থাপ্পড়ের প্রতিশোধ নিতে ৩ খুন!

  • সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৯, ০৪:২৮ পিএম

নারায়ণগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ফ্ল্যাট বাসায় দুই শিশুকন্যাসহ মাকে হত্যার দায় স্বীকার করেছে ধরা পড়া আব্বাস (৩২)। আব্বাস তার ভায়রা (শ্যালিকার স্বামী) সুমনের চড়-থাপ্পড় মারার ক্ষোভ থেকেই শ্যালিকা নাজনীন ও তার দুই মেয়েকে খুন করার পরিকল্পনা করে বলে জানিয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) হারুন আর রশীদ।

আব্বাসের প্রাথমিক স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসপি এ তথ্য জানান।

আব্বাস আদালতেও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ কোর্টের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান। তিনি জানান, গতকাল শুক্রবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট  মুহাম্মদ মিল্টন হোসেনের আদালতে হত্যাকাণ্ডের রোমহর্ষক বর্ণনা দিয়ে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন আব্বাস।

তার আগে সংবাদ সম্মেলনে এসপি জানান, আব্বাস পটুয়াখালী জেলা সদরের পইক্কা গ্রামের আবুল কালামের ছেলে। তিনি সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি বাতানপাড়া এলাকায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ভাড়া থাকতেন।

গত বৃহস্পতিবার সকালে হত্যাকাণ্ডের পর বিকেলে আব্বাসকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাকে উপস্থিত রেখে রাতে জেলা পুলিশ লাইনে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জানান, প্রযুক্তি ব্যবহার করে সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভেতরে একটি কমিউনিটি সেন্টার থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। সে ইয়াবাসক্ত।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার দায় স্বীকার করে আব্বাস জানায়, তার স্ত্রী ইয়াসমিন ও মেয়ে সুমাইয়া প্রায় সময় রাগ করে ভায়রার বাসায় চলে যেত। এসব বিষয় নিয়ে একবার ভায়রা সুমন তাকে চড়-থাপ্পড় মেরেছিল। শ্যালক হাসানও শাসাতো। ওই জিদ থেকেই শ্যালিকা ও তার সন্তানদের হত্যার পরিকল্পনা করে আব্বাস, যাতে তার স্ত্রী আর ওই বাসায় যেতে না পারে। গত বুধবার রাতে স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া করে স্ত্রী ইয়াসমিন মেয়ে সুমাইয়াকে নিয়ে বোনের বাসায় চলে যায়।

পূর্বপরিকল্পনা মতে, বৃহস্পতিবার সকালে একটি ধারালো অস্ত্র নিয়ে আব্বাস তার ভায়রার বাসায় আসে। এ সময় স্ত্রী ইয়াসমিন ও ভায়রা সুমন বাসায় না থাকার সুযোগে প্রথমে শ্যালিকা নাজনীন, পরে তার শিশুকন্যা নুসরাত ও খাদিজাকে গলা কেটে হত্যা করে। এমনকি নিজের মানসিক প্রতিবন্ধী মেয়ে সুমাইয়াকেও গুরুতর জখম করে পালিয়ে যায় আব্বাস। ঘটনাটি আব্বাস একাই ঘটিয়েছে উল্লেখ করে পুলিশ সুপার জানান, আরো তথ্য জানার জন্য তাকে রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হবে।

আব্বাসের স্ত্রী ইয়াসমিন বলেন, আমি আদমজী ইপিজেডের সুপ্রিম গার্মেন্টসের সুইং মেশিন অপারেটর। সে (আব্বাস) কোনো কাম-কাজ করে না। বেতন পেলেই নেশা করার জন্য টাকা নিয়ে নিত। এ নিয়ে কিছু বললেই আমাকে ও মেয়েকে মারধর করত। এ কারণে মাঝে মাঝে রাগ করে মেয়েকে নিয়ে ছোট বোনের বাসায় চলে যেতাম। ঘটনার দিন আমি সকাল সাড়ে ৭টায় বোনের বাসা থেকে কাজে চলে যাই। দশটার পরে খুনের কথা জানতে পারি।  

এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আব্বাসকে আসামি করে নিহত নাজনীনের স্বামী সুমন বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার রাতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলা করেছেন বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকতা পরিদর্শক (তদন্ত) আজিজুল হক।

এদিকে শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ময়না তদন্ত শেষে তিনজনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

তিনজনের গলা কেটে মেয়েকেও কোপান আব্বাস : নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে মা-মেয়েসহ তিনজনকে গলা কেটে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত আব্বাস মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। স্ত্রীর সঙ্গে বিরোধের জেরে গলা কেটে হত্যা করেন শ্যালিকা নাজনীন ও তার দুই মেয়ে নুসরাত (৫) ও সুনাইনা ওরফে খাদিজাকে (১)। এ সময় নিজের মেয়ে প্রতিবন্ধী সুমাইয়াকেও কুপিয়ে রক্তাক্ত করে আব্বাস।

বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সিদ্ধিরগঞ্জের সিআই খোলা এলাকার একটি ছয়তলা ভবনের ভাড়া বাসায় এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে সেখান থেকে নাজনীন ও তার দুই মেয়ের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। আহত সুমাইয়াকে (১৫) আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) হারুন অর রশীদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশ জানায়, আব্বাস মাদক সেবন করে প্রায়ই তার স্ত্রী ইয়াসমিন ও প্রতিবন্ধী সন্তান সুমাইয়াকে (১৫) মারধর করত। তার অত্যাচার থেকে রেহাই পেতে

সুমাইয়াকে নিয়ে বোন নাজনীন বেগমের ভাড়া বাসায় চলে গিয়েছিলেন ইয়াসমিন। কিন্তু আব্বাস ইয়াসমিনের খোঁজে সেখানে গিয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।

ইয়াসমিন জানান, তিনি আদমজী ইপিজেডে একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। তার স্বামী আব্বাস মিয়া মাদকাসক্ত। প্রতিবন্ধী মেয়ে সুমাইয়াকে মারধরের কারণে তাকে নিয়ে গত বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাতে ছোট বোন নাজনীনের বাসায় চলে আসেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৭টায় তিনি কারখানায় যান। এর পরই হত্যাকাণ্ডটি ঘটায় আব্বাস।

ইয়াসমিনের ছোট ভাই হাসান জানান, ইয়াসমিন তার মেয়েকে নিয়ে নাজনীনের বাসায় চলে আসার পর আব্বাসও রাতে এই বাসায় চলে আসে। কিন্তু ইয়াসমিন কারখানায় চলে গেলে কলহের বিষয়গুলো নিয়ে শ্যালিকার সঙ্গে বিবাদে জড়ায় আব্বাস। এরপর তিনজনকে গলা কেটে হত্যা এবং নিজের মেয়েকেও কুপিয়ে জখম করে পালিয়ে যায়।

হাসান তার বোন হত্যার বিচার দাবি করেছেন এবং অভিযুক্ত আব্বাসের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন।

এদিকে নিহত নাজনীনের স্বামী সুমন বলেন, প্রতিদিনের মতোই আমি কাজে গিয়েছিলাম। আমি একটি পেট্রোল পাম্পে ডিউটি করি। কাজ শেষ হলে সকাল ১০টায় বাড়ি ফিরি আর ঘরের দরজা খোলা দেখতে পাই। ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখি বউ আর দুই মেয়ের গলাকাটা রক্তাক্ত মরদেহ। সুমাইয়াও রক্তাক্ত অবস্থায় ঘরে পড়ে ছিল।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) হারুন অর রশীদ বলেন, আব্বাসের সঙ্গে তার স্ত্রীর বিরোধ ছিল। ওই বিরোধের কারণে জিদ করে আব্বাসের শ্যালিকার বাসায় চলে আসেন তার স্ত্রী। তিনি একটি গার্মেন্টে চাকরি করেন। সকালে তিনি কারখানায় চলে যান। শ্যালিকার সঙ্গে আলাপকালে কোনো বিরোধের জের ধরেই তাকে ও তার দুই মেয়েকে হত্যা করেন আব্বাস। নিজের প্রতিবন্ধী মেয়েকেও জখম করেন তিনি।

আব্বাসকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

সোনালীনিউজ/এমটিআই