‘কাজ দেও, ভাতা দেও, নাইলি ভিক্ষে করতি দেও’

  • যশোর প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মে ২২, ২০১৭, ০৮:১১ পিএম

যশোর: যশোরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন অন্তত ৩০ জন ভিক্ষুক। সোমবার (২২ মে) দুপুর ১২টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত যশোর প্রেসক্লাবের সামনে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। ভিক্ষুকরা দাবি করেন, সদর উপজেলাকে ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষণা করা হলেও তারা সহযোগিতা পাননি।

কর্মসূচিতে অংশ নেয়া ভিক্ষুকরা জানান, প্রশাসন-সরকার যশোর ভিক্ষুকমুক্ত করেছে। কিন্তু তারা কোনো সাহায্য-সহযোগিতা পাননি। আবার প্রশাসন তাদের ভিক্ষেও করতে দিচ্ছে না। তাহলে তারা কি করবেন?

জন্ম থেকেই দুই পা হারানো প্রতিবন্ধী ভিক্ষুক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘পাবলিক কচ্চে, সরকার তুমাগের সাহায্য দেচ্ছে, তাইলি আবার তুমরা ভিক্ষে করতিছো ক্যানো? আবার প্রশাসনও ভিক্ষে করতি বাধা দেচ্ছে। তাইলি আমরা খাবো কী?’

আরবপুর এলাকার আরেক ভিক্ষুক শুকুর আলীর এক পা নেই। তিনি জানান, প্রশাসনের কোনো ধরনের সাহায্য সহযোগিতা তারা পাননি। অথচ এখন তারা ঠিকমত ভিক্ষাও করতে পারছেন না। এভাবে চললে তাদের না খেয়ে মরতে হবে। তিনি প্রতিবন্ধিদের জন্য ১০ হাজার টাকা ভাতা দাবি করেন।

শহরের ষষ্টীতলাপাড়া এলাকার  কাশেম আলী বলেন, শুনেছি ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনে ১৯ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু আমরা প্রতিবন্ধীরা কোন সুযোগ সুবিধা পাইনি, এত টাকা গেল কোথায়। আমরা ভিক্ষা করতে গেলে লোকজন বলে, ‘‘ডিসি স্যারের কাছে যা, তোদের পুনর্বাসন করেছে। তোরা আবার ভিক্ষা চাচ্ছিস ক্যান? ’’

সাড়াপোল এলাকার ভিক্ষুক কামরুজ্জামান জানান, তার চার হাত-পা গ্যাংগ্রিনে আক্রান্ত। ইতোমধ্যে তার এক হাত, এক পা কেটে ফেলতে হয়েছে। প্রতিমাসে ওষুধের জন্য লাগে ৩ হাজার টাকা। সংসারে স্ত্রী ও স্কুলে পড়া দুই ছেলে মেয়ে আছে। ভিক্ষে করে সংসার, চিকিৎসার ওষুধ, ছেলে মেয়ের লেখাপড়া চলে। এখন তা বন্ধ হয়ে গেলে তো না খেয়ে বিনা চিকিৎসায় মারা যাবেন।

ভিক্ষুকরা এও জানান, ভিক্ষে করা অসম্মানজনক। এটা তারা বোঝেন। কর্মসূচিতে অংশ নেয়ারা শারীরিকভাবে সব কাজের জন্য কর্মক্ষম নয়। তাই তাদের উপযোগী কাজ, প্রতিবন্ধী ভাতা দেয়াসহ প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন। তাদের দাবি, ‘কাজ দেও, ভাতা দেও, নাইলি ভিক্ষে করতি দেও’।  

এ প্রসঙ্গে যশোর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার পংকজ ঘোষ বলেন, যাদের ইচ্ছা আছে ভিক্ষা করবে না, তাদের জন্য উপকরণ সহায়তা দিচ্ছি। তবে কাউকে ১০ হাজার টাকার ভাতা দেয়ার সুযোগ নেই। সাবলম্বী উপকরণ সহায়তা পাওয়ার তালিকায় যদি কোনো ভিক্ষুক বাদ পড়ে, তবে তাদের তালিকাভুক্তির এখনও সুযোগ রয়েছে। আগামী সপ্তাহে পৌর এলাকা ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষণা সম্ভব হবে। আমরা যাদের সাবলম্বী সহায়তা উপকরণ দিয়েছি, তাদেরকে মনিটরিং করছি। ভিক্ষুকমুক্ত হতে হলে ভিক্ষুকদের ইচ্ছা থাকতে হবে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেএ