যার নামে এলাকা কাঁপে তিনিই হয়ে গেলেন ছাত্রলীগের ‘বড় নেতা’

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২০, ১২:৩৪ পিএম

ঢাকা: পারভেজ হোসেন বিপ্লব। এলাকায় চাউর আছে ‘ছেলেটা ভয়ংকর’। নামটি শুনলেই রাজধানীর কামরাঙ্গীর চরের মানুষ ভয়ে কুঁকড়ে যায়। পান থেকে চুন খসলেই হলো! বিপ্লবের নেতৃত্বে নির্মম হামলা তার জন্য অনিবার্য, যাঁর নামে এলাকা কাঁপে তিনিই গত বুধবার হয়ে গেলেন ‘বড় নেতা’। ভয়ংকর সন্ত্রাসী পারভেজ হোসেন বিপ্লবই বাগিয়ে নিলেন কামরাঙ্গীর চর থানা ছাত্রলীগের সভাপতি পদ। অভিযোগ রয়েছে, সভাপতি পদটি কবজায় নিতে তাঁকে মোটা অঙ্কের টাকা খরচা করতে হয়েছে।

বিপ্লব শুধু সন্ত্রাসে পটু নন, মাদক কারবারেও রয়েছে তাঁর সমান দক্ষতা। এ ক্ষেত্রে ইয়াবা কারবার তাঁর পছন্দের শীর্ষে। ইয়াবা  সেবনেও নিজে সবাইকে ছাড়িয়ে যান। বিবাহিত কিংবা অছাত্র ছাত্রলীগ নেতা হওয়ার সুযোগ নেই। তাঁকে সভাপতি করার ক্ষেত্রে সংগঠনের আইনও ভাঙা হয়েছে। ২০১৮ সালের ১৭ আগস্ট জমকালো আয়োজনে বিয়ের সানাই বাজিয়ে রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকার ভগরপুর লেনের বাবুল মিয়ার একমাত্র মেয়ের সঙ্গে সংসার পেতেছেন তিনি।

গত বুধবার মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান ও সাধারণ সম্পাদক যোবায়ের আহমেদের সই করা এক চিঠিতে এক বছরের জন্য পারভেজ হোসেন বিপ্লবকে সভাপতি ও এম এইচ মাসুদ মিন্টুকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই কমিটি ঘোষণার পরপরই কামরাঙ্গীর চরের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।

কামরাঙ্গীর চরের নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন, যুবলীগ-ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগ নেই, দলবল নিয়ে বিপ্লবের ভয়ংকর হামলায় এ পর্যন্ত শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তাঁর নির্মমতায় অনেকেই পঙ্গুত্ববরণ করে কষ্টে জীবন পার করছেন। তারা আরো অভিযোগ করেন, মোটা অঙ্কের টাকা খেয়ে একজন ভয়ংকর ক্যাডার, মাদকাসক্ত, বিবাহিত ও অছাত্রকে থানা সভাপতির পদ দেওয়া হয়েছে। 

সংগঠনের আইন না মেনে ছাত্রলীগের ত্যাগী নেতাকর্মীদের বঞ্চিত করে শুধু টাকার লোভে বিপ্লবকে এই পদ উপহার দেওয়া হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ‘বিবাহিত ও মাদকাসক্ত এমন ভয়ংকর ছেলেটিকে বানানো হলো সভাপতি। তাহলে ভালো এবং মেধাবী ছেলেরা কিভাবে ছাত্ররাজনীতি করবে। কে চাইবে ওর মতো এক মাদকাসক্ত ছেলের অধীনে রাজনীতি করতে।’ 

স্থানীয় অনেক নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বললে উঠে এসেছে পারভেজ হোসেন বিপ্লবের হামলা ও নির্যাতনের অনেক কাহিনি। বিপ্লবের হাতে একাধিকবার হামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইদুর রহমান রতন। বিপ্লব তাঁর ক্যাডার বাহিনী নিয়ে বেশ কয়েকবার তাঁর বাড়িতে হামলা করেন। এ ছাড়া দলীয় কার্যালয় পুড়িয়ে দেয় বিপ্লব ও তাঁর বাহিনী। থানা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মোরসালীনকে গত বছরের রমজানে মসজিদে নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতন করে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়। 

একইভাবে থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আনোয়ার হোসেনকে কামরাঙ্গীর চর থানার ভেতরে পুলিশের সামনেই নির্মমভাবে পিটিয়ে আহত করেন বিপ্লব। ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বাবু দেওয়ানের বাড়িতে হামলা করে দুটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়। একইভাবে কামরাঙ্গীর চর থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসান আকন্দের বাড়িতেও হামলা করে ঘরবাড়ি ভাঙচুরসহ মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়।

এ ব্যাপারে থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইদুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বিতর্কিত বিপ্লবকে থানার সভাপতি করায় আমরা বিস্মিত। যতটুকু জানি মহানগরের সভাপতি মেহেদী হাসান ১০ লাখ টাকা খেয়ে একজন বিবাহিত ও মাদক সেবনকারীকে এই পদ দিয়েছে।’

কামরাঙ্গীর চর থানা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন শাহীন বলেন, ‘শুদ্ধি অভিযানের মধ্যে আমরা সব কিছুই শুদ্ধ চাই। কিন্তু মাদক সেবনকারী এবং বিবাহিত একজনকে সভাপতি করায় আমরা ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত।’

এ ব্যাপারে মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক যোবায়ের আহমেদ বলেন, ‘সাধারণ সম্পাদক মিন্টুকে সাধারণ সম্পাদক করার বিষয়ে আমার ভূমিকা ছিল; কিন্তু বিপ্লবের বিষয়ে সভাপতি মেহেদী হাসান পীড়াপীড়ি করেছেন। ওপরের থেকে চাপ ছিল। এখন আমরা কী করব, ভাই।’

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান বলেন, ‘কামরাঙ্গীর চরে সভাপতি-সম্পাদকের জন্য তিনজন প্রার্থী ছিল, তিনজনই বিবাহিত বলে একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিল। সাজানো ছবি দিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছিল। বিবাহিত হওয়ার কোনো প্রমাণ আমরা পাইনি। এই তিনজনের বাইরে কেউ প্রার্থী ছিল না বলেই এদের থেকে দুজনকে বানিয়েছি।’সূত্র: কালের কণ্ঠ

সোনালীনিউজ/টিআই