যমুনার ভাঙনে ঘরবাড়ি বিলীন: হুমকির মুখে বাঁধ

  • সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: এপ্রিল ২৩, ২০১৭, ০১:৫৫ পিএম

সিরাজগঞ্জ: ভারতের আসামে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে যমুনা নদীতে পানি বেড়েছে। গত তিন সপ্তাহ ধরে চলা পাহাড়ী ঢলের কারণে শুরু হয়েছে ভাঙন। শুষ্ক মৌসুমে সিরাজগঞ্জ নদীর তীর ভেঙে এরই মধ্যে বিলীন হয়েছে বাড়িঘর ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ তিন শতাধিক স্থাপনা। হুমকির মুখে রয়েছে পুরাতন বাঁধ, একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মসজিদ এবং আরো অর্ধ শতাধিক বাড়িঘর।

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার রতনকান্দি ইউনিয়নের বাহুকা, চর বাহুকা, টুটুলের মোড়, কাজিপুরের শুভগাছা পয়েন্টে প্রচণ্ড স্রোত ও ঘুর্ণাবর্তের সৃষ্টির ফলে নদী ভাঙন অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। এদিকে ভাঙন চলতে থাকলেও তা প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো কার্যকরী ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন ভাঙন কবলিত মানুষগুলোর।  

সরেজমিনে বাহুকা এলাকা ঘুরে ও স্থানীয় সোলেমান, ময়দান আলী, শুভগাছার আব্দুল বাতেন, আব্দুল মজিদ, কাদের প্রামানিকের সাথে কথা বলে জানা যায়, সদর উপজেলার বাহুকা থেকে কাজিপুর উপজেলার খুদবান্দি পর্যন্ত পাউবোর নদী সংরক্ষণ বাঁধের টুটুল মোড় এলাকায় গত ২০ দিনে শতাধিক বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আর গত তিনমাসের মধ্যে পর্যায়ক্রমে তিনশত বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়েছে। এছাড়াও একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি মসজিদসহ বাহুকা, শুভগাছাসহ আশপাশের গ্রামগুলোও হুমকির মুখে রয়েছে। নদীর পানি বাড়তে থাকলে যেকোনো সময় শিমলা-খুদবান্ধি বাঁধ ভাঙার আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী। এতে তিনটি ইউনিয়নের অর্ধশত গ্রাম প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

চর বাহুকার ভাঙন কবলিত আফসার আলী বলেন, নদীর ভাঙতে ভাঙতে বাড়ির কাছে চলে এসেছে। রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারি না। ভয় করে কখন বাড়ি নদীতে চলে যায়। বাড়ি ভেঙে সরিয়ে নেব সে সামর্থ্য আমার নেই। তিনি অভিযোগ করে বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছে না। তারা ব্যবস্থা নিলে হয়তো আমরা বেঁচে যেতাম।

টুটুলের মোড় এলাকার বাসিন্দা কৃষক রফিকুল সেখ, বাদল মন্ডল ও আকবর আলী জানান, নদী ভাঙতে ভাঙতে এ পর্যন্ত ১০ বার বাড়ি সরিয়েছি। এবার ভাঙনে পরিবার পরিজন নিয়ে বেড়িবাঁধের উপর যাচ্ছি। নদী ভাঙন আমার সবকিছু শেষ করে দিয়েছে।

এ বিষয়ে রতনকান্দি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল করিম বলেন, যেকোনো মুহূর্তে বাঁধ ভেঙে গেলে পশ্চিমপাড়ের সম্পূর্ণ গ্রাম তুলার মতো উড়ে যাবে। লোকজন কোথায় যাবে, কী অবস্থা হবে আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। এই মুহূর্তে ভাঙন ঠেকাতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নেয়া হলে রতনকান্দি, শুভগাছা, গান্ধাইলসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন ভেঙে শেষ হয়ে যাবে।

তিনি আরও বলেন, গত তিন সপ্তাহ ধরে অব্যাহত ভাঙনে শত শত পরিবার নিঃস্ব হয়ে পড়লেও পানি উন্নয়ন বোর্ড কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তারা শুধু ভাঙন কবলিতদের আশ্বাস ও পরিদর্শন করেই চলে যাচ্ছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৗশলী রনজিত কুমার সরকার জানান, আসামে প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ায় যমুনায় পানি বাড়ছে। আর পানি বাড়ার কারণে নদীভাঙন শুরু হয়েছে।

তিনি আরও জানান, ইতিমধ্যে বাহুকা থেকে খুদবান্দি ও কাজিপুরের মেঘাই এলাকা মিলে ৮ কিলোমিটার নদীতীর রক্ষা বাঁধের একটি প্রকল্প প্রি-একনেকে অনুমোদিত হয়েছে। একনেকে প্রকল্পটি অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। ওই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে নদী ভাঙন থেকে রক্ষা পাবে ওই ইউনিয়নবাসী।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ হাসান ইমাম জানান, কয়েকদিন আগে ভারতের উজানে বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে কিছু পানি বাড়ছে। এই মুহূর্তে কাজিপুর উপজেলার শুভগাছা এলাকায় কিছুটা ভাঙন রয়েছে। তবে এটি স্থানীয় ভাঙন নয়। ভাঙন প্রতিরোধে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। সেখানে জরুরি কাজ করার জন্য পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে, বরাদ্দ পাওয়ার সাথে সাথে এই এলাকায় ভাঙনরোধের কাজ শুরু হবে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর