জমে উঠেছে বেচাকেনা

  • নড়াইল প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: আগস্ট ৩০, ২০১৭, ১১:০০ এএম

নড়াইল : নড়াইলে কোরবানির হাটে বেচাকেনা জমে উঠেছে। এক্ষেত্রে নড়াইলে গৃহপালিত ষাঁড়ের চাহিদাই বেশি। এসব গরু বিক্রি হচ্ছে ৩৫ হাজার থেকে এক লাখ টাকার মধ্যে। এর মধ্যে ৪০ থেকে ৫৫ হাজার টাকার গরুর কদর বেশি। তবে, আকার ভেদে ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে দেশি গরুগুলো। গরুর পাশাপাশি একেকটি ছাগল ছয় হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে। চলছে ভেড়া বেচাকেনাও। দামের ব্যাপারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

তবে, জেলার হাটগুলো ভারতীয় গরু তেমন একটা দেখা যায়নি। এদিকে, কোরবানির পশু জবাইয়ের জন্য ছুরি, দা, বটি ও চাপাতির চাহিদাও বেড়েছে। চলছে টিভি, ফ্রিজের বেচাকেনাও।

নড়াইল সদরের নাকসী গরুর হাট এলাকার বাসিন্দা হাদিউজ্জামান হাদি জানান, খড়, ঘাস ও ভূষিসহ প্রাকৃতিক ভাবে বেড়ে উঠা ষাঁড়ের চাহিদাই বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এসব গরু ৩৫ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। এখানে প্রতি মঙ্গলবারে প্রায় এক হাজার কোরবানির পশু হাটে উঠতে দেখা যায়। গতকাল মঙ্গলবারের হাটেও বেচাকেনা ভালো হয়েছে।

ষাঁড় বিক্রেতা সদরের দৌলতপুরের মনিরুল ইসলাম বলেন, ঘাস, পাতা খাওয়ানো মাঝারি গরুর চাহিদা বেশি। ক্রেতারা ইনজেকশনমুক্ত গরু কিনছেন। মিরাপাড়ার এক ক্রেতা বলেন, এক লাখ ১০ হাজার টাকা দাম হাকার পর ৯০ হাজার টাকায় ষাঁড়টি কিনেছি। গতবারের চেয়ে এবার গরুর দাম কম বলে জানিয়েছেন তিনি।

নাকসী হাটের অপর ক্রেতা মনিরুজ্জামান খান বলেন, ছোট পরিসরে ৩৫ হাজার টাকায় একটি গরু কিনেছি। ফুলসরের কাজী আলমগীর হোসেন বলেন, একটি ষাঁড়ের দাম এক লাখ ১৫ হাজার টাকা চেয়েছি। ক্রেতারা ৯০ থেকে ৯৫ হাজার টাকা দাম বলছেন। লাখের উপরে হলে বিক্রি করে দিব।

নড়াইল শহরের ভওয়াখালীর রেজাউল ইসলাম জমাদ্দার বলেন, প্রায় ছয়মাস আগে ৪০ হাজার টাকা করে আটটি গরু কিনে লালন-পালন করেছি। ভূষি, কলাই, গম, আটা, সরিষার খৈ ও চালের খুদ খাওয়ানো হয়েছে। এসব গরু এক লাখ ২০ হাজার থেকে এক ৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছি। খরচবাদেও আমার লাভ হয়েছে।

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার জয়নগর-বাইখোলার ফোরকান খান বলেন, তিনজনে কোরবানির জন্য নড়াইলে গরু কিনতে এসেছি। তবে, দাম চড়া মনে হয়েছে; এ কারণে ফিরে যাচ্ছি।

সদরের জঙ্গলগ্রামের ভেড়া বিক্রেতা জহির জানান, কোরবানির হাটে ছাগলের পাশাপাশি ভেড়ার চাহিদা রয়েছে। দেড়শ ভেড়া পালন করেছি। ছাগলের চেয়ে ভেড়া বিক্রি লাভজনক। ছাগল বিক্রেতা ইয়ামিন বলেন, বড় ধরণের একটি ছাগল ১৬ হাজার টাকা দরদাম হয়েছে, ১৭ হাজার হলে বিক্রি করব। লোহাগড়া উপজেলার শালনগর ইউনিয়নের কাশিপুর গ্রামের মাহাবুবুর রহমান বলেন, ১১ বছর ধরে ছাগল বেচাকেনা করছি। এ বছর ছাগলের দাম কম হওয়ায় লোকসান হয়েছে। নাকসী হাটে ১৮টি ছাগল লোকসানে বিক্রি করেছি। দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা হওয়ায় এবং আমাদের এলাকায় পাটের দাম কম থাকায় গ্রামাঞ্চলের মানুষ কোরবানির পশু কিনতে পারছেন না। এজন্য দাম কমে গেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। নাকসী গরু হাট ইজারাদার মিলন ঘোষ জানান, এই হাটে গরু-ছাগলের বেচাকেনা ভালোই হয়েছে।

এদিকে, কোরবানির পশু জবাইসহ গোশত প্রস্তুতির কাজে ব্যবহৃত ছুরি, দা, বটি, চাপাতিসহ ধারোলো অস্ত্র তৈরির জন্য ব্যস্ত সময় পার করছেন কামারশিল্পীরা। জেলা শহরের রূপগঞ্জ, লোহাগড়া, লক্ষীপাশা, এড়েন্দা, দিঘলিয়া, কালিয়া, নড়াগাতিসহ বিভিন্ন হাটবাজারে এসব ধারালো অস্ত্র বিক্রি হচ্ছে। লোহাগড়ার একটি শো-রুমের ব্যবস্থাপক মাহফুজুল ইসলাম জানান, ঈদ উপলক্ষ্যে ফ্রিজের বেচাকেনা বেড়েছে। পাশাপাশি টেলিভিশনেরও চাহিদা রয়েছে।

জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা: মারুফ হাসান জানান, নড়াইলে ছোট-বড় ৪ হাজার গরুর খামার রয়েছে। এছাড়া সদরসহ লোহাগড়া ও কালিয়া উপজেলায় ১৩টি স্থায়ী গরু-ছাগল বেচাকেনার হাট রয়েছে।

এছাড়া ঈদ উপলক্ষ্যে কয়েকটি অস্থায়ী হাটে কোরবানির পশু বেচাকেনা চলছে। পুলিশ সুপার সরদার রকিবুল ইসলাম জানান, জাল টাকা সনাক্তকরণ এবং কোরবানির পশু বেচাকেনা ও পরিবহন ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করতে হাটবাজারগুলোতে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প বসানো হয়েছে। সর্বত্র ব্যাপক নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই