ঢাকা: সাংবাদিক শামছুল ইসলামের বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরী (জিডি) করেছে নেত্রকোনার সাবেক ডিসি বনানী বিশ্বাস। বুধবার (৫ নভেম্বর) রাজধানীর রমনা মডেল থানায় এই সাধারণ ডায়েরী করা হয়।
এর আগে গত ৩০ জুলাই বনানী বিশ্বাসের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে নয়াদিগন্তে সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রাথমিক সত্যতা পেলে সংবাদ প্রকাশের ২৫ দিন পর ২৫ আগস্ট তাকে প্রত্যাহার করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এরপর তার বিরুদ্ধে আসা অভিযোগের আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
সাধারণ ডায়েরীতে তিনি বলেন, ইতিপূর্বে আমি নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক হিসাবে কর্মরত ছিলাম। কিছুদিন পূর্বে জনৈক মোঃ সামছুল ইসলাম নয়া দিগন্ত পত্রিকার সিনিয়র রিপোটার পরিচয় দিয়া আমার সরকারী অফিস বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বাংলাদেশ সচিবালয়, ঢাকায় সাক্ষাৎ করিতে আসেন। উক্ত ব্যক্তির ভিজিটিং কার্ডে ০১৭১৯৩৬৩২৭৭ নাম্বারটি দেওয়া ছিল। পরবর্তীতে গত ইং ৩১ জুলাই ২০২৫ তারিখ আলমগীর হোসেন আমার নামে ও আমার স্বামীর নামে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মহোদয়ের কাছে একটি মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেন। উক্ত অভিযোগে আলমগীর হোসেন এর ০১৭১১৯৪৮৯৭১ নাম্বার টি দেওয়া আছে। উক্ত অভিযোগকারী আলমগীর হোসেন এর ০১৭১১৯৪৮৯৭১ এর মোবাইল নাম্বারটির রেজিস্ট্রেশন পর্যালোচনা করিয়া দেখা যায় যে, নাম্বারটি মোঃ শামছুল ইসলাম এর নামে রেজিস্ট্রিকৃত।
অভেযোগকারী আলমগীর হোসেন আমার এবং আমার স্বামী ডাঃ বিবেকানন্দ দুইজনেরই ব্যক্তিগত আয়কর নথি নিয়া বিভিন্ন দপ্তরে মিথ্যা অভিযোগ করিয়া আমাদের সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করিতেছে। আয়কর নথি একটি গোপনীয় নথি। এটি কোন ব্যক্তি পেতে পারেন না। অভিযোগকারী অজ্ঞাতনামা কিছু ব্যক্তি আমার ও আমার স্বামীর গোপনীয় আয়কর নথি অবৈধভাবে সংগ্রহ করে অভিযোগ দায়ের করেছেন এতে আমি এবং আমার পরিবার নিরাপত্তাহীনতা বোধ করছি।
গত ৩০ জুলাই প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বনানী বিশ্বাস তার স্বামীর পুরনো গাড়ি নিজের নামে স্থানান্তর করে তথ্য গোপনপূর্বক সরকারের গাড়ি ঋণ সুবিধা গ্রহণ করেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের গাড়ি সেবা শাখার দলিল অনুযায়ী, ২০১৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর তিনি সরকারি ঋণে ২০১৫ মডেলের একটি ১৫০০ সিসি টয়োটা কার (নম্বর ঢাকা মেট্রো-গ-২৬-২৩৫৪) কেনেন এবং ৩০ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। এ চুক্তিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন উপসচিব মো: শরীফুল ইসলাম এবং বনানী বিশ্বাস যৌথভাবে স্বাক্ষর করেন।
২০১৯ সালের আয়কর নথি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বনানী বিশ্বাস ওই গাড়িটি তার স্বামী ডা: বিবেকানন্দ কির্তনীয়ার কাছ থেকে ৩১ লাখ টাকায় কিনেছেন বলে উল্লেখ করেছেন। অথচ সেই একই বছরে তার স্বামী দাবি করেন, তিনি গাড়িটি ২৫ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন। এই অসঙ্গতিপূর্ণ তথ্যে প্রমাণ মেলে যে, ঋণ গ্রহণের উদ্দেশ্যে জাল দলিলপত্র তৈরি করা হয়েছে, যা সরকারি কর্মচারী আচরণবিধির চরম লঙ্ঘন।
এ ধরনের জাল তথ্য প্রদানের কারণে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮-এর ধারা ৪ অনুযায়ী গুরুদণ্ড পর্যন্ত আরোপ করা যেতে পারে।
দুর্নীতি, অবৈধ সম্পদ ও সম্পদের উৎস গোপন : বনানী বিশ্বাসের বিরুদ্ধে আরো বিস্তৃত দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। তিনি ময়মনসিংহ জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা থাকাকালে অবৈধ উপায়ে অর্থ ও সম্পদ অর্জন করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে ২০২৫ সালের ২২ এপ্রিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বিষয়টি বিভাগীয় কমিশনারের কাছে তদন্তের জন্য পাঠায়।
তদন্তাধীন অভিযোগে বলা হয়, বনানী বিশ্বাস বিভিন্ন সময়ে গৌরিপুর, ফুলপুর এবং ফুলবাড়ীয়া উপজেলায় এসিল্যান্ড ও ইউএনও পদে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর জেলা পরিষদের সচিব এবং পরে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পদে দায়িত্বে ছিলেন। এই সময়ে তিনি ময়মনসিংহের কাশর অনন্যা প্রজেক্টে ১০ শতাংশ জমির একটি প্লট ১ কোটি ৫০ লাখ টাকায় এবং মুমিনুন্নেছা কলেজ সংলগ্ন একটি ১১ তলা ভবনের ৭ তলায় ১৮০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট ১ কোটি ৭৫ লাখ টাকায় ক্রয় করেন। তা ছাড়া ২০১৯ সালেই তিনি ঢাকার ধানমন্ডি এলাকায় নিউ ঢাকা সিটি প্রকল্পে পাঁচ কাঠার একটি প্লট কেনেন এবং আশুলিয়ার প্রশাসন ক্যাডার কো-অপারেটিভ সোসাইটিতে আরো একটি জমির মালিকানা দাবি করেন।
তার স্বামী ডা: বিবেকানন্দ কির্তনীয়ার নামে ময়মনসিংহের কেসি রোড ও ঢাকার শ্যামলিতে দু’টি ফ্ল্যাট এবং একটি বেসরকারি হাসপাতালের উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ রয়েছে বলেও একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে।
পিএস