ঋণখেলাপি নিয়ে ব্যাংকের নীতিমালায় আরো ২ মাস স্থিতাবস্থা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুন ২৪, ২০১৯, ০৫:১৭ পিএম

ঢাকা: ঋণখেলাপিদের জন্য বিশেষ সুবিধা দিয়ে জারি করা বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ঋণ পুনঃতফসিল ও এককালীন পরিশোধ-সংক্রান্ত বিশেষ নীতিমালা’র ওপর আরও দুই মাস স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে বলেছেন হাইকোর্ট।

এ-সংক্রান্ত এক সম্পূরক আবেদনের শুনানি নিয়ে সোমবার (২৪ জুন) হাইকোর্টের বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মনিরুজ্জামান।

এর আগে গত ২১ মে ২৪ জুন পর্যন্ত স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে বলেছিলেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য সোমবার (২৪ জুন) দিন নির্ধারণ করেছিলেন আদালত।

আইনজীবী মনজিল মোরসেদ জানান, ঋণখেলাপিদের নতুন করে একটা সুযোগ দিয়ে ২ শতাংশ (ডাইন-পেমেন্ট) সুদ জমা দিয়ে ১০ বছরের জন্য ঋণ পুনঃতফসিলের সার্কুলার দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ সার্কুলারের বিষয় নিয়ে গত ১৬ মে আমরা আদালতকে অবহিত করি। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আইনজীবী জানান, এ-সংক্রান্ত কোনো সার্কুলার তারা দেননি। পরে আদালত ঋণখেলাপিদের তালিকা দেয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু দেখা যায়, ১৬ মে বিকেলেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েব সাইটে সার্কুলার জারি করা হয়।

মনজিল মোরসেদ জানান, পরে আমরা ওই সার্কুলার চ্যালেঞ্জ করি। ২ শতাংশ ডাউন-পেমেন্ট দিয়ে ঋণখেলাপিরা খেলাপির হাত থেকে মুক্তি পাবে, এ কারণে সিআইবিতে তাদের নাম থাকবে না। তখন নতুন করে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে যাবে। এতে ব্যাংকের মেরুদণ্ড ভেঙে যাবে। এ কারণে আদালতের কাছে আবেদন জানিয়েছিলাম, মামলার শুনানি না হওয়া পর্যন্ত সার্কুলারের কার্যক্রম স্থিতিবস্থা রাখার জন্য। আদালত ২৪ জুন পর্যন্ত সার্কুলারের কার্যক্রমের ওপর স্থিতাবস্থা দিয়েছেন।

২০ বছর ধরে এক কোটি টাকার ওপরে ঋণখেলাপিদের তালিকা, ঋণের পরিমাণ এবং সুদ মওকুফের তালিকা চাইলেও বাংলাদেশ ব্যাংক সেটি না দেয়ায় গত ৩০ এপ্রিল ক্ষোভ প্রকাশ করেন আদালত।

এর আগে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি এক আদেশে ঋণখেলাপিদের তালিকা দাখিলের নির্দেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে রুলও জারি করেন। রুলে আর্থিক খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা বন্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন, ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেকউপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ, সিটি ব্যাংকের সাবেক সিইও মামুন রশিদ,বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন প্রতিনিধি ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধির সমন্বয়ে কমিশন গঠনে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না এবং এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।

রুলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রী সচিবালয়ের সচিব, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের দুই সচিব, আইন সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের চার সপ্তাহের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়।

উল্লেখ্য, গত ১৬ মে বাংলাদেশ ব্যাংক এক সার্কুলারের মাধ্যমে দেশের ঋণখেলাপিদের নিয়মিত হওয়ার সুযোগ করে দেয়। এর ফলে ঋণখেলাপিরা মাত্র দুই শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়েই ঋণ পুনঃতফসিল করতে পারবেন। পুনঃতফসিল হওয়া ঋণ পরিশোধে তারা সময় পাবেন টানা ১০ বছর। প্রথম এক বছর কোনো কিস্তি দিতে হবে না। ওই সার্কুলারের কারণে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিরাও এখন থেকে ঋণ পুনঃতফসিল করার সুযোগ পাবেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, খেলাপিরা ব্যাংকের টাকা ফেরত দেয়া শুরু করলে নিয়মিত গ্রাহকদের চেয়েও খেলাপি গ্রাহকদের কম সুদ দিতে হবে। চিহ্নিত এ ঋণখেলাপিদের গুণতে হবে ৯ শতাংশেরও কম সুদ।

সোনালীনিউজ/এমএইচএম