ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে চাঁদা দাবিতে ব্যবসায়ীকে অপহরণ অভিযোগ!

  • বরিশাল ব্যুরো | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৩, ২০১৮, ১০:১২ পিএম

বরিশাল: দশ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে তুহিন নামে এক স্থানীয় ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে ৪ ঘন্টা আটকে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে সরকারি গৌরনদী কলেজ ছাত্র সংসদের নাট্য সম্পাদক বেল্লাল রিজভীসহ ছাত্রলীগের ৩ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে।

পরে পুলিশ নিয়ে স্বজনরা উদ্ধার অভিযানে নামলে অপহরণকারীরা বিষয়টি জানতে পেরে ১৫০ টাকার সাদা স্ট্যাম্পে ব্যবসায়ীর স্বাক্ষর রেখে তাকে ছেড়ে দেয় অভিযুক্তরা।

সোমবার (২২ জানুয়ারি) সন্ধ্যার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

মদিনা মেডিকেল হলের মালিক মো. তুহিন জানান, গত ৬ মাস পূর্বে তিনি গৌরনদী টিএন্ডটি মার্কেট সংলগ্ন মো. আলমগীর উকিলের বাড়ির নিচতালা ভাড়া নিয়ে হামদার্দ কোম্পানির সামগ্রী বিক্রির জন্য মেসার্স মদিনা মেডিকেল হল চালু করে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন।

সোমবার (২২ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টার দিকে তার ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে রোগী দেখানোর কথা বলে ভেতরে নিয়ে উত্তর পালরদী গ্রামের মো. কামাল মিয়ার ছেলে সরকারি গৌরনদী কলেজ ছাত্র সংসদের নাট্য সম্পাদক ছাত্রলীগ নেতা বেল্লাল রিজভী (২২) ও তার সহযোগী একই গ্রামের আব্দুল সরদারের ছেলে ছাত্রলীগ কর্মী সাগর সরদার ওরফে সম্রাট সাগর (৩২), আশোকাঠি গ্রামের কালু বেপারীর ছেলে রিপন বেপারী (২৫)।

তারা চিকিৎসা সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চাওয়ার এক পর্যায়ে মেডিকেল হলের চিকিৎসক তৌহিদুর রহমান (৩৬), ফার্মাসিষ্ট মো. বেল্লাল হোসেন (২১), ষ্টাফ আকলিমা আক্তারকে (৩৫) একটি কক্ষে নিয়ে দরজা তালাবদ্ধ করে রাখেন। এরপর তার কাছে দশ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন।  

ওই ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন, বেল্লাল রেজভী ও তার সহযোগীরা আমাকে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে বলে তোর দোকানে বিভিন্ন জেহাদী বইপত্র রয়েছে। টাকা না দিলে তোকে ধরিয়ে দেয়া হবে। আমি টাকা দিতে অস্বীকার করলে তারা আমাকে জানান, গৌরনদী পৌর মেয়র মো. হারিছুর রহমান তোকে পার্টি অফিসে নিয়ে যেতে বলেছে।

তাদের কথায় আমি মেয়রের কাছে যেতে রাজি হই। তারা আমাকে একটি মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে পৌর মেয়রের কাছে না গিয়ে আশোকাঠী এলাকার একটি বিল্ডিংয়ে নিয়ে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত আটকে রাখে। দশ লাখ টাকা চাঁদা নেয়ার জন্য বিভিন্ন হুমকি দিয়ে ভয়ভীতি দেখায়। এক পর্যায়ে আমাকে জিম্মি করে ১৫০ টাকার জুডিশিয়াল সাদা স্ট্যাম্পে জোরপূর্বক আমার স্বাক্ষর নেন।

তুহিন আরো অভিযোগ করে বলেন, আমাকে তুলে আনার খবর পেয়ে আমার স্বজনরা আমাকে মুঠোফোনে কল দিলে আমার ফোন কেড়ে নিয়ে তাদের শিখিয়ে দেয়া কথা বলতে আমাকে বাধ্য করেন। এক পর্যায়ে পুলিশ টের পেয়ে আমার পকেটে থাকা নগদ ২০ হাজার টাকা রেখে বিষয়টি কাউকে না জানানোর হুমকি দিয়ে আমাকে ছেড়ে দেয়া হয়।

মদিনা মেডিকেল হলের  ফার্মাসিষ্ট মো. বেল্লাল হোসেন বলেন, আমাদের একটি কক্ষে আটকে তালাবদ্ধ করে রাখে। এরপর  সকল কক্ষ তালাবদ্ধ করে দিয়ে অপহরণকারীরা চলে যান। এক পর্যায়ে আমরা মুঠোফোনে বিষয়টি তুহিনের স্বজনদের জানাই।

মদিনা মেডিকেল হলের  মালিকের ছোট বোন শারমিন আক্তার (২০) বলেন, ভাইকে অপহরণের খবর পেয়ে আমরা রাতে পুলিশকে জানাই। এরপর পুলিশ উদ্ধার অভিযানে নামার বিষয়টি অপহরণকারীরা টের পেয়ে রাত সাড়ে ৯টার দিকে ভাই তুহিনকে ছেড়ে দেয়।

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে ছাত্রলীগ নেতা বেল্লাল রেজভীর কাছে অসংখ্যবার ফোন দিলেও তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে গৌরনদী মডেল থানার ওসি মো. মনিরুল ইসলাম জানান, ব্যবসায়ী তুহিনকে অপহরণের খবর পেয়ে পুলিশ উদ্ধার অভিযানে নামে। বিষয়টি টের পেয়ে অপহরণকারীরা ব্যবসায়ীকে ছেড়ে দেয়।

ব্যবসায়ী তুহিনকে থানায় লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

সোনালীনিউজ/এমএইচএম