দুর্নীতি করলে শাস্তি নয়, বরং পদোন্নতি, অনিয়মেও ‘ওপেন সিক্রেট’

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: নভেম্বর ২৬, ২০২৫, ০৪:১০ পিএম
ফাইল ছবি

সুফল (টেকসই বন ও জীবিকা) প্রকল্পে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী বাগান সৃজন না করেই বরাদ্দের দেড় কোটি টাকার বেশি আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে বন বিভাগের একটি প্রভাবশালী চক্রের বিরুদ্ধে। গত এক বছর ধরে এই অনিয়ম ‘ওপেন সিক্রেট’ থাকলেও এ নিয়ে কোনো দৃশ্যমান তদন্ত হয়নি।

অভিযোগ রয়েছে, এই চক্রের মূল ব্যক্তি সাদেকুর রহমানকে শাস্তির মুখোমুখি না করে বরং সম্প্রতি ডেপুটি রেঞ্জার পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। শুধু পদোন্নতি নয়, তাঁকে কক্সবাজারের ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে।

বন বিভাগের ভেতরে বছরের পর বছর ধরে কিছু কর্মকর্তা অভিযোগ-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আশ্রয়–প্রশ্রয় দিয়ে আসছেন। ফলে বনায়নসহ বিভিন্ন প্রকল্প পরিণত হয়েছে জবাবদিহিহীন লুটপাটের ক্ষেত্র হিসেবে। অর্থ আত্মসাতের এই ঘটনায় অভিযুক্ত হিসেবে উঠে এসেছে ডেপুটি রেঞ্জার সাদেকুর রহমান, উপবন সংরক্ষক (ডিসিএফ) এস এম কায়সার ও সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) জয়নাল আবেদীনের নাম। বরাদ্দের সব অর্থ উত্তোলনের পরই তিনজনকে বদলি করে কাঙ্ক্ষিত পোস্টিং দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে সদ্য যোগ দেওয়া চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সফিকুল ইসলামও দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। তিনি বন সংরক্ষক (সিএফ) মোল্যা রেজাউল করিমের চাপে আত্মসাতে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন বলে জানা গেছে।

তথ্য অনুসারে, ২০২৩–২৪ অর্থবছরে কুমিরা রেঞ্জে ১৮০ হেক্টর বনায়নের পরিকল্পনা ছিল। ব্যয় দেখানো হয়েছে ১ কোটি ৭৯ লাখ ৫০ হাজার ৮৮২ টাকা। নার্সারিতে চারা উত্তোলন ও রক্ষণাবেক্ষণের নামে দেখানো হয় আরও ৫৬ লাখ ১১ হাজার ৮০৬ টাকা। কিন্তু বিধি অনুযায়ী বীজ থেকে চারা তৈরির প্রক্রিয়া, জার্নাল সংরক্ষণ-কিছুই করা হয়নি। রক্ষণাবেক্ষণের নামে আরও ২৩ লাখ ১০ হাজার টাকা খরচ দেখানো হয়।

বিধি অনুযায়ী বাগানে কমপক্ষে ৮০% চারাগাছ জীবিত থাকা বাধ্যতামূলক হলেও কুমিরায় বাস্তবে এ হার ছিল অনেক কম। তবুও শূন্যস্থান পূরণের নামে ২০ লাখ টাকার বেশি দেখিয়ে আত্মসাত করা হয়। পলিব্যাগ, সার, বাঁশের খুঁটি কেনাকাটার খাতেও দেখানো হয় প্রায় ১০ লাখ টাকা।

পরিদর্শন ও মূল্যায়ন ইউনিটের জরিপ অনুযায়ী, গত বছরের ডিসেম্বরের জরিপে ১৭০ হেক্টরে জীবিত চারাগাছ ছিল মাত্র ৬০.২০%। আরেকটি ১০ হেক্টরে হার ছিল মাত্র ৫০.৪০%। জবরদখল হওয়া এলাকায় জবরদখলকারীদের গাছের ফাঁকে ফাঁকে বাগান সৃজন দেখানো হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে।

প্রথম জরিপের পর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল ১৮০ হেক্টরে শতভাগ জীবিত চারা নিশ্চিত করতে। কিন্তু নির্দেশনা অমান্য করে ২০% শূন্যস্থান পূরণ ও রক্ষণাবেক্ষণের নামে অর্ধকোটি টাকার বেশি ভাগ করে নেওয়া হয়-বাস্তবে রোপণ হয়নি।

চলতি বছরের ১৯ আগস্ট পুনঃজরিপে দেখা যায়, ৭০ হেক্টরে জীবিত চারা মাত্র ৩১.৬৫%, আর ১০ হেক্টরে ২১.৬০%। আত্মসাতের ঘটনা ঢাকতে সম্প্রতি কিছু জায়গায় নামমাত্র চারা রোপণ করা হলেও সেগুলো এত ছোট যে শুষ্ক মৌসুমে টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব বলে মন্তব্য করেছে ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা বিভাগ।

এ বিষয়ে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, বাগান সৃজনের সময় তিনি দায়িত্বে ছিলেন না, তবে বাগান নির্দেশনা অনুযায়ী হয়নি। অনিয়ম প্রমাণ হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা বিভাগের বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, জরিপে অনিয়ম ধরা পড়লে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অভিযোগ জানতে অভিযুক্ত ডেপুটি রেঞ্জার সাদেকুর রহমানের মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

এসএইচ