‘রেডি ছিলাম, তারা বললো, যেতে হবে না’

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মার্চ ৩, ২০১৯, ০৫:৩৬ পিএম

ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ঘুমিয়ে থাকার কারণে গত ২০ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) তাকে আদালতে হাজির করা যায়নি বলে কারা কর্তৃপক্ষ কাস্টডিতে উল্লেখ করেছিল। এই বিষয়ে রোববার খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার আইনজীবীদের কথা হয়।

রোববার (৩ মার্চ) নাইকো দুর্নীতি মামলার অভিযোগ শুনানিতে খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির করা হয়।

রাজধানীর পুরান ঢাকার সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৯ এর বিচারক শেখ হাফিজুর রহমানের আদালতে এদিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে খালেদা জিয়াকে হাজির করে কারা কর্তৃপক্ষ।

এজলাসে প্রবেশের পর খালেদা জিয়া তার আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলেন। কথা বলার এক পর্যায়ে খালেদা জিয়া মওদুদ আহমদকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ওই দিন (২০ ফেব্রুয়ারি) কী হলো, আপনারা আসেননি?

মওদুদ আহমদ বলেন, ম্যাডাম আপনি তো আসেননি। তখন খালেদা জিয়া বলেন, আমি তো রেডি হয়ে বসেছিলাম, তারা (কারা কর্তৃপক্ষ) আমাকে বললো, আপনাকে যেতে হবে না। এ সময় খালেদা জিয়া তার পাশে থাকা নারী পুলিশদের দেখিয়ে বলেন, এখানে মেয়েরা উপস্থিত আছে, তারাই বলবে।

এরপর বিচারক এজলাসে উঠলে আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়।

এদিন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, প্রাক্তন জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী একেএম মোশাররফ হোসেন ও সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমদের পক্ষে অভিযোগ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

মওদুদ আহমদ খালেদা জিয়াসহ সকল আসামির অব্যাহতি প্রার্থনা করেন।

খালেদা জিয়ার পক্ষে মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার তার চিকিৎসা ও অভিযোগ শুনানি পেছানোর বিষয়ে শুনানি করেন। তিনি বলেন, গত ২০ ফেব্রুয়ারি মামলাটির তারিখ ধার্য ছিল। ওই দিন খালেদা জিয়াকে কেন উপস্থিত করা হয়নি। এ নিয়ে অনেক কথা হয়েছে, হাসি-ঠাট্টাও হয়েছে। আজ খালেদা জিয়া আদালতে এসে আমাদের বলেছেন, ওই দিন (২০ ফেব্রুয়ারি) তিনি রেডি হয়ে বসেছিলেন, কিন্তু তাকে আনা হয়নি।

মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার বলেন, খালেদা জিয়া অসুস্থ। হাইকোর্ট খালেদা জিয়ার চিকিৎসার নির্দেশ দিয়েছেন। খালেদা জিয়া ব্যক্তিগত চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসার বিষয়ে বলেছেন। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) গ্যাটকো মামলায় খালেদা জিয়াকে বকশীবাজারের আদালতে হাজির করা হয়। তাকে গাড়ি থেকে নামানোর সময় তিনি পড়ে যান। ওইদিন দুই নারী পুলিশ না ধরলে তার বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যেত।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়া অসুস্থ। আদালতে দীর্ঘ সময় বসে থাকা, বসে মামলা অবলোকন করা তার সম্ভব হচ্ছে না। তার চিকিৎসার প্রয়োজন। আমরা তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসার আবেদন করছি।

তখন বিচারক বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে বোর্ড গঠন করা হয়েছে। এ সময় মাসুদ তালুকদার বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশের পর সরকার বোর্ড গঠন করে দিয়েছে। তাদের প্রতি আস্থা আনা কঠিন। ব্যক্তিগত চিকিৎসকের কাছে সব কিছু বলতে পারবেন, তাদের কাছে কি সব কিছু বলা সম্ভব। আমরা ব্যক্তিগত প্যানেল দিয়ে তার চিকিৎসকের আবেদন করেছি।

এরপর বিচারক দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজলকে এ বিষয়ে বলতে বলেন। তখন মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, মামলা চলছে। খালেদা জিয়া বাদে সবার পক্ষে অভিযোগ শুনানি শেষ হয়েছে। খালেদা জিয়ার পক্ষে শুরু করলে ভালো হয়। আর চিকিৎসার বিষয়ে তিনি বলেন, আইনে যা আছে তাই দেবেন।

উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে পরবর্তী শুনানির তারিখ আগামী ১৯ মার্চ (মঙ্গলবার) ধার্য করে।   দুপুর ১টা ৫০মিনিটের দিকে খালেদা জিয়াকে পুনরায় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।

এদিকে মামলার শুনানি চলাকালে খালেদা জিয়াকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে অনেক সময় ধরে আলাপ করতে দেখা গেছে।

২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় মামলাটি দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলাটির তদন্তের পর ২০০৮ সালের ৫ মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

অভিযোগপত্রের বৈধতা চ্যলেঞ্জ করে খালেদা জিয়া হাইকোর্টে রিট আবেদন করলে ২০০৮ সালের ৯ জুলাই হাইকোর্ট নিম্ন আদালতের কার্যক্রম স্থগিত করে রুল জারি করে। ২০১৫ সালের ১৮ জুন হাইকোর্ট রুল ডিচার্জ করে স্থাগিতাদেশ প্রত্যাহার করে।

ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনটি গ্যাসক্ষেত্র পরিত্যক্ত দেখিয়ে কানাডার কোম্পানি নাইকোর হাতে ‘তুলে দেওয়ার’ অভিযোগে রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার ক্ষতির অভিযোগে মামলাটি করা হয়।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন