অসামাজিক কার্যকলাপের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। আর স্থানীয় ও জেলা প্রশাসন বিষয়টি জানলেও তা প্রতিরোধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।

এ বিষয়ে ঝালকাঠির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. জাকির হোসেন জানান, বিশাল ওই এলাকাটি দীর্ঘদিন অরক্ষিত থাকায় সেখানে অসামাজিক কার্যকলাপ হওয়া অসম্ভব নয়।

পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ধানসিঁড়ি ইকো পার্ক বাস্তবায়নে অনুমতি প্রদানের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়া হয়েছিল। এতে ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে জেলা প্রশাসকের কাছে এ বিষয়ে প্রতিবেদন চাওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন ২০১০ সালে ভূমি মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দাখিল করে।

ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, আদালতের স্থগিতাদেশ থাকা অবস্থায় এখানে কোনো বনায়ন বা অবকাঠামো নির্মাণ করা সম্ভব নয়। সব মামলা নিষ্পত্তি হলে সেখানে প্রস্তাবিত ইকো পার্ক নির্মাণ করা সম্ভব হবে।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণসহ বিপন্নপ্রায় উদ্ভিদ সংরক্ষণেও পার্কটি জাতীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

এ বিষয়ে কথা হলে সদর উপজেলা বন কর্মকর্তা জিয়াউল হক জানান, মামলার কারণে ইকো পার্কের কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। আইনি জটিলতা কাটিয়ে শিগগিরই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর