সজীবকে বিয়ে করেছি, আমার আগের স্বামী একটা রোগী

  • নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মে ৩১, ২০১৮, ০৮:৫৬ পিএম

নারায়ণগঞ্জ: মাত্র ছয়দিনের মাথায় দ্বিতীয় স্বামীর হাত ধরে আবারো পালিয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা কৃষক লীগের সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিনের মেয়ে নাজিরা আক্তার মিতু। প্রথম স্বামী ইউসুফের রূপায়ন টাউনের ফ্ল্যাট থেকে সোমবার সকালে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটলেও তা প্রকাশ পায় মঙ্গলবার। এদিকে মিতু পালানোর ঘটনায় ভাইস চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিনের লোকজন নিয়ে প্রথম স্বামী ইউসুফ মিয়াসহ মিতুর দ্বিতীয় স্বামী আবুল হোসেন সজীবের সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইল এলাকার বাড়িতে গিয়ে মঙ্গলবার সকালে হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

ফলে মঙ্গলবার বিকেলে মিতু নিজে বাদী হয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় ইউসুফ মিয়া, সাদ্দাম ও কায়েসের নাম উল্লেখ করে একটি জিডি করেন। জিডি নং ১২৭৪। জিডিতে তিনি উল্লেখ করেন ২১শে মে আদালতে জবানবন্দি দিয়ে বের হওয়ার পর আদালতপাড়া থেকে তাকে জোর করে তুলে নিয়ে তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে আটকে রাখা হয়েছিল। আদালত তাকে তার নিজ জিম্মায় জামিন দিলে তিনি তার বর্তমান স্বামী আবুল হোসেন সজীবের কাছে যেতে চাইলে তাকে জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।

বর্তমানে সে বন্দিদশা থেকে পালিয়ে এলেও তার পূর্বের স্বামী দলবল নিয়ে তার বর্তমান স্বামীসহ পরিবারকে হুমকি ধমকি দিয়ে যায়। এতে সে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বলে উল্লেখ করেছে। উল্লেখ, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিনের মেয়ে নাজিরা আক্তার মিতু তার স্বামী ইউসুফ মিয়া ও তাদের দুই সন্তান নিয়ে ফতুল্লার ভূইগড় রূপায়ন টাউনে বসবাস করেন। এরমধ্যে সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইল এলাকার মৃত শামসুল হকের ছেলে এক সন্তানের জনক আবুল হোসেন সজীবের সঙ্গে পূর্ব পরিচয়ে মিতুর পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে উঠে।

এ ঘটনা সজীবের স্ত্রী সায়মা আক্তার জানতে পেরে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার বরাবর গত বছরের ২৩ আগস্ট একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। এতে উভয়পক্ষকে ডেকে শাসিয়ে দেন পুলিশ। এরপর গত মাসের ১৮ এপ্রিল দুই সন্তানকে রেখে রূপায়ণ টাউনের বাসা থেকে নাজিরা আক্তার মিতু পালিয়ে যায়। পরে ২৯ এপ্রিল ফতুল্লা মডেল থানায় জিডি করেন মিতুর স্বামী ইউসুফ মিয়া। তবে এর আগের দিন সজীবের ভাই সালাউদ্দিনও ২৮ এপ্রিল একই থানায় আরেকটি জিডি করেন। তার জিডিতে দাবি করা হয়, তার ভাই সজীবকে অপহরণ করা হয়েছে।

পরে ২৬ এপ্রিল মিতুর স্বামী ইউসুফ মিয়া বাদী হয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন মিতুর পরকীয়া প্রেমিক, তার ভাইসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে। এই মামলার প্রেক্ষিতে পুলিশ ২০ মে দুপুরে নাজিরা আক্তার মিতুকে ফতুল্লার সস্তাপুর থেকে উদ্ধার করে।

২১ মে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নারায়ণগঞ্জে অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অশোক কুমারের আদালতে নাজিরা আক্তার মিতুকে হাজির করে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ। আদালতে মিতু ২২ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেন। মিতু তার জবানবন্দিতে আদালতকে জানান, ‘তাকে কেউ অপহরণ করেনি। সে স্বেচ্ছায় তার প্রেমিক আবুল হোসেন সজীবের সঙ্গে পালিয়ে গিয়েছেন।’

আদালতে শুনানি শেষে মিতু সাবালক, স্বাভাবিক বিবেচনায় তাকে তার নিজ জিম্মায় ছেড়ে দেন। পরে মিতু আদালত থেকে বেরিয়ে জিআরও সেকশনে যান। সেখানে মিতুকে নিতে একদিকে পরকীয়া প্রেমিকের পরিবার অন্যদিকে তার দুই সন্তানসহ অন্য স্বজনরা অবস্থান নেয়। এমন পরিস্থিতে আদালত চত্বরে যখন জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। তখন দায়িত্বরত পুলিশ উভয়পক্ষকে জিআরও সেকশন থেকে বের করে দেন। এবং মিতুকে কিছুটা নিরাপদে বাইরে বের করে দিয়ে যান।

এ সময় আদালতের বাইরে মিতুকে বের করে দেয়ার পর এখানেও দুই পক্ষের টানাটানি শুরু হয় মিতুকে নিয়ে। এই পরিস্থিতিতে মিতু কোন দিকে যাবে নিজেও ঠিক করতে পারছিলেন না। এক পর্যায়ে মিতু তার বর্তমান স্বামী আবুল হোসেন সজীবের বাড়িতে যাওয়ার কথা বলে। এ সময় কৌশলে ফতুল্লা মডেল থানার পুলিশ মিতুকে তার বাবা সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিনের কালো রঙের নোহা মাইক্রোবাসে একরকম জোর করে তুলে দেন।

এর আগে নাজিরা আক্তার মিতু জানায়, সজীব তাকে অপহরণ করেনি। নিজ থেকে স্বেচ্ছায় সজীবের সঙ্গে এসেছি। সজীবকে আমি বিয়ে করেছি। আমার আগের স্বামীকে পূর্বেই তালাক দিয়েছি। মিতু আরো বলেন, আমাদের মধ্যে সম্পর্ক প্রায় তিন বছর যাবত। এ ঘটনা সবাই জানতেন। আমার আগের স্বামী একটা মানসিক রোগী।

সোনালীনিউজ/জেএ