কেউ মেটায়নি পেটের জ্বালা, লাশের পাশে সবার চাঁদা

  • শেরপুর প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: অক্টোবর ২৮, ২০১৭, ০৫:২০ পিএম

শেরপুর: অত্যন্ত শান্ত ও চাপা স্বভাবের মেয়ে ছিল কণিকা (১২)। কণিকার বাবা বিলে মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে সংসার চালান। যেদিন মাছ পাওয়া না যায়, আবহাওয়া বা শরীর খারাপ থাকে সেদিন তাদের না খেয়েই থাকতে হয়। 

কিন্তু দিনের পর দিন না খেয়ে থাকলেও তাদের পাশে কেউ দাঁড়ায়নি, কেউ খোঁজ রাখেনি। শেষ পর্যন্ত নিজের দুঃখ নিজের মনে চাপা দিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নেয় কনিকা। কণিকা মারা যাওয়ার পর তার লাশ দাফনের খরচ এলাকার লোকজন চাঁদা তুলে দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) সকাল ৮টার দিকে তাদের ভাঙা ঘরের আড়ায় গলায় দড়ি দিয়ে সে আত্মহত্যা করে। কণিকা শেরপুর সদর উপজেলার গাজীর খামার ইউনিয়নের চককোমড়ি গ্রামের কোরবান আলীর মেয়ে।

এলাকাবাসী, আত্মীয়-স্বজন ও কণিকার বাবা কোরবান আলী জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে পরিবারে অভাব কাটছিল না। এতে করে তাদের প্রায়ই তাদের না খেয়ে থাকতে হত। ক্ষুধার কারণেই কণিকা আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। মৃত্যুর আগে কণিকার সাথে কারও কথা কাটাকাটি বা ঝগড়া হয়নি।

অভাবের তাড়নায় মোটামুটি চিকিৎসা ছাড়াই ৮ বছর আগে কণিকা ও তার ভাইকে রেখে মা মমতা ইহলোকে গমণ করেন। তারপরে বাবা কোরবান আলী আরেকটি বিয়ে করেন। এরপর কণিকার আরও দুই ভাই-বোন জন্ম নেয়। কষ্ট আর অভাবের সংসার হওয়ায় কণিকার সৎ মা মাসখানেক আগে বাড়ি ছেড়ে বাপের বাড়ি চলে যান।

জানা গেছে, অভাবের কারণে সদ্য জন্ম নেয়া কণিকার সৎ ছোট ভাইকে সৎ মা অন্যের কাছে দত্তক দিয়েছেন। বাবা ও ভাইকে নিয়ে ছোট একটি ভাঙা ঘরের ছোট্ট একটি খাটে কণিকারা থাকতো। বাড়ি থেকে বেশ দূরে কণিকার খালু ও নানীর বাড়িতে মাঝে মধ্যে যেত।

কণিকার নানী আছিয়া খাতুন জানিয়েছে, ভাতের ক্ষুধা সব সময় কণিকার লেগেই থাকতো। একটু ভালো মন্দ খাবার দিলে খুব মনোযোগ দিয়ে খেত। আর সব সময় গম্ভীর হয়ে থাকতো। খাওয়ার কথা জিজ্ঞাসা করলে বলতো বাড়িতে খাবার নেই।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আজগর আলী জানান, অভাবের কারণেই কণিকা আত্মহত্যা করেছে। কণিকার বাবা কোরবান আলী আমার কাছে একবার এসেছিল কার্ড চাইতে। আমি বলেছি আবার কার্ড আসলে পরের বার দিব। 

গাজীর খামার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আওলাদুল ইসলাম আওলাদ বলেন, কোরবান আমার কাছে কখনও আসেনি বা তার অবস্থার কথা কেউ বলেনি। তবে মারা যাওয়ার পর লাশ ময়নাতদন্ত ও আনা নেওয়ার খরচ আমি বহন করেছি।

শেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় সদর থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। বিষয়টি পুলিশ তদন্ত করে দেখছে।

সোনালীনিউজ/জেএ