‘ওর চিৎকার আমার বিবেককে স্পর্শ করে’

  • লালমনিরহাট প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মে ১২, ২০১৯, ০৪:৫২ পিএম

লালমনিরহাট: জেলার হাতিবান্ধা উপজেলার ভেলাগুড়ি ইউনিয়নের উত্তর জাওরানী এলাকার একটি স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী রিক্তা আক্তার মুন্নি। গত ৭ এপ্রিল দুপুরে ট্রলির চাপায় ডান পা পিষ্ট হয়ে যায় শিশুটির। সেই থেকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের অর্থো-সার্জারি (নারী) ইউনিটের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছে মুন্নি।

পায়ে ড্রেসিংয়ের সময় ওর চিৎকার নাড়া দেয় চিকিৎসকের হৃদয়কে। মুন্নি স্বপ্ন দেখে আগের মতো আবারও স্কুলে যাবে সে; বন্ধুদের সঙ্গে দৌড়াদৌড়ি আর হইহুল্লড়ে মেতে উঠবে।

উত্তর জাওরানী সন্যাসীর ডাঙা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী মুন্নির বাবা আব্দুল কুদ্দুস ভুট্ট একজন কৃষি শ্রমিক। বাবা আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘কায়িক শ্রম বিক্রি করে কোনও রকমে সংসার চলে। এর মধ্যে মেয়ের চিকিৎসা করাতে গিয়ে সবকিছু হারিয়েছি। একমাসের বেশি হয়ে গেল মা (মেয়ে) এখনও সুস্থ হলো না। আর কতদিন লাগবে? কেউ কিছু বলতে পারে না। পকেটে টাকাও নেই, চিকিৎসা করাবো কীভাবে?’ কথাগুলো বলতে গিয়ে কান্নায় কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

মুন্নির মা রবিলা খাতুন বলেন, মেয়েটা হাসপাতালে থাকতে থাকতে শুকিয়ে যাচ্ছে। তার পরিণতি আমরা কিছুই জানি না। আপনারা আমার মেয়ের জন্য দোয়া করবেন।

মুন্নির প্রধান চিকিৎসক রংপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের অর্থো-সার্জারি বিভাগের সহকারী রেজিস্টার ডা. মো. জিয়াউর রহমান বলেন, এখন মুন্নিকে আশঙ্কামুক্ত বলা যেতে পারে। তবে তার ডান পা আগের অবস্থায় না পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তাকে দ্রুত সুস্থ করতে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। কিন্তু আরও কত সময় লাগবে, তা বলা যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, মুন্নিকে যখন ড্রেসিং করানো হয়, তখন ওর চিৎকার আমার বিবেককে স্পর্শ করে, আমিও কাঁদি। তাকে আমার মেয়ের আদরে চিকিৎসা করছি। উন্নত চিকিৎসা করানোর জন্য মুন্নির বাবা-মায়ের আর্থিক সামর্থ্য নেই।

অর্থো-সার্জারি (নারী) ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ নার্স সাবিনা ইয়াসমিন ও ওয়ার্ড বয় মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, হাসপাতালে উপযুক্ত পরিবেশ না থাকায় সুচিকিৎসা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোগী অনেক বেশি। তাদের জায়গা দিতেই হিমশিম খেতে হয়। পাঁচটি পেয়িং বেড ও ১১টি জেনারেল বেডে ১৬ জন রোগী থাকার কথা, কিন্তু ৫৯ জন রোগী আছে। এতে ঠাসাঠাসি করে রোগীদের থাকতে হচ্ছে।

হাসপাতালটির সহকারী রেজিস্টার ডা. রায়হান আলী বলেন, যদি সড়ক দুর্ঘটনা না ঘটে, আপনি এই অর্থো-সার্জারি ওয়ার্ডে কোনও রোগীই পাবেন না। অথচ এখন বেড়ের চেয়ে রোগী অনেক বেশি। সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করতে না পারলে, আরও খারাপ অবস্থা দেখতে হবে। দীর্ঘ সময় চিকিৎসাধীন থাকলে এক সময় রোগীদের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।

ওই এলাকার শামছুদ্দিন-কমর উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, অসহায় মুন্নির সুচিকিৎসার জন্য সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসা উচিত। শিশুটি বাঁচতে ও লেখাপড়া করতে চায়।

মুন্নির বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মজিবর রহমান বলেন, মুন্নিকে বাঁচাতে আমরা সাধ্যমতো সহযোগিতা করেছি। মেধাবী এই শিশুটির দুরন্তপনা চোখের সামনে দমে যেতে পারে না। বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ স্যারকে জানানো হয়েছে।

সোনালীনিউজ/এমএইচএম