কেসিসি নির্বাচন

খালেক-মঞ্জুর পাল্টাপাল্টি অভিযোগ চলছেই

  • খুলনা প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: এপ্রিল ১৯, ২০১৮, ১১:৫২ এএম

ঢাকা : খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মেয়র প্রার্থী একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ অব্যাহত রেখেছেন। আওয়ামী লীগ নেতাদের দেওয়া বক্তব্যের জবাব দিতে বুধবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু।

আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেকসহ দলটির নেতারা গত মঙ্গলবার (১৭ এপ্রিল) সংবাদ সম্মেলন করে মঞ্জুর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তোলেন। এর আগে হলফনামায় তথ্য গোপনের অভিযোগ এনে গত সোমবার খালেকের বিরুদ্ধে রিটার্নিং অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন বিএনপির মঞ্জু।

এ ছাড়া গত মঙ্গলবার খালেকের বিরুদ্ধে নির্বাচন আচরণবিধি লঙ্ঘনের আরেকটি লিখিত অভিযোগ করেন তিনি। এদিকে হলফনামায় তথ্য গোপনের অভিযোগ তুলে গতকাল বিভাগীয় কমিশনার লোকমান হোসেন মিয়ার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের খালেক। খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক মুন্সী মো. মাহবুব আলম সোহাগ সন্ধ্যায় এ তথ্য জানান।

খুলনা প্রেস ক্লাবে মহানগর বিএনপি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মঞ্জু বলেন, আওয়ামী লীগ অসত্য তথ্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। বিএনপি নেতাদের চরিত্র হননের প্রক্রিয়ায় খুলনার নির্বাচনে সরকারি দল সফল হবে না।

খুলনা শহর বিএনপির ঘাঁটি উল্লেখ করে মঞ্জু বলেন, স্থানীয় সরকার ও জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীরা খুলনা নগরী থেকে সবসময় জয়ী হয়েছেন। তিনি বলেন, নগরীতে পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া আমার দুটি বাড়ি আছে। বাড়ি ভাড়া ও আইনজীবী স্ত্রীর উপার্জিত অর্থে জীবনযাত্রা নির্বাহ হয়। পাশাপাশি দুটি সন্তান টিউশনি করে তাদের পড়াশোনার খরচ চালায়। আমার বার্ষিক আয় পৌনে পাঁচ লাখ টাকা।

আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগের জবাবে মেয়র প্রার্থী মঞ্জু জানান, তিনি ৯ হাজার টাকার ভাড়া বাসায় থাকেন। সংসদ সদস্য থাকাকালীন ট্যাক্স ফ্রি গাড়িটি ২০ লাখ টাকার ঋণ ও নিজের পৌনে ৪ লাখ টাকায় কেনেন। ‘তেল কেনার পয়সা থাকলে গাড়িতে, না হয় রিকশায় বা দলের নেতাকর্মীদের মোটরসাইকেলে চড়েন’ বলেও উল্লেখ করেন তিনি। সিটি করপোরেশন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনে প্রশাসন ও সরকারকে নিরপেক্ষ থাকতে হবে।

তালকুদার আবদুল খালেকের উদ্দেশে মঞ্জু বলেন, ব্যক্তি চরিত্র হনন বন্ধ না হলে আমাদের কাছে এমন তথ্য আছে, যা প্রকাশ করলে তিনি মুখ দেখাতে পারবেন না। কিন্তু আমরা তা বলব না। আমরা কাদা ছোড়াছুড়ির রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না।

তিনি আরো বলেন, আমি ব্যবসা বা ঠিকাদারি করি না। টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, দখলদারির সঙ্গে জড়িত নই। আমি যে একজন স্বচ্ছ রাজনীতিবিদ তা খুলনাবাসীর কাছে নতুন করে তুলে ধরার প্রয়োজন নেই। খুলনা সিটি করপোরেশনের ‘বর্তমান মেয়র মনিরুজ্জামান মনির সঙ্গে যোগসাজশে মঞ্জু করপোরেশনের টাকা ভাগবাটোয়ারা করেছেন’- এমন অভিযোগকে তিনি আষাঢ়ে গল্প বলে উল্লেখ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থানীয় নেতা সাহারুজ্জামান মোর্ত্তজা, সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সেকেন্দার আলী ডালিম, আমির এজাজ খান, অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম, জাফরুল্লাহ খান, শেখ মোশাররফ হোসেন, মনিরুল হাসান বাপ্পী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বিভাগীয় কমিশনারের কাছে করা লিখিত অভিযোগে তালুকদার আবদুল খালেক উল্লেখ করেন, খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু জয়েন্ট স্টক কোম্পানির নিবন্ধনকৃত খুলনা প্রোপার্টিজ লিমিটেডের একজন শেয়ারহোল্ডার। তিনি ওই কোম্পানির ১ হাজার ৪শ’ শেয়ারের মালিক। কিন্তু এই তথ্য তিনি তার হলফনামায় গোপন করেছেন। যার ফলে তার মনোনয়নপত্র বাতিলযোগ্য। লিখিত অভিযোগের সঙ্গে তালুকদার খালেক মঞ্জুর মালিকানাধীন খুলনা প্রোপার্টিজ লিমিটেডের শেয়ারহোল্ডারদের নামের অনুলিপি সংযুক্ত করেছেন। তালুকদার খালেক তার অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মঞ্জুর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

এ ছাড়া মঞ্জুর অভিযোগের জবাবে মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে তালুকদার আবদুল খালেক বলেন, আমি হলফনামায় সাউথ-বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক লিমিটেডের বিষয়ে উল্লেখ করেছি। আমি নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি চেয়ারম্যান। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী কোনো ট্রাস্টি চেয়ারম্যান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আর্থিক সুবিধা পান না। যে কারণে আমি হলফনামায় নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির কথা উল্লে করিনি। আমার এলাকায় ইস্টার্ন পলিমার লি. নামে যে শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে তার সঙ্গে আমি জড়িত নই।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা এস কামাল হোসেন প্রশ্ন রেখে বলেন, বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু হলফনামায় উল্লেখ করেছেন, তার মাসিক আয় মাত্র ১৬ হাজার ৬৬৭ টাকা, যা বর্তমানে একজন রিকশাচালকের আয়ের চেয়েও কম। তাহলে নজরুল ইসলাম মঞ্জুর দেড় কোটি টাকার গাড়িটি চলে কি বাতাসে? আর চালক কি হাওয়া খেয়ে গাড়ি চালান?

সোনালীনিউজ/এমটিআই