মীর কাসেমের ফাঁসি কার্যকর কাশিমপুরেই

  • জুবায়ের রহমান চৌধুরী, বিশেষ প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩, ২০১৬, ১২:২৬ পিএম

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এর ফলে ফাঁসির দড়িতে ঝুলতেই হচ্ছে তাকে। এখনও গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে বন্দি আছেন।

আর কৃতকর্মের দায় স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে কোনো প্রাণভিক্ষা চাইবেন না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন। এর ফলে এখন কারা কর্তৃপক্ষ যে কোনো সুবিধামতো সময়ে দণ্ড কার্যকর করতে পারবে। শুক্রবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে গাজীপুর কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার ২-এর জ্যেষ্ঠ জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিক এ বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।

জেল সুপার জানান, ‘শুক্রবার দুপুরে কারা কর্তৃপক্ষ মীর কাসেমকে প্রাণভিক্ষার আবেদনের ব্যাপারে পুনরায় জিজ্ঞাসা করে। তখন তিনি প্রাণভিক্ষার আবেদন করবেন না বলে জানিয়েছেন।’ এখন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পেলে কারা কর্তৃপক্ষ রায় বাস্তবায়নের পথে যাবে। রায় বাস্তবায়নের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন আছে বলেও জানায় কারা কর্তৃপক্ষ।

জেলার নাসির আহমদ জানান, মীর কাসেম আলীকে ৪০ নম্বর কনডেম সেলে রাখা হয়েছে। তিনি সুস্থ আছেন। কারাগারের চিকিৎসকরা তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছেন। তাঁকে স্বাভাবিক খাবার দেয়া হয়েছে। কারাগার সূত্র জানায়, মীর কাসেমের ফাঁসি কাশিমপুরে হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কারাগারে ফাঁসির মঞ্চ আছে একটি। মঞ্চটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। মোম মাখানো দড়িতে বালুর বস্তা দিয়ে প্রাথমিক মহড়া সম্পন্ন হয়েছে। প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে জল্লাদ শাহজাহান, রাজু, পল্টুসহ কয়েকজনকে। এই জল্লাদ দল এর আগে যুদ্ধাপরাধের মামলায় দণ্ডিত আসামি মতিউর রহমান নিজামী, কাদের মোল্লা, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকর করেছিল।

এমনিতেই কারাগারটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সমন্বয়ে নিরাপত্তা বেষ্টিত। এরপরও যেহেতু এখানে কোনো যুদ্ধাপরাধীর দণ্ড প্রথমবারের মতো কার্যকর হতে যাচ্ছে, তাই আজ সকাল থেকেই কারাগার এলাকায় বাড়তি নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে। কারা ফটকের সামনে কাউকে অযথা দাঁড়াতে দিচ্ছেন না নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মীরা। কারাগার ও আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত নিরাপত্তাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।

এ ছাড়া ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক থেকে কাশিমপুর কারাগারে যাওয়ার সড়কেও যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত মীর কাসেম আলীর রায় বহাল রাখেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। তাঁর পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ করে এ রায় দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহার নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ।

এ দিন রাত ১২টা ৪৮ মিনিটে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মীর কাসেম আলীর রিভিউ খারিজ সংক্রান্ত রায়ের কপি কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার ২-এ পৌঁছানো হয়। রাত অনেক বেশি হওয়ায় তখন মীর কাসেম আলীকে তা পড়ে শোনানো হয়নি। পরদিন (৩১ অাগস্ট) সকাল সাড়ে ৭টায় আনুষ্ঠানিকভাবে রায় পড়ে শোনানো হয়।

এদিন বিকেলে মীর কাসেম আলীর স্ত্রী খন্দকার আয়েশা খাতুন কারাগারে স্বামীর সঙ্গে দেখা করার পর কারা ফটকে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, মীর কাসেম আলী রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার সিদ্ধান্তের জন্য তাঁর ছেলে ব্যারিস্টার মীর আহমেদ বিন কাসেমের (আরমান) জন্য অপেক্ষা করছেন। তাঁর ছেলে ২৩ দিন ধরে নিখোঁজ রয়েছে।

৬৩ বছর বয়সী মীর কাসেম আলী ২০১২ সালে গ্রেফতারের পর থেকে এ কারাগারে রয়েছেন। ২০১৪ সালের আগে তিনি এ কারাগারে হাজতবাসকালে ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দির মর্যাদায় ছিলেন। পরে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তির পর তাঁকে ফাঁসির কনডেম সেলে পাঠানো হয়।

সূত্র জানায়, দেশের ৬৮টি কারাগারের মধ্যে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ একটি ব্যতিক্রমী ও আধুনিক সুযোগ সুবিধাসম্পন্ন কারাগার। সেখানে বন্দিদের থাকার জন্য রয়েছে ছয়তলাবিশিষ্ট ছয়টি ভবন। প্রতিটি ফ্লোরে রয়েছে ২১টি করে ওয়ার্ড। এই কারাগারে ফাঁসির আসামিদের জন্য আছে ৪০টি কনডেম সেল, যার একটিতে রয়েছেন মীর কাসেম আলী।

২০১৪ সালের ২ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মীর কাসেম আলীকে দুটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড এবং আটটি অভিযোগে সব মিলিয়ে ৭২ বছরের কারাদণ্ড দেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে তিনি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করেন। আপিলের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে গত ৮ মার্চ আপিল বিভাগ শুধু কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিন আহমেদকে খুনের দায়ে (১১ নম্বর অভিযোগ) ফাঁসির আদেশ বহাল রাখেন। এ ছাড়া আরো ছয় অভিযোগে ৫৮ বছর কারাভোগের সাজা বহাল রাখেন।

গত ৬ জুন আপিল বিভাগ মীর কাসেমের ফাঁসি বহাল রেখে ২৪৪ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন।

মীর কাসেম ১৯ জুন ফাঁসির দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে রিভিউ আবেদন দাখিল করেন। মোট ৮৬ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদনে ১৪টি যুক্তি উত্থাপন করে ফাঁসির দণ্ড থেকে খালাস চান তিনি। এই রিভিউ আবেদনের ওপর ২৪ আগস্ট শুনানি শুরু হয়।

পরে ২৮ আগস্ট শুনানি গ্রহণ শেষ করে ৩০ আগস্ট রায়ের দিন ধার্য করা হয়। ৩০ আগস্ট মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ রিভিউ আবেদন খারিজের রায় ঘোষণা করেন।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি