অভাবের তাড়নায় সন্তানকে হত্যার পর মায়ের আত্মহত্যা

  • মেহেরপুর প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৭, ১২:১৬ পিএম

মেহেরপুর: জেলার গাংনী উপজেলা কসবা গ্রামে দুই বছরের শিশু কন্যাকে হত্যার পর এক মা আত্মহত্যা করেছেন। বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকালে এই ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- মা আদরী খাতুন (৩৫) ও তার মেয়ে সামিয়া খাতুন (২)। মা মেয়ের মর্মান্তিক আত্মঘাতীর ঘটনায় এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া বিরাজ করছে।

আদরী খাতুন চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার বড় গাংনী গ্রামের লোকমান হোসেনের স্ত্রী এবং কসবা গ্রামের মৃত কাবরান হোসেনের নাতি। এতিম-অনাথ আদরী খাতুন অভাবের তাড়নায় পারিবারিক কলহের জের ধরে মেয়েকে পানিতে ফেলে হত্যা করে নিজে আত্মহত্যা করতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হতে মরদেহ ময়না তদন্তের উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পারিবারিক কলহের জের ধরে সপ্তাহখানেক আগে কসবা গ্রামে নানা-নানীর বাড়িতে চলে আসে আদরী। সঙ্গে ছিল শিশু কন্যা সামিয়া। বুধবার দুপুরে বাড়ির লোকজনের অগোচরে ঘরের ছাউনির আড়াই শাড়ী পেচিয়ে আত্মহত্যা করে। প্রতিবেশীরা তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেন। তখন শিশু সামিয়াকে পাওয়া যাচ্ছিলো না। খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে আদরীর নানার বাড়ির পার্শ্ববর্তী হাজী আজিবার হোসেনের পুকুর থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

খবর পেয়ে গাংনী থানার ওসি আনোয়ার হোসেন সঙ্গীয় পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। প্রাথমিক তদন্তে মেয়েকে হত্যার পর মায়ের আত্মহত্যার বিষয়টি উঠে আসে। মা মেয়ের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হেফাজতে নেয় পুলিশ। এ বিষয়ে থানায় অপমৃত্যু (ইউডি) মামলা হয়েছে।

আদরী খাতুনের নানী বয়োবৃদ্ধা কাঞ্চন খাতুন বলেন, সতীনের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে কলহের জের ধরে সপ্তাহখানেক আগে চলে আসে আদরী। সোমবার রাতে তার স্বামী এসেছিলেন। অনেক অনুরোধ করার পরেও আদরী ফিরে যাইনি। তবে স্বামীর সঙ্গে তার গণ্ডগোল কিংবা স্বামীর বিরুদ্ধে আদরীর কোন অভিযোগ ছিল না। মূলত পারিবারিক কলহ ও অভাবের তাড়নার জের ধরেই আদরী আত্মহত্যা করেছে বলে ধারনা করছেন তার নানী।

স্থানীয়রা ধারণা করছেন, আদরী খাতুন মৃত্যুর আগে তার শিশু কন্যাকে পানিতে ফেলে দিতে পারেন। তার মত কষ্ট যেন মেয়ের না হয় সেজন্য দু’জনেই মারা যেতে পারেন বলেও ধারণা গ্রামবাসীরা।

পারিবারিক সূত্রে আরো জানা গেছে, ছোটবেলায় আদরীর মা-বাবা মারা যায়। নানা-নানী তাকে লালন-পালন করেছেন। দারিদ্র্যতার কারণে লেখাপড়া শিখতে পারেননি। অভাবের সঙ্গে যুদ্ধ করেই নানা-নানী তাকে পালতেন। চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার হাপানিয়া গ্রামের রবিউল ইসলামের সঙ্গে আদরীর বিয়ে হয়। দাম্পত্য জীবনে এক কন্যা সন্তান রয়েছে। তার নাম রিয়া। পিতার সঙ্গে বসবাস করে রিয়া। সে প্রথম শ্রেণীর ছাত্রী। প্রথম স্বামীর সাথে ডির্ভোস হলে একই এলাকার বড়গাংনী গ্রামের লোকমান হোসেনের সঙ্গে দ্বিতীয় বিয়ে হয়। লোকমানের প্রথম স্ত্রীর ছেলে ও মেয়ে রয়েছে। সতীনের ছেলেমেয়ের সংসারে ভাল ছিল না আদরী। নানা বাড়ির মত সেখানেও অভাব যেন পিছু ছাড়ছিলো না। দাম্পত্য কলহ না থাকলেও পারিবারিক কলহ তাকে কুরে কুরে খাচ্ছিলো। এতে চরম অসহায়ত্ব তাকে পেয়ে বসে।

এদিকে স্ত্রী ও মেয়ের মৃত্যুর খবর পেয়েও লোকমান হোসেন তাদের দেখতে আসেননি। এদের মৃত্যুর জন্য তাকে দায়ি করা হতে পারে এমন আশংকায় লোকজন আত্মগোপন করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে তিনি মোবাইল ফোন ব্যবহার না করায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, অসহায়ত্ব থেকে মুক্তি পেতেই আদরী আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। তবে মৃত্যুর কারণ নির্ণয় করতে মরদেহ ময়নাতদন্ত করা হবে। এ বিষয়ে পরিবারের কোনো অভিযোগ নেই। আদরীর স্বামী লোকমান পুলিশের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেননি। তবে লোকমানের বিরুদ্ধে আদরীর নানার পরিবারের কোনো অভিযোগ নেই।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর