ঝালকাঠিতে ভয়াবহ লোডশেডিং, জনজীবন বিপর্যস্ত

  • ঝালকাঠি সংবাদদাতা | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মে ২৬, ২০১৭, ০২:১৮ পিএম

ঝালকাঠি: সূর্য সরাসরি বিষুবরেখায় অবস্থান করায় প্রাকৃতিক পরিবেশের কারণে অতিরিক্ত তাপমাত্রা বিরাজ করায় ঝালকাঠিতে এসকাডা ও মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিংয়ে জনজীবন অতিষ্ঠ ও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

লাগামহীনভাবে দিনে রাতে চলতেই থাকে লোডশেডিং। কোনো হিসেব ছাড়াই যখন তখন বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে রাখা হচ্ছে। এতে জনসাধারণের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত ছাড়াও তীব্র গরমে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে সর্বত্র।

এই লোডশেডিংয়ে যে শুধু সাধারণ জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে তা নয়। এতে ঝালকাঠি জেলার মিল কারখানার উৎপাদন বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে। বিঘ্নিত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়াও।

এবার রমজান মাসে লোডশেডিং নিয়েই রোজা ও তারাবির নামাজ পরতে হবে। খুব শিগগিরই কাটছে না লোডশেডিং। এ আশঙ্কার কথা জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এসকাডা ও লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে নবগ্রাম, বিনয়কাঠি ও গাভারামচন্দ্রপুর মিলে ৩ ইউনিয়নের জনসাধারণের সমন্বয়ে গঠন করা হয়েছে লোডশেডিং প্রতিরোধ কমিটি।

ঝালকাঠি বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল বিভাগে মোট বিদ্যুতের চাহিদা ১৩০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে জাতীয় গ্রিড থেকে পাওয়া যাচ্ছে ৭০ মেগাওয়াট। তা থেকে ঝালকাঠির ৩৩ কেভির সাব স্টেশনে জাতীয় গ্রিড থেকে মাত্র ৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। অথচ পিক আওয়ারে ঝালকাঠির চাহিদা ১৩ মেগাওয়াট। ৫ মেগাওয়াট থেকে আবার পল্লী বিদ্যুৎকে দিতে হচ্ছে দেড় মেগাওয়াট।

সূত্র জানায়, বর্তমানে সারা দেশে ঢাকার রামপুরা জাতীয় বিদ্যুৎ সরবরাহ বিভাগ থেকে সরাসরি লোডশেডিং নিয়ন্ত্রণ করা হয়। সেখান থেকেই লোডশেডিংয়ের মাধ্যমে ঝালকাঠির বিদ্যুৎ সরবরাহ সরাসরি বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। আশুগঞ্জ টু সিরাজগঞ্জ সঞ্চালন লাইন সচল না হওয়া পর্যন্ত এ সমস্যা কাটছে না। যা ঠিক হতে ২/৩ মাস সময় লাগবে।

লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ পূর্ব চাঁদকাঠি এলাকার গৃহিণী মিনু রানী চক্রবর্তী বলেন, সারাদিন অসহনীয় গরমে অধিকাংশ সময় বিদ্যুৎবিহীন থাকতে হয়। রাতেও ৭/৮ বার লোডশেডিংয়ের কারণে ঘুমাতেও পারি না। এতে বাচ্চাদের পড়াশোনারও ক্ষতি হচ্ছে।

ঝালকাঠি চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি ও লবণ মিল মালিক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সালাউদ্দিন আহমেদ ছালেক বলেন, এভাবে লোডশেডিং চলতে থাকলে আমাদের মিলের উৎপাদন কমে দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম হবে। বিদ্যুতের অভাবে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় কোটি কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করা অসাধ্য হয়ে পড়ছে। কর্মচারী শ্রমিকদের বসিয়ে বসিয়ে বেতন দিতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে ওজোপাডিকো বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রহিম বলেন, আমাদের ঝালকাঠি বিদ্যুৎ বিভাগের কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি নেই। গত ১ মে ভৈরব নদীর তীরে ঝড়ে একটি বৈদ্যুতিক টাওয়ার বিধ্বস্ত হওয়ায় আশুগঞ্জ টু সিরাজগঞ্জ বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। এ সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিড থেকে ঝালকাঠিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়।

তবে আমাদের সাধ্য অনুযায়ী সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছি। ৩/৪ মাস এই সমস্যা থাকায় রমজান মাস লোডশেডিংয়ে কাটবে। তারপরে আবার বরিশাল থেকে ঝালকাঠি, বাকেরগঞ্জ ও মুলাদী এসকাডার আওতায় রয়েছে। বিদ্যুৎ বণ্টনের সময় দেখা যায় এক এলাকায় লোডশেডিংয়ের সময় কাটিয়ে বিদ্যুৎ দেয়ার প্রস্তুতি চলছে। এমন সময় বরিশাল দিয়ে এসকাডা হয়ে গেছে। তাহলে একই এলাকার লোডশেডিংয়ে ডাবল সময় পার করতে হচ্ছে। এতে তারা অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে।

জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক জানান, সূর্য সরাসরি বিষুবরেখায় অবস্থান করায় আগামী ৫ দিন পর্যন্ত বাংলাদেশসহ এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে প্রচুর তাপমাত্রা পরিলক্ষিত হবে। এ সময় ৪০ থেকে ৪৫ ডি. সে. তাপমাত্রা দেখা দেবে। যার ফলে সানস্ট্রোক, হিটস্ট্রোকসহ অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে। যথাসম্ভব খোলা আকাশের নিচে কম চলাফেরা করা ভালো হবে, প্রচুর ঠান্ডা খাবার, শাক শবজি এবং প্রতিদিন প্রায় পাঁচ লিটার পানি পান করায় উপকারী।

সোনালীনিউজ/এমটিআই