হাসনাতের ব্যাপারে সন্দেহাতীত প্রমাণ চায় গোয়েন্দারা

  • বিশেষ প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: আগস্ট ১৬, ২০১৬, ১০:২৪ এএম

গুলশান হামলার ঘটনায় গ্রেফতার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত রেজা করিমের সম্পৃক্ততার বিষয়ে  সন্দেহাতীতভাবে নিশ্চিত হতে চায় গোয়েন্দারা। এ নিয়ে নানামুখী তদন্ত শুরু হয়েছে। কিছু আলামতে হাসনাতের জড়িত থাকার বিষয়ে প্রাথমিক সত্যতা মিললেও এত বড় ঘটনার তদন্তে সময় প্রয়োজন। পুরো তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত হাসনাতের সম্পৃক্ততার বিষয়ে শতভাগ নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।

এজন্য তার মোবাইল ফোনের ফরেনসিক পরীক্ষার প্রতিবেদনের অপেক্ষা করছেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা, যা চলতি সপ্তাহেই হাতে পাওয়ার কথা রয়েছে। এ ছাড়া হামলার পর জিম্মি দশা থেকে উদ্ধার হওয়া প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্যও যাচাই করা হচ্ছে। হামলাকারী জঙ্গিদের সঙ্গে হাসনাতের আগে কোনো যোগাযোগ ছিল কি-না, তা নিশ্চিত হতে চলছে প্রযুক্তিগত তদন্ত। পাশাপাশি হাসনাতকেও রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রয়েছে। গুলশান হামলা মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার পর জিম্মি হিসেবেই ভেতর থেকে উদ্ধার হয়েছিলেন হাসনাত করিম ও তার স্ত্রী-সন্তান। তবে হামলার সময় পাশের কোনো বাসা থেকে ধারণ করা একটি ভিডিও ফুটেজে রেস্তোরাঁর ভেতর হাসনাত ও তাহমিদ হাসিব খান নামের এক তরুণের সন্দেহজনক গতিবিধি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোয় তোলপাড় শুরু হয়। ওই ঘটনায় দায়ের মামলার তদন্ত সংস্থা কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ওই দু'জনকে সন্দেহভাজন হিসেবে আট দিনের রিমান্ডে নেয়। গত শনিবার তাদের দু'জনকে আদালতে হাজির করে হাসনাত করিমকে মূল মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে নতুন করে আট দিনের রিমান্ডে নেন তদন্ত কর্মকর্তা। তাহমিদকে সন্দেহজনক হিসেবেই নতুন করে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।

গত রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার আবদুল বাতেন জানান, গুলশানের ঘটনায় হাসনাত করিমের জড়িত থাকার ব্যাপারে 'প্রাথমিক সত্যতা' পাওয়া গেছে। এজন্যই তাকে গুলশান হামলা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

তবে গতকাল সোমবার মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, কিছু আলামতে হাসনাতের জড়িত থাকার বিষয়ে প্রাথমিক সত্যতা মিললেও সন্দেহাতীতভাবে তার সম্পৃক্ততার বিষয়ে নিশ্চিত হতে নানামুখী তদন্ত শুরু হয়েছে। এত বড় ঘটনায় তদন্তে সময় প্রয়োজন। পুরো তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত হাসনাতের সম্পৃক্ততার বিষয়ে শতভাগ নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয়।

ওই কর্মকর্তা বলেন, রিমান্ডে হাসনাত করিম নিজের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করছেন। তদন্ত কর্মকর্তাদের হাতে তার বিষয়ে যেসব আলামত রয়েছে, সেগুলোর ভিত্তিতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রয়েছে। আরও কিছু আলামত পাওয়া গেলে তাকে সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা সম্ভব হবে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছেন, হামলাকারী জঙ্গিরা 'উইকার' নামে বিশেষ অ্যাপের মাধ্যমে ভেতর থেকে বাইরে তাদের 'বড় ভাই'দের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। ওই অ্যাপটি হাসনাত করিমের মোবাইল ফোনসেটে পাওয়া গিয়েছিল। নিজের মোবাইল ফোনে এটি তিনিই ডাউনলোড করেছিলেন, নাকি তা করতে বাধ্য হয়েছিলেন, তা নিশ্চিত হতে ফোনটি সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। এর প্রতিবেদন পাওয়া গেলে অনেক তথ্য নিশ্চিত হওয়া যাবে। এ ছাড়া হলি আর্টিসানে জিম্মি অবস্থা থেকে উদ্ধার হওয়া অন্তত ৪০ জন প্রত্যক্ষদর্শী তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে ১৬১ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। গত রোববার পর্যন্ত ১০ থেকে ১২ জন আদালতে সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শী এসব ব্যক্তির দেওয়া জবানবন্দিতে হাসনাত রেজা করিমের বিষয়ে কোনো তথ্য রয়েছে কি-না, তা যাচাই করা হচ্ছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, হাসনাত করিম জঙ্গি হামলায় সম্পৃক্ত থাকলে কোনো না কোনো সময়ে হামলাকারী জঙ্গি বা হামলায় অংশ নেওয়া নিষিদ্ধ জেএমবির জঙ্গিদের সঙ্গে তার যোগাযোগ থাকার কথা। এ ধরনের কোনো যোগাযোগ ছিল কি-না, তার প্রযুক্তিগত তদন্ত চলছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইউ