জীবন দিয়েই টনক নড়ালো বাবা- মেয়ে

  • গাজীপুর প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মে ১, ২০১৭, ০৮:০৯ পিএম

গাজীপুর: সন্তানকে বুকে আগলে রাখেন বাবা-মা। যেকোনো বিপদ থেকে রক্ষা করতে চালান সর্বশেষ চেষ্টা। আয়শাকেও আগলে রেখেছিলেন বাবা হযরত আলী ও মা হালিমা বেগম। জন্মের পর এক দিনের জন্যও মেয়েকে দূরে রাখেননি। কিন্তু স্থানীয় বখাটে ফারুকের কু-দৃষ্টি পরিবারটির সুখের সংসারে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

দিন দিন আয়শার ওপর বাড়তে থাকে অত্যাচার। মেয়ের সুরক্ষায় হযরত আলী ছুটে যান স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, থানাসহ বিভিন্ন মহলে। কিন্তু কেউ নির্যাতিত এই পরিবারটির কথা আমলে নেননি। বার বার অভিযোগ দিয়েও যখন কারো টনত নড়েনি, তখনই মেয়েকে নিয়ে আত্মঘাতীর সিদ্ধান্ত নেন হযরত আলী।

শ্রীপুর উপজেলার কর্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা হযরত আলী। কয়েকজন প্রতিবেশী গণমাধ্যমকে জানান, ফারুক হোসেন শিশু আয়েশাকে উত্ত্যক্ত করতো। সে সময় যদি স্থানীয় প্রশাসন, ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য, পুলিশ এগিয়ে আসত, তাহলে হয়তো এভাবে বাবা-মেয়ের প্রাণ যেত না।

এদিকে সোমবার (১ মে) দুপুরে শ্রীপুরে কর্ণপুর সিটপাড়া গ্রামে হযরত আলীর বাড়ি পরিদর্শন করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেছেন, মর্যাদাহানি, লজ্জা, ক্ষোভ ছাড়াও বিচারহীনতার কারণে বাবা ও তার মেয়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে।

তিনি বলেন,  আয়শাকে যে নির্যাতনের ব্যাপারে থানায় জিডি করা হয়েছিল। সেটি একটি ‘স্পেসিফিক এলিগেশন (সুনির্দিষ্ট অভিযোগ)’ ছিল। আমি মনে করি- অভিযোগটি এফআইআর হিসেবে ট্রিট করে বিবাদীদের ধরার জন্য আরও অনেক বেশি সক্রিয় হওয়ার দরকার ছিল। কিন্তু পুলিশ এ বিষয়টাকে গুরুত্ব দেয়নি। ফলে সমাজ, আইনের প্রতি বিশ্বাসের অভাবের কারণেই তাকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হয়েছে।

মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মনে করেন, এক ধরনের স্বার্থান্বেষী মানুষ দীর্ঘদিন যাবত তার দখলে থাকা সরকারি সম্পত্তি দখল করার জন্য হযরত আলীর ওপর অত্যাচার জুলুম করেছে। কিন্তু জনপ্রতিনিধিরা তাদের প্রটেকশন দেয়নি।

আলী মর্যাদার সঙ্গে বাঁচার জন্য বার বার সংগ্রাম করে ব্যর্থ হয়েছেন মন্তব্য করে কাজী রিয়াজুল হক বলেন, জনপ্রতিনিধি, সমাজ তার প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। এখানে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। ফলে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের সঙ্গে পুলিশও এ দায়বদ্ধতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না।

এসময় মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক শরীফ উদ্দিন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাহেনুল ইসলাম, শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেহেনা আক্তার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুস সবুর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

গাজীপুরের শ্রীপুর হেরাপটকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী ছিলো আয়শা। স্থানীয় বাসিন্দা ফারুক হোসেন (২২) তাকে জোর করে সাইকেলে ওঠাত। জঙ্গলের দিকে নিয়ে যেতে চাইত।

এ বিষয়ে আয়শার বাবা হযরত আলী ফারুকের বাবা ফজলুর কাছে অভিযোগ করে কোনো ফল পাননি। পরে তিনি গোসিংগা ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য এবং ওই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতা আবুল হোসেন ব্যাপারীর কাছে যান। তিনি উল্টো হযরত আলীকে পাগল বলে তাড়িয়ে দেন। কোনো উপায় না পেয়ে গত ৪ এপ্রিল হযরত আলী শ্রীপুর থানায় অভিযোগ করেন। তাতেও কোনো কাজ হয়নি।

গত শনিবার (২৯ এপ্রিল) সকালে শ্রীপুর রেলস্টেশনের পশু হাসপাতাল-সংলগ্ন এলাকায় ট্রেনের নিচে কাটা পড়েন হযরত আলী (৪৫) ও তাঁর মেয়ে আয়েশা আক্তার (৮)।

সোনালীনিউজ ডটকম/ঢাকা/জেএ