টুলু হত্যায় পিআইবির তদন্ত, সুবিচারের আশা পরিবারের

  • ঝিনাইদহ প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুলাই ১৭, ২০১৭, ০৭:০৩ পিএম

ঝিনাইদহ: জেলার মেধাবী স্কুলছাত্র টুলু হত্যায় পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন)-এর তদন্ত শুরু হওয়ায় সুবিচারের আশায় টুলু পরিবারসহ গ্রামবাসী খুশিতে বুক বেঁধে আছে। টুলু পরিবারসহ তালসার গ্রামবাসী বিশ্বাস করে টুলু হত্যার রহস্য এবার উন্মোচিত হবেই হবে। তারা টুলু হত্যার ময়না তদন্ত রিপোর্ট প্রত্যাখান করে নতুন করে পোস্টমার্টেমের দাবি তুলেছে। জানা গেছে, ঝিনাইদহ আদালত বাদী সাবদার মন্ডলের ছেলে হাবিবুর রহমান টুলু হত্যা মামলাটি ফৌজদারী কার্যবিধির ২০০ ধারা মোতাবেক পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ঝিনাইদহকে তদন্তপূর্বক আগামী ৯ আগস্ট প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।

পরে শনিবার (১৫ই জুলাই) সকালে কোটচাঁদপুর উপজেলার তালসার গ্রামের মেধাবী ছাত্র হাবিবুর রহমান টুলুর মৃত্যু রহস্য নিয়ে পিআইবি প্রথম তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে। প্রথম দিনের তদন্ত অভিযানে ঝিনাইদহ জোনের পিআইবির এডিশনাল এসপি এসএম ফজলুল হকের নির্দেশনায় তদন্ত অফিসার এসআই সোহেল হোসেন, এসআই খালেকুজ্জামানসহ অন্যান্য অফিসার ও কনস্টেবলের উপস্থিতিতে টুলু হত্যার তদন্ত অভিযান পরিচালনা করেন।

এলাকাবাসী পিআইবির তদন্ত দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। সারাদিনের তদন্তে এক গ্লাস পানিও স্পর্শ করেননি ব্যতিক্রমী এই পিআইবি টিমটি। এমনকি তেল খরচা বাবদ ১টি টাকাও নেননি পিআইবি টিম। তালসার গ্রামের সাবেক, বর্তমান মেম্বর, সমাজসেবক, সরকারদলীয় নেতাসহ এলাকাবাসী সাংবাদিকদের বলেছেন, পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্ত ও ব্যবহার দেখে সত্যি আমরা খুশি। তাছাড়া খরচা বাবদ ১টি টাকাও নেননি, এমনকি এক গ্লাস পানিও স্পর্শ করেননি নতুন এই পিবিআই টিম। এতে করে আশা করা যায় এবার অবশ্যই মেধাবী স্কুলছাত্র টুলু হত্যার রহস্যের জট খুলবে বলে জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার ঘাগা তালসার গ্রামের মেধাবী ছাত্র হাবিবুর রহমান টুলুর মৃত্যু রহস্য আটকে গেছে ময়না তদন্তের রিপোর্টে। গলায় রশি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখার কারণে ময়না তদন্তের রিপোর্টে আত্মহত্যার আলামত পেয়েছেন চিকিৎসকরা। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ টুলুর পরিবার। তারা নিরুপায় হয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। হত্যা মামলা করেছেন ৮ জনের বিরুদ্ধে। মামলায় আসামি করা হয়েছে তালসার গ্রামের মুল্লুক চাঁদ মন্ডলের ছেলে জাকির মন্ডল, জমির উদ্দীন মন্ডল, আমিরুদ্দীন মন্ডল, নজরুলের ছেলে আশাদুল, ঘাগা গ্রামের চিটা কাজীর ছেলে নজরুল মন্ডল, ইসমাইল মন্ডলের ছেলে জাকির মন্ডল, জাকির মন্ডলের ছেলে আল আমিন ও জহির মন্ডলের ছেলে মিল্টন মন্ডল। এলাকাবাসী ও স্কুলছাত্র-ছাত্রীরা টুলু হত্যার প্রতিবাদে ফুসে উঠেছে। এ নিয়ে শনিবার তারা তালসার বাজারে মানববন্ধন, প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। তারা টুলু হত্যার ময়না তদন্ত রিপোর্ট প্রত্যাখান করে নতুন করে পোস্টমার্টেমের দাবি তুলেছে। এদিকে আদালত বাদী সাবদার মন্ডলের নালিশী অভিযোগটি ফৌজদারী কার্যবিধির ২০০ ধারা মোতাবেক পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ঝিনাইদহকে তদন্তপূর্বক আগামী ৯ আগস্ট প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।

ঝিনাইদহের অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম ফাহমিদা জাহাঙ্গীর গত ২ জুলাই এ আদেশ দেন। বাদী তার নালিশি অভিযোগে উল্লেখ করেছেন তার ছেলে হাবিবুর রহমান টুলু (১৪) কোটচাঁদপুরের তালসার কাজী লুৎফর রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর মেধাবী ছাত্র। একই স্কুলের ছাত্রী ও নজরুল মন্ডলের মেয়ে শাহানাজ ঘটনার তিনদিন আগে অন্য একটি ছেলের সাথে পালিয়ে যায়। এ নিয়ে তারা স্কুলছাত্র টুলুকে সন্দেহ করতে থাকে। গত ১০ জুন রাতে প্রধান আসামি জাকির মন্ডল ফোন করে টুলুকে তার সাথে দেখা করতে বলে। টুলু সরল মনে তার সাথে দেখা করতে গিয়ে নিখোঁজ হয়। ঘটনার দিন প্রতিবেশি আয়াত আলীর ছেলে সুমন, আজাদের ছেলে মহসিন, জমিরের ছেলে তুহিন ও জিয়াউর রহমানের ছেলে ইমরান তাল চুরি করে ঝোড়ের মধ্যে খাচ্ছিল। তারা দেখে ৪/৫ জন মানুষ একটি মৃতপ্রায় লোককে ঘাড়ে করে নিয়ে যাচ্ছে। এই দৃশ্য দেখে তারা ভয়ে আতংকিত হয়ে দৌঁড়ে বাড়ি চলে আসে এবং টুলুর লাশ পাওয়ার পর ঘটনাটি ফাঁস হয়ে যায়।

এদিকে মৃতদেহ খুঁজে পাওয়ার আগেই আসামিরা বাড়ির মালামাল নিয়ে গাঢাকা দেয়। যা পরোক্ষভাবে প্রমাণ করে আসামিরাই টুলুর হত্যাকারী। বাদী টুলুর পিতা সাবদার মন্ডল জানান, টুলু বাইরে যাওয়ার সময় তার কাছে নিজের শিক্ষা বৃত্তির ১৩শ’ ও জমি বিক্রির ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা ছিল। সে টাকাও খুনিরা নিয়ে গেছে। এ বিষয়ে কোটচাঁদপুর থানায় হত্যাকারীদের নাম উল্লেখ করে মামলা করতে গেলে তারা অপমৃত্যু মামলা গ্রহণ করে। স্থানীয় চেয়ারম্যান আ. হান্নান, জনৈক শিক্ষক, সাবেক মেম্বর বাহাজ্জেল হোসেন ও বর্তমান মেম্বর বদিউজ্জামান জানান, হাবিবুর রহমান টুলু খুব ভালো ছাত্র ছিল সে ২০১২ সালে তালসার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পায়। স্থানীয় জনগণের জোর মন্তব্য এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তাকে দড়ি দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে তার মৃতদেহটি গাছে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। বিষয়টি নিয়ে কোটচাঁদপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল করিম বলেন, আমরা টুলুর মৃত্যুর বিষয়ে কঠোর ভূমিকায় ছিলাম। আসামি গ্রেপ্তারে অভিযানও চালানো হয়। কিন্তু ময়না তদন্তের রিপোর্টে আত্মহত্যা কথাটি আসায় সব কিছু এলোমেলো হয়ে গেছে। তিনি আসামিদের পালিয়ে থাকার বিষয়টি সত্য বলে জানান।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর