অন্যের হয়ে জেল খাটা সেই মিনু কারামুক্ত

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুন ১৬, ২০২১, ০৪:২৬ পিএম

ঢাকা: চট্টগ্রামের একটি হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি কুলসুম আক্তার ওরফে কুলসুমের পরিবর্তে জেল খাটা নিরপরাধ মিনু মুক্তি পেয়েছেন। 

বিনা দোষে তিন বছর সাজা ভোগের পর বুধবার (১৬ জুন) বিকেল চারটার দিকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান মিনু।

এর আগে চট্টগ্রাম অতিরিক্ত চতুর্থ মহানগর দায়রা জজ শরীফুল আলম ভূঁঞার আদালত নিরপরাধ মিনুকে মুক্তির আদেশ দেন।

বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন মিনুকে আইনি সহায়তা দেয়া আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ। 

মুক্তি পাওয়ার পর জেলগেটে মিনু জানান, মর্জিনা তাকে ইফতারি, চাল, ডাল এসব দিবে বলে তাদের সঙ্গে যেতে বলে। কুলসুম নাম ডাকলে তাকে হাত তুলতে বলেন। পরে তাকে একটা জায়গায় নিয়ে যান। তার নাম ডাকলে হাত তোলেন। পরে তাকে জেলে নিয়ে যাওয়া হয়।

এদিকে মিনুর বিষয়টি সামনে আসার পর সম্প্রতি তাকে মুক্তি দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি মূল আসামি কুলসুমকে দ্রুত গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়া হয়।

একইসঙ্গে কুলসুমের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে যারা হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেছেন সেই আইনজীবী ও তদবিরকারীদের তলব করেছেন আদালত। আগামী ২৮ জুন হাইকোর্টে হাজির হয়ে এ বিষয়ে উপযুক্ত ব্যাখ্যাসহ জবাব দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি কুলসুম আক্তারের হয়ে জেল খাটা মিনুর বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন আইনজীবী শিশির মনির।

তার আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ আইনজীবীকে এফিডেভিট দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন।

এরপর আদালতের এখতিয়ার পরিবর্তন হওয়ার বিষয়টি বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেনের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে শুনানির জন্য আসে।

হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন দণ্ড পাওয়া আসামির বদলে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে দুই বছর ৯ মাস ধরে জেল খাটছেন মিনু। এ ঘটনা জানাজানি হলে মামলার নথি হাইকোর্টে পাঠানোর নির্দেশ দেন চট্টগ্রাম অতিরিক্ত চতুর্থ মহানগর দায়রা জজ।

চট্টগ্রামে হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত কুলসুমের পরিবর্তে মিনুর সাজা খাটার ঘটনায় মামলার নথি হাইকোর্টে আসে ২৪ মার্চ।

কারা কর্তৃপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মিনুকে আদালতে হাজির করা হলে নতুন করে তার জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। সেই সঙ্গে মামলার নথি হাইকোর্টে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক শরীফুল আলম ভূঁঞা। পরে নথি একদিনের মধ্যেই হাইকোর্টে আসে।

কারাগারে বালাম বই খুঁজতে গিয়ে বিষয়টি উঠে আসে। এরপর বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরে বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন চট্টগ্রামের আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ।

প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, আদালতে হাজির হয়ে তিন সন্তানের জননী মিনু তার জবানবন্দিতে জানান, সময়টি ছিল ২০১৮ সালের রমজান মাস। ইফতারি দেয়ার কথা বলে কুলসুম ও মর্জিনা নামের দুজন আদালতে মিনুকে নিয়ে যান। মিনুকে বলা হয়েছিল ‘কুলসুম’ নাম ডাকা হলে তিনি (মিনু) যেন হাত তোলেন। সে অনুযায়ী হাত তোলার পর কর্তৃপক্ষ তাকে ‘কুলসুম’ হিসেবে চিহ্নিত করে কারাগারে পাঠায়। মিনুকে এভাবে কৌশলে অপরাধী সাজানো কুলসুম একটি হত্যা মামলার আসামি।

২০০৬ সালের জুলাইয়ে চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালি থানার রহমতগঞ্জ এলাকায় একটি আমগাছে ঝুলন্ত অবস্থায় পারভীন নামের এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তদন্তে বেরিয়ে আসে, পারভীনকে শ্বাসরোধে হত্যা করে আত্মহত্যা হিসেবে প্রচারের জন্য গাছে ঝুলিয়ে রাখেন কুলসুম। ২০০৭ সালের ২৬ অক্টোবর কুলসুমকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। এক বছর তিন মাস পর তিনি জামিনে মুক্তি পান।

২০১৭ সালে মামলার রায় ঘোষণা করেন তখনকার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক নুরুল ইসলাম। তাতে কুলসুমকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। সে সময় কুলসুম পলাতক ছিলেন।

পরে আইনজীবী নাছির উদ্দীনের মাধ্যমে ২০১৮ সালের জুনে কুলসুম আত্মসমর্পণ করতে চান। আত্মসমর্পণের দিনই মিনুকে কুলসুম হিসেবে সাজিয়ে আদালতে হাজির করা হয়। তখন থেকেই কারাগারে মিনু।

সোনালীনিউজ/আইএ