সম্রাট-খালেদের ‘সাম্রাজ্যে’ ফের শীর্ষ সন্ত্রাসী মানিক

  • নিউজ ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২০, ০৯:৩৮ এএম

ঢাকা : মতিঝিল, পল্টন, খিলগাঁও, সবুজবাগ, শাহজাহানপুর ও রামপুরাসহ আশপাশের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় এক সময় একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল শীর্ষ সন্ত্রাসী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিকের। ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের দুর্ধর্ষ এ সন্ত্রাসী ভারতে গা ঢাকা দিয়ে সেখানে বসেই নিয়ন্ত্রণ করতেন সব। 

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তার সেই সাম্রাজ্য দখলে নেন তারই সেকেন্ড ইন কমান্ড যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। তাকে সহযোগিতা ও সমর্থন দেন আরেক যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট। ক্যাসিনোকাণ্ডে এ দুই নেতার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। যুবলীগ থেকেও তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে। তারা কারাগারে বন্দি, চলছে বিচার। এ সুযোগে ফের হারানো সাম্রাজ্য নিজের দখলে নিয়ে নিয়েছেন ফ্রিডম মানিক।

অভিযোগ রয়েছে, ফ্রিডম মানিকের ফের আধিপত্য বিস্তারের ক্ষেত্রে প্রশাসনের এক কর্মকর্তাও যুক্ত। 

এ ছাড়া মতিঝিল-খিলগাঁও ও শাহজাহানপুরসহ আশপাশের এলাকার অপরাধজগতের নেতৃত্ব বদলের বিষয়টি প্রশাসন জানলেও এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার মো. ওয়ালিদ হোসেন  বলেন, যারা টেন্ডারবাজি বা চাঁদাবাজির শিকার হচ্ছেন, তাদের অনুরোধ করব

পুলিশের সহায়তা নিতে। ঢাকা মহানগর পুলিশ সব সময় এ ব্যাপারে প্রস্তুত রয়েছে। একটি সূত্র জানিয়েছে, মানিকের কর্মকাণ্ড ও দৌরাত্ম্য নিয়ে সম্প্রতি পুলিশ মহাপরিদর্শকের (আইজি) কাছে একটি অভিযোগ পাঠানো হয়েছে। এতে মানিকের হয়ে যারা সব অপরাধ কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন তাদের তালিকাও দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে তদন্ত শুরু হয়েছে।
 
১৯৮৯ সালের ১৩ আগস্ট ফ্রিডম পার্টির সদস্য কাজল ও কবিরের নেতৃত্বে ১০-১২ জনের একটি দল ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বর সড়কের বাসভবনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ ও বোমা নিক্ষেপ করে। ওই মামলায় মানিকের সাজা হয়। জোট সরকারের আমলে পুরস্কার ঘোষিত ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীদের একজন তিনি।

পুলিশের কাছে অভিযোগে বলা হয়েছে, গত কোরবানির ঈদে শাহজাহানপুরে গরু-ছাগলের হাট থেকে থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল লতিফ, কামরুজ্জামান বাবুল ও ১১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকিরের মাধ্যমে প্রায় এক কোটি টাকা ফ্রিডম মানিকের কাছে পৌঁছানো হয়। 

এ ছাড়া সরকারি বিভিন্ন দপ্তরসহ বিভিন্ন জায়গায় সম্রাট ও খালেদ যেখানে চাঁদা নিতেন সেখান থেকে এখন মানিকের লোকজন চাঁদা আদায় করে। ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মনজুর হোসেন কয়েকটি জায়গায় মানিকের হয়ে টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ছাত্র রাজনীতির শুরুতে মনজুর হোসেন ছাত্রদলের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। পরে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে আসেন।

সম্প্রতি খিলগাঁও কাঁচাবাজার ও শাহজাহানপুরে গিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মানিক তার ফ্রিডম পার্টির সহযোগীদের মাধ্যমে পুরো এলাকায় ত্রাস ছড়িয়ে দিয়েছেন। তাদের মধ্যে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাও জড়িত। তারা মানিকের ‘ঘনিষ্ঠজন’ বলে পরিচিত।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানিয়েছে, শাহজাহানপুরের ডিশ লাইন ব্যবসা; খিলগাঁওয়ের কাঁচাবাজার, মাছের বাজার, ফুটপাত, ফার্নিচারের মার্কেট; খিলগাঁও ও শাহজাহানপুরের টেম্পোস্ট্যান্ড, মতিঝিলের বাসস্ট্যান্ড থেকে এবং এসব অঞ্চলের মাদককারবারিদের কাছ থেকে প্রতিদিন অন্তত ১০ লাখ টাকা চাঁদা তোলা হয় মানিকের জন্য। খিলগাঁও ও শাহজাহানপুরের প্রায় ৮৪৫টি দোকান থেকে প্রতিদিন আরও প্রায় দুই লাখ টাকা চাঁদা আসে তার জন্য।

মানিকের বিরুদ্ধে তিলপাপাড়ার পিচ্চি হত্যা, শাহজাহানপুরে তমাল হত্যা, খিলগাঁও সি ব্লকের শরিফ হত্যা, ব্যবসয়ী মমতাজুর রহমান সোহেল, পলাশ ও এজাজ হত্যা, শান্তিবাগের মাসুদ হত্যা, ডিশ ব্যবসায়ী বিল্লাহ হত্যা ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা কাউসার আলী হত্যা মামলাসহ ডজনখানেক মামলা রয়েছে।

জানা গেছে, বর্তমানে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ, কমলাপুর আইসিডিসহ মতিঝিল এলাকার সরকারি দপ্তরের টেন্ডারও নিয়ন্ত্রণ করছেন মানিকের সহযোগীরা। প্রতিটি টেন্ডার থেকে ‘সমঝোতা’র অজুহাতে আদায় করা হয় মোটা অঙ্কের টাকা। এ ছাড়া তাদের নিজস্ব ঠিকাদারও রয়েছে যারা তাদের পছন্দের টেন্ডার বাগিয়ে নিচ্ছে।

এ বিষয়ে রাজউকের এক কর্মকর্তা নিজ পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বলেন, মানিকের সহযোগীরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এসে ভয় দেখায়। প্রতিটি কাজের জন্যই তাদের অনেক টাকা নজরানা দিতে হয়।

মানিকের সহযোগী যারা : মানিকের সহযোগীদের মধ্যে বাবুল, লতিফ ও জাকির সক্রিয়ভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত। ক্ষমতাসীন দলটিতে কিংবা এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনে তাদের পদ পদবিও রয়েছে। এর বাইরে মানিকের সেকেন্ড ইন কমান্ড মাসুম ওরফে কিলার মাসুম (ডিশ ব্যবসায়ী বিল্লাহ ও এজাজ হত্যার আসামি), বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের থানা সভাপতি সামিউল হক রিন্টু ওরফে ফ্রিডম রিন্টু, শাহজালাল সাজু ওরফে ফ্রিডম সাজু, সৈয়দ রেজাউল করিম বাবু ওরফে ফ্রিডম বাবু ওরফে বাইল্লা বাবু ও খিলগাঁওয়ের ফ্রিডম সোহরাব, সন্ত্রাসী স্বপন, মাদক ব্যবসায়ী অয়ন, ক্যাডার অবিন, মারুফ, টিটু, ইয়াছিন, সন্ত্রাসী মুরাদ ওরফে কাইল্লা মুরাদসহ একটি সংঘবদ্ধ গ্রুপ মানিকের হয়ে কাজ করে।

এ ছাড়া কামরুজ্জামান বাবুলকে সবাই চেনেন ফ্রিডম মানিকের রাজনৈতিক বড় ভাই হিসেবে। তিনিই মানিকের হয়ে সবকিছু সমন্বয় করেন বলে জানা গেছে। জাকির হোসেন নামের এক সহযোগী হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠায়। মানিকের হয়ে গরু-ছাগলের হাট, খিলগাঁও বাজারসহ আশপাশের এলাকায় চাঁদা তোলেন আবদুল লতিফ। তার ছেলে মাদকাসক্ত আশরাফ ও টিটুও এ বাহিনীর সক্রিয় সদস্য। মানিকের বিশ্বস্ত বাইল্লা বাবু তার হয়ে পরিবহনের চাঁদা তোলেন। শাহজালাল সাজু মাদককারবারি। এ কারবার থেকে আসা টাকার একটি অংশ মানিককে পাঠান তিনি। মানিকের হয়ে তিলপাপাড়া নিয়ন্ত্রণ করেন কাইল্যা স্বপন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জাকির হোসেন বলেন, আমি জীবনে কোনোদিন কোনো টেন্ডারে অংশ নেইনি। আর এসব আন্ডারওয়ার্ল্ডের সঙ্গে সম্পর্ক তো দূরের কথা। রাজনীতি করার কারণে একটি পক্ষ এসব অপপ্রচারে লিপ্ত। সূত্র : আমাদের সময়

সোনালীনিউজ/এএস