জঙ্গি পতাকা ও অস্ত্র নিয়ে ফেসবুকে দুই ভাই

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৬, ১১:১৮ পিএম

পেছনে আইএসের পতাকা আর সঙ্গে অস্ত্র নিয়ে ইব্রাহিম হাসান খান ও জুনায়েদ হোসেন খান নামের দুই যুবক উঁকি দিয়ে গেছেন ফেসবুকে আসা এক ছবিতে, তাদের নাম রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রকাশিত নিখোঁজদের তালিকায়ও।  

গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার পর নিখোঁজ ১০ যুবকের যে প্রথম তালিকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রকাশ করেছিল, সেখানে ওই দুই ভাইয়ের নাম আসে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে সে সময় বলা হয়েছিল, ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা এই দুই ভাই এবং তার পরিবারের সদস্যরা প্রায় এক বছর ধরে নিরুদ্দেশ। বুধবার রাতে ইব্রাহিম হাসান খানের ফেসবুক পৃষ্ঠায় ওই ছবি প্রকাশের পর বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে তা সরিয়ে অথবা গোপন করে ফেলা হয়। অবশ্য তৎক্ষণে ওই ছবির স্ক্রিন শট নিয়ে রেখেছেন অনেকেই।

ওই ফেসবুক পেইজ যে ইব্রাহিমের এবং ছবিতে যে তাদের দুই ভাইকেও দেখা গেছে, তা নিশ্চিত করেছেন তাদের পরিচিত একজন। সকালে ফেসবুকের টাইমলাইনে ইব্রাহিম আর ওর বড় ভাই জুনায়েদের ছবি দেখে চমকে উঠেছিলাম। ইব্রাহিমের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গিয়ে দেখলাম ছবিতে আরেকজন আছে। পেছনে আইএসের মতো পতাকা। কখনো ভাবিনি এমন কিছু ঘটেছে, বললেন মালয়েশিয়ার সুইনবার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ফারহান ইসলাম, যিনি একসময় সৌদি আরবে ইব্রাহিমের সঙ্গে একই স্কুলে পড়েছেন। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের উপকমিশনার মহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, তারা ইতিমধ্যে এ বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছেন।

ওই ছবিতে তিন তরুণের গায়েই দেখা যায় কালো পোশাক; প্রত্যেকের হাতে পানীয়র গ্লাস। সামনের টেবিলে ও চেয়ারের পাশে দেখা যায় রাইফেল ও পিস্তলের মতো অস্ত্র।
ছবিতে তিনজনের মাঝে সানগ্লাস পরা যে যুবককে দেখা যায়, তিনি ইব্রাহিম এবং তার পাশে লাল পাগড়ি পরিহিত যুবক জুনায়েদ বলে ফারহান জানান। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার যে বাড়িতে ইব্রাহিম-জুনায়েদের পরিবার থাকত, সেই ভবনের ফ্ল্যাট মালিক সমিতির সহসভাপতি শাহাদত হোসেন বাচ্চু জানান, বছরখানেক ধরে ওই পরিবার ‘দেশে নেই’।

বাচ্চুর তথ্য অনুযায়ী, ইব্রাহিম ও জুনায়েদের বাবা মুনির হাসান খান সৌদি আরবে থাকতেন। এক বছরের বেশি সময় আগে একবার তিনি বাবা ও দুই ছেলেকে একসঙ্গে দেখেছিলেন। ‘তিনি (মনির) দেখতে বেশ লম্বা, মুখে দাড়ি আছে। ছেলেরাও তার মতোই লম্বা ও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী। তারা বেশি দিন ঢাকায় থাকতেন না।’ইব্রাহিমের ফেসবুকে বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, ইংলিশ সেকশন, রিয়াদের সাবেক শিক্ষার্থীদের পুনর্মিলনীর বেশ কিছু ছবি দেখা যায়। একসময় ওই স্কুলেই ইব্রাহিমের পরের ক্লাসের ছাত্র ছিলেন ফারহান, যিনি বর্তমানে মালয়েশিয়ার সুইনবার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষে পড়ছেন, পালন করছেন স্টুডেন্টস ইউনিয়নের সভাপতির দায়িত্ব।

তিনি জানান, গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে ইব্রাহিমের সঙ্গে ফেসবুকেই তার যোগাযোগ হয়েছিল। তবে ইব্রাহিম উগ্রপন্থীদের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন- এমন কোনো আভাস সে সময় তিনি পাননি।
‘রিয়াদের বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল থেকে এ লেভেল শেষ করেছি আমি। ইব্রাহিম ছিল আমার এক বছরের সিনিয়র। ২০১৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে কয়েকবার ফেসবুকে কথা হয়েছে, বন্ধুদের মধ্যে যেসব বিষয়ে কথা হয়- সে রকম। ধর্ম নিয়ে কখনো ওর সঙ্গে কথা হয়নি।’

ফারহান জানান, ২০১৩ সালে ইব্রাহিম সৌদি আরব থেকে যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন বলে তিনি শুনেছিলেন। আর ২০১৫ সালে যখন যোগাযোগ হয়, ইব্রাহিম তখন বাংলাদেশে। ইব্রাহিম পড়াশোনা শেষ করেছিলেন কি না সে তথ্য তিনি দিতে পারেননি। ‘এটুকু বলতে পারি, ও আইএসে যোগ দেবে এটা কখনো ভাবিনি’, বলেন ফারহান ইসলাম।
গত জুলাই মাসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিখোঁজের তালিকায় ইব্রাহিমদের দুই ভাইয়ের নাম আসার পর তাদের বসুন্ধরার বাসায় গেলে ওই ভবনের কেয়ারটেকার আবদুর রহমানের সঙ্গে কথা হয়।

সে সময় তিনি জানান, মনির হোসেনের মেয়ের জামাতা পরিচয়ে এক ব্যক্তি গত এপ্রিলে ফ্ল্যাটের সার্ভিস চার্জ শোধ করেছিলেন। মে ও জুন মাসের টাকা তখনো বকেয়া ছিল। মো. তসলিম নামে এক নিরাপত্তারক্ষী সে সময় বলেছিলেন, ‘ওই ফ্ল্যাটের লোকজন প্রায় এক বছর হবে বাসায় নেই। আগে একজন মহিলা তার ছেলেকে নিয়ে থাকতেন। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে অস্ট্রেলিয়া থাকে বলে শুনেছি। তার ছেলেমেয়েরা বাসায় থাকলে তেমন কারো সঙ্গে মিশত না।’

ইব্রাহিমের ফেসবুকে ঢাকার বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় বন্ধুদের সঙ্গে তোলা তার বেশ কিছু ছবি রয়েছে। ২০১৫ সালের জুনে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারির লনে তোলা কয়েকটি ছবিও রয়েছে এর মধ্যে।
 
ফারহান ইসলাম বলেন, ‘অনেক ছেলেমেয়ে বিদেশে গিয়ে খারাপ কাজে জড়িয়ে পড়ছে। সন্তানরা কোথায় কী করছে সেই বিষয়ে নজর দেয়া উচিত। বাংলাদেশি অনেক ছেলেমেয়ের বাজে আচরণের কারণে অনেক সময় ভালো শিক্ষার্থীদেরও সমস্যা হয়। তার মতে, আইএস ধর্মের নামে সন্ত্রাস চালাচ্ছে; তাদের মতবাদের সঙ্গে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই