ঢাকা সড়ক পরিবহণ সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও এনা ট্রান্সপোর্টের মালিক খন্দকার এনায়েত উল্লাহর বিরুদ্ধে ১০৭ কোটি টাকার মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি। অভিযোগে বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাবাজি করে তিনি বিপুল সম্পদের মালিক হন।
সিআইডি জানায়, প্রাথমিক অনুসন্ধানে চাঁদাবাজির মাধ্যমে তার ও সহযোগীদের অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পাওয়ার পর মঙ্গলবার রমনা থানায় মামলা করে সংস্থাটির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট। বুধবার দুপুরে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান এসব তথ্য জানান।
সিআইডি কর্মকর্তারা জানান, মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা এনায়েত উল্লাহ আশির দশকে পরিবহণ সেক্টরে যাত্রা শুরু করেন। পার্টনারশিপে একটি পুরোনো বাস কেনা দিয়ে শুরু হলেও কয়েক বছরের মধ্যেই তিনি প্রায় ২০টি বাসের মালিক হয়ে যান। অল্প সময়েই পরিবহণ মালিকদের সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান তৈরি করেন। পরবর্তীতে তিনি বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেন এবং ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হন।
জসীম উদ্দিন বলেন, রাজনৈতিক পরিচয় তাকে আরও প্রভাবশালী করে তোলে। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ২০২৫ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত টানা ১৬ বছর তিনি ঢাকা সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতি ও কেন্দ্রীয় মালিক সমিতির শীর্ষ পদে থাকেন। এই সময়ে পুরো পরিবহণ সেক্টরে একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন। বিভিন্ন সময়ে হরতাল–অবরোধে পরিবহণ চালুর ঘোষণা দিলেও নিজের কোম্পানির বাস রাস্তায় না নামানো ছিল তার কৌশলের অংশ।
সিআইডি জানায়, চাঁদাবাজির সিন্ডিকেটটি ছিল সংগঠিত ও ভয়ভীতি–ভিত্তিক। বাস মালিকদের কাছ থেকে দৈনিক এবং মাসিক চাঁদা নেওয়া হতো। নতুন বাস রুটে নামাতে ২ থেকে ৫ লাখ টাকা দিতে হতো। নতুন বাস কেনার সময় মালিকদের কাছ থেকে একটি অংশ দাবি করা হতো, না দিলে বাসটি রাস্তায় চলতে পারত না। ফলে অনেক মালিক অতিরিক্ত অর্থ পরিশোধে বাধ্য হতেন।
সিআইডির ভাষ্যমতে, ঢাকার সব বাস টার্মিনাল তার নিয়ন্ত্রণে ছিল। রাজধানীর পাশাপাশি সারা দেশের বাস, মিনিবাস, ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতিগুলো থেকেও ভয় দেখিয়ে চাঁদা আদায় করা হতো। সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী ব্যবহার করে তিনি পরিবহণ সেক্টরে ত্রাসের পরিবেশ সৃষ্টি করেন।
বিএফআইইউ, বিভিন্ন ব্যাংক, ভূমি অফিস, সাব–রেজিস্ট্রি অফিসসহ বিভিন্ন উৎস থেকে পাওয়া নথি বিশ্লেষণ করে সিআইডি জানায়-ধানমন্ডিতে দুটি ফ্ল্যাট ও রূপগঞ্জে দুটি প্লট আদালতের নির্দেশে ক্রোক করা হয়েছে, যার মূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা। একই নির্দেশে তাদের নামে থাকা ৫৩টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করা হয়েছে, যার মোট স্থিতি প্রায় ১১০ কোটি টাকা।
এ ছাড়া এনায়েত উল্লাহ ও তার পরিবারের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ১৯৯টি ব্যাংক হিসাবে জমা পড়েছে প্রায় ২ হাজার ১৩১ কোটি টাকা, যার মধ্যে উত্তোলন হয়েছে ২ হাজার ৭ কোটি টাকা। বিভিন্ন হিসাব ঘুরিয়ে–ফিরিয়ে ‘স্মার্ট লেয়ারিং’ কৌশল ব্যবহার করে ১০৭ কোটি টাকার বেশি অর্থ মানিলন্ডারিং করা হয়েছে বলে সিআইডির অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।
প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার পর এনায়েত উল্লাহসহ তার পাঁচ সহযোগীর বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা করেছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।
এসএইচ