৮ টিভ্যাস প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত

ব্যালেন্স থেকে টাকা কেটে নেওয়ার অভিযোগ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: এপ্রিল ১৩, ২০২১, ০৪:৪৮ পিএম

ঢাকা : গ্রাহকের অজান্তে মোবাইল ফোনের ব্যালেন্স থেকে টাকা কেটে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ৮টি টিভ্যাস (টেলিকম ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস) অপারেটরের বিরুদ্ধে। মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোর যোগসাজশে কেটে নেওয়া হচ্ছে এসব অর্থ। এ রকম অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার পর ৮টি টিভ্যাস অপারেটরের বিরুদ্ধে অধিকতর তদন্ত শুরু করেছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা-বিটিআরসি।

এ জন্য গঠন করা হয়েছে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি। অভিযুক্ত ৮টি টিভ্যাস অপারেটর হলো-এসএসডি টেক, পার্পল ডিজিট কমিউনিকেশনস লিমিটেড, দ্য অভি কথাচিত্র লিমিটেড, জয়কলস বাংলাদেশ লিমিটেড, ফোর-ডিএল বাংলাদেশ লিমিটেড, গ্যাক মিডিয়া লিমিটেড, আজরা টেকনোলজিস লিমিটেড ও বিটুএম টেকনোলজিস লিমিটেড।

অভিযোগ প্রসঙ্গে জয়কলস বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আরিফ আহমেদ আদিত্য বলেন, ‘আমরা শতভাগ কমপ্লায়েন্স। আমাদের কোনো ধরনের নন কমপ্লায়েন্স ইস্যু নেই। আমাদের কাছে বিটিআরসি যা যা ইনফরমেশন জানতে চেয়েছে আমরা সবকিছু কমপ্লাই করেছি।’ গ্যাক মিডিয়া লিমিটেডের এমডি সাবিরুল হক বলেন, ‘বিটিআরসি বিষয়টি তদন্ত করছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাবে না।’

এর আগে গত বছর বিটিআরসি পার্পল ডিজিট কমিউনিকেশন লিমিটেড ও অভি কথাচিত্র লিমিটেড নামের দুটি প্রতিষ্ঠানের ছয় মাসের কার্যক্রম পর্যালোচনা করে। এর মধ্যে পার্পল ডিজিট লিমিটেড গত বছরের এপ্রিল মাসে ইকরা নামের একটি সেবার মাধ্যমে ৩০ লাখ টাকা আয় করেছে। তাদের গ্রাহকসংখ্যা ৭৬ হাজার ৮৬০।

অন্যদিকে অভি কথাচিত্র লিমিটেডের গ্রাহক সংখ্যা ৩ লাখ ৫৮ হাজার ৭২২। প্রতিষ্ঠানটি ‘ঢালিউড২৪ নিউজ অ্যালার্ট’ ও ‘ঝালমুড়ি ওয়েব পোর্টাল’ নামক টিভ্যাস সেবা দেয়। তারা অভি কথাচিত্র ঢালিউড২৪ নিউজ অ্যালার্ট সেবাটির মাধ্যমে গত বছরের আগস্ট মাসে ৪৩ লাখ টাকা আয় করে। এর মধ্যে ২৬ লাখ টাকার ভাগ পায় মোবাইলফোন অপারেটরগুলো।

বিটিআরসির ভাইস-চেয়ারম্যান সুব্রত রায় তদন্ত প্রসঙ্গে বলেন, ‘যে সব টিভ্যাস প্রতিষ্ঠান এবং মোবাইল ফোন অপাটরেটরদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে তাদের বিষয়ে তদন্ত করে শিগগিরই প্রতিবেদন দেবে বিটিআরসি গঠিত তদন্ত কমিটি। এর আগে এ বিষয়ে কিছু বলা যাবে না।’

বিটিআরসির তদন্তে উঠে আসে স্বল্প শিক্ষিত এবং ফিচার ফোন ব্যবহার করেন এমন গ্রাহকদের টার্গেট করে থাকে টিভ্যাস প্রতিষ্ঠানগুলো। আবার এ ধরনের গ্রাহকদের তথ্য কনটেন্ট প্রোভাইডার বা ডিজিটাল মার্কেটিং কোম্পানিকে সরবরাহ করে মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো।

নাম না প্রকাশের শর্তে বিটিআরসির সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিস বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, যারা ঠিকমতো মোবাইল ফোনের বার্তা বোঝেন না, পড়তে পারেন না, তাদের মূলত টার্গেট করে টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া যেসব নম্বর বন্ধ থাকে, সেসব নম্বরে বিভিন্ন সেবা চালু করে টাকা কেটে নেওয়া হয়। এই নৈরাজ্য বন্ধ করতেই বিটিআরসি তদন্তের উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানা তিনি।

মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো সংশ্লিষ্ট গ্রাহকদের তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে (টিভ্যাস প্রতিষ্ঠান) ওয়েলকাম টিউন, রিং টোন, নিউজ অ্যালার্ট সার্ভিস, খেলার খবর, গান, ধর্মীয় তথ্য ইত্যাদির সেবা দিয়ে থাকে। এগুলোকে বলা হয় টিভ্যাস সেবা। জানা যায়, গ্রাহকদের অজান্তে তার মোবাইল ব্যালেন্স থেকে টাকা কেটে নেওয়ার কাজটি সরাসরি করে তৃতীয় পক্ষের প্রতিষ্ঠান। যদিও মোবাইল অপারেটরগুলোই টাকা কেটে নেয়।

কারণ, বিষয়টির সরাসরি নিয়ন্ত্রণ থাকে অপারেটরগুলোর। মোবাইল অপারেটরগুলো তৃতীয় পক্ষ টিভ্যাস লাইসেন্সপ্রাপ্ত কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ থাকে এ ধরনের সেবা গ্রাহকদের দেওয়ার জন্য। যে পরিমাণ টাকা এসব সেবার বিপরীতে কেটে নেওয়া হয় তার বড় একটা অংশ পায় অপারেটরগুলো। অবশিষ্ট টাকা পায় টিভ্যাস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো।

যদিও কনটেন্ট প্রোভাইডার ও মোবাইল ফোন অপারেটররা একে অন্যের ওপর দায় চাপাচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের মতে টিভ্যাস অপারেটররা গ্রাহকের অজান্তে সার্ভিস ফোর্স অ্যাক্টিভেশনের মাধ্যমে কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

যদিও মোবাইল অপারেটরগুলো চাইলে কোনোভাবেই টাকা কেটে নেওয়া যেত না, ফলে মোবাইল অপারেটরগুলোও দায় এড়াতে পারে না।

এ ছাড়া অধিকাংশ টিভ্যাস প্রোভাইডারের ব্যবসায়িক পরিধি ছোট থাকায় তাদের অপারেটরদের ইচ্ছানুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়।

জানা যায়, সম্প্রতি বিটিআরসি মোবাইল অপারেটরগুলোকে টিভ্যাস সেবা প্রদানে ওটিপি (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) প্রদান বাধ্যতামূলক করার কথা বললেও মোবাইল অপারেটরগুলো এ বিষয়েও নেতিবাচক মনোভাব দেখায়।

টিভ্যাস প্রতিষ্ঠানগুলোকে লাইসেন্স দেয় বিটিআরসি। এর আগে গ্রাহকের অজান্তে টাকা কেটে নেওয়ার অভিযোগের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ মেলায় চারটি টিভ্যাস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের সেবা বন্ধ করে দিয়েছিল বিটিআরসি। বর্তমানে দেশে ১৮৩টি টিভ্যাস প্রতিষ্ঠান সেবা দিচ্ছে। দেশ বর্তমানে ৪টি মোবাইল ফোনের গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই