স্টেট ডিফেন্স পাননি শেখ হাসিনা, জানা গেল রহস্য

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১, ২০২৫, ০৪:৩৮ পিএম
ফাইল ছবি

রাজধানীর পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্লট বরাদ্দে জালিয়াতির অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুদকের মামলায় স্টেট ডিফেন্স না পাওয়া নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। আদালতেই এই রহস্যের ব্যাখ্যা দিয়েছেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারক রবিউল আলম। তার ব্যাখ্যা শুধু মামলার আইনি কাঠামোই স্পষ্ট করেনি, বরং এ ঘটনাকে ঘিরে আইনি প্রক্রিয়া, রাজনৈতিক প্রভাব এবং জনমতের প্রত্যাশা-সবই নতুন করে সামনে এসেছে।

রায় ঘোষণার সময় বিচারক রবিউল আলম জানান, ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী শুধু মৃত্যুদণ্ডযোগ্য মামলাতেই রাষ্ট্র থেকে আসামিকে আইনজীবী প্রদান করা হয়। কিন্তু এই মামলার প্রধান ধারা দণ্ডবিধির ৪০৯-যেখানে সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। সেই কারণে শেখ হাসিনা বা এই মামলার অন্য কেউ রাষ্ট্রীয় আইনজীবী পাননি।

বিচারকের ভাষায়, আসামিরা চাইলে আদালতে এসে আত্মসমর্পণ করে নিজেদের পক্ষে আইনি লড়াইয়ের সুযোগ নিতে পারতেন।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শেখ হাসিনা পরিবারকে ঘিরে দুর্নীতির একের পর এক অভিযোগ সামনে এসেছে। এর মধ্যে পূর্বাচলের প্লট বরাদ্দের এ মামলাটি সবচেয়ে আলোচিত। টিউলিপ সিদ্দিক তার এমপি পরিচয় ব্যবহার করে পরিবারের সদস্যদের জন্য প্লট সংগ্রহ করেছিলেন—দুদকের এমন অভিযোগ মামলাটিকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও আলোচনায় তুলে এনেছে।

এই মামলায় শেখ হাসিনার স্টেট ডিফেন্স না পাওয়া নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রশ্ন উঠলেও আইনি ব্যাখ্যা স্পষ্ট-যেখানে মৃত্যুদণ্ডের আশঙ্কা নেই, সেখানে রাষ্ট্রীয় প্রতিরক্ষা পাওয়ার বিধানও নেই।

মামলায় শেখ হাসিনাকে পাঁচ বছর, তার বোন শেখ রেহানাকে সাত বছর এবং রেহানার মেয়ে টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিককে দুই বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। তিনজনকে এক লাখ টাকা করে জরিমানাও করা হয়েছে।

রায়ে আরও বলা হয়েছে, প্লট বরাদ্দের জালিয়াতিতে পরিবারের কয়েকজন সদস্য সরাসরি প্রভাব খাটিয়েছেন। এই রায় শেখ হাসিনা পরিবারের ওপর রাজনৈতিক ও সামাজিক চাপ আরও বাড়াবে বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।

দুদকের তদন্ত শুরু হওয়ার পর টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তরাজ্য সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনীতিবিষয়ক মিনিস্টারের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। বাংলাদেশে তার বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার পর ব্রিটিশ গণমাধ্যমেও ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, পরিবারকে ঘিরে আইনি অভিযোগগুলো আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে।

আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, আদালতের সিদ্ধান্ত দেখিয়েছে-আইনে যা আছে, তা-ই প্রয়োগ হয়েছে। তবে এ ঘটনাটি রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত সংবেদনশীল, এবং বিচারিক প্রক্রিয়ার প্রতি জনবিশ্বাস বজায় রাখার জন্য স্বচ্ছতা নিশ্চিত করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।

স্টেট ডিফেন্স না পাওয়ার বিষয়টি যতটা রহস্যময় মনে হচ্ছিল, আদালতের ব্যাখ্যায় তা ততটাই আইনি নিয়মের অংশ বলে স্পষ্ট হয়েছে। তবে রায়ের রাজনৈতিক অভিঘাত, শেখ হাসিনা পরিবারের ভবিষ্যৎ আইনি লড়াই এবং আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া-সব মিলিয়ে মামলাটি এখনো জনমতের কেন্দ্রে অবস্থান করছে।

এসএইচ